মুক্তিযুদ্ধ

প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে কালরাতের গণহত্যা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মুহূর্ত। রাতেই পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যার শিকার হয় স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের মানুষ। রাতে ট্যাংক সাঁজোয়া বহর নিয়ে পথে নামে সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট নামে সুপরিকল্পিত কুখ্যাত অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে তারা শুরু করে গণহত্যা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানার ইপিআর ব্যারাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারসহ ঢাকা এবং সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা হত্যাযজ্ঞ চালায়। কালরাতের প্রথম প্রহরে শহীদদের তালিকা আমরা এখনো চূড়ান্ত করতে পারিনি। সংরক্ষণ করা হয়নি গণহত্যার অনেক স্থানও, যা মোটেই কাম্য ছিল না। কেমন ছিল একাত্তরের ভয়াল সেই কালরাত? সে রাতে পাকিস্তানি সেনাদের নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করেছেন এমন কয়েকজন মানুষের মুখোমুখি হই আমরা। তাঁদের চোখে দেখার চেষ্টা করি রক্তাক্ত ২৫ মার্চকে।

গণহত্যার ওয়্যারলেস মেসেজ পাঠাই রাজারবাগ থেকেই

কনস্টেবল মো. শাহজাহান মিয়া। ১৯৭১-এ রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ওয়্যারলেস অপারেটর ছিলেন কনস্টেবল মো. শাহজাহান মিয়া। পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন। ছবি: সালেক খোকন

২৫ মার্চ ১৯৭১। রাত তখন ৮টা ৩০ মিনিট। খবর আসে ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি আর্মিরা যেকোনো সময় ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করবে। খবরটা আসতেই সবাই উত্তেজিত হয়ে ওঠে। আগেই পালিয়ে যায় অবাঙালি পুলিশ সদস্যরা।

থ্রি নট থ্রি রাইফেলসহ ম্যাগাজিন ভর্তি গুলি নিয়ে দু-তিন শ সদস্য পুলিশ লাইনসের ব্যারাক, প্রশাসন ভবনের ছাদ, পুকুরপার, রোডের পাশে এবং মানুষের বাড়ির ছাদে পজিশনে চলে যান। সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় তাঁরা ব্যারিকেড দেন মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর ও চামেলীবাগের ডন স্কুলের সামনে। ওই স্কুলের ছাদেও পজিশন নেন ২০ থেকে ২৫ জন পুলিশ সদস্য। দুটি রাইফেল নিয়ে আমি আর মনির ওয়্যারলেস বেইস স্টেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকি প্রশাসন ভবনের নিচতলায়। ওয়্যারলেস সার্কিটে বসে অপেক্ষায় আছি ওয়্যারলেসে কোনো মেসেজ আসে কি না।

রাত তখন সাড়ে ১০টা। একটা মেসেজ পাই। তেজগাঁও এলাকায় প্যাট্রলে থাকা ওয়্যারলেস অপারেটর আমিরুল মেসেজ দেন।

বলেন, ‘চার্লি সেভেন ফর বেইস, হাউ ডু ইউ হেয়ার মি, ওভার।’

আমি প্রত্যুত্তরে বলি, ‘বেইস ফর চার্লি সেভেন, ইউ আর লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার, সেন্ড ইউর মেসেজ, ওভার।’

তখন তিনি বলেন, ‘চার্লি সেভেন ফর বেইস, অ্যাবাউট থার্টি সেভেন ট্রাকস লোডেড উইথ পাকিস্তানি আর্মি আর প্রসিডিং টুওয়ার্ডস ঢাকা সিটি ফ্রম দ্য ক্যান্টনমেন্ট।’

আমরা নিশ্চিত হই। ওরা আসছে। ছয়-সাত শ লোক ছিল রাজারবাগে। একজন গিয়ে পাগলা ঘণ্টা বাজান। ফলে বাকি পুলিশ সদস্যরাও অস্ত্রাগার ভেঙে অস্ত্র নিয়ে পজিশনে চলে যান।

রাত সাড়ে ১১টা। সর্বপ্রথম পাকিস্তানি আর্মির বহর শান্তিনগর পার হয়ে চামেলীবাগের ব্যারিকেডের সামনে এসে থামে। ব্যারিকেড সরাতে ১০-১২ জন গাড়ি থেকে নামতেই ডন স্কুলের ছাদ থেকে পুলিশ সদস্যরা থ্রি নট থ্রি রাইফেলে গুলি চালান। প্রথম টার্গেটেই পাকিস্তানি সেনাদের দুজন মারা যায়। আহত হয় বেশ কয়েকজন। পাকিস্তানি সেনাদের ওপর ওটাই ছিল প্রথম আক্রমণ, যা শুরু করেছিলেন পুলিশ সদস্যরাই। পাকিস্তানি সেনারা তখন ব্রাশফায়ার শুরু করে। ওদের এলএমজি, এইচএমজি মর্টারগুলোও গর্জে ওঠে।

গোলাগুলির শব্দ পাচ্ছিলাম। হঠাৎ পাশের বিল্ডিংয়ে কামানের একটা গোলা পড়ে। ফলে বিদ্যুৎ চলে যায়। টেলিফোন লাইনও কাটা। নানা চিন্তা ভর করে মনে। কী করা যায়? আক্রান্ত হওয়ার খবরটা সারা দেশের সবাইকে জানাতে পারলে হয়তো অনেকেই আত্মরক্ষা করতে পারবে—এ চিন্তা থেকেই নিজ উদ্যোগে একটা ওয়্যারলেস বার্তা ট্রান্সলেট করে সারা পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানোর প্রস্তুতি নিই।

রাত ১২টা বাজার তখনো তিন-চার মিনিট বাকি আছে। রাজারবাগে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের প্রথম ওয়্যারলেস বার্তায় আমি বলি : ‘Base for all station of East Pakistan police, very very important massage for you, keep note, keep listening, watch. We are already under attacked by Pak army, try to save yourself, over and out.’

পরে আমরা প্রশাসন ভবনের চারতলার ছাদে অবস্থান নিই। সেখানে ছিল আরো ৪০ থেকে ৫০ জন। মূল ভবনের ওপর থেকে প্যারেড গ্রাউন্ডের দিকে পজিশনে থাকি। রাত তখন ৩টা হবে। ট্যাংকের সাহায্যে ওরা রাজারবাগের মেইন দুটি গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকেই টিনের ব্যারাকে আগুন দেয়। বেরোতে না পেরে অনেকেই সেখানে পুড়ে মরেন। ছাদ থেকে আমরা গুলি চালালে ওরা ব্রাশফায়ার করতে থাকে। দেখলাম পুলিশের শত শত লাশ পড়ে আছে। রাত ৪টার পর ৮-১০টি ট্রাক এনে ওরা লাশগুলো তুলে নিয়ে যায়। ফজরের আজানের পর পাকিস্তানি সেনারা ছাদে আসে। ওরা রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে আমাদের বের করে আনে। শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতন। বন্দি ছিলেন দেড় শর মতো। ভেবেছিলাম মেরেই ফেলবে!

একাত্তরে মানবতা পদদলিত হয়েছে রাজারবাগে

কনস্টেবল মো. আবু শামা সামাদ। একাত্তরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে অস্ত্রাগারের দায়িত্বে ছিলেন কনস্টেবল মো. আবু শামা সামাদ। পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ৩ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন, ছবি: সালেক খোকন

রাজারবাগে তখন স্পেশাল আর্মড ফোর্সে ছিলেন সাড়ে পাঁচ শর মতো সদস্য। তাঁরা থাকতেন তৎকালীন চারতলা বিল্ডিংয়ে। নিচতলায় ছিল দুটি অস্ত্রাগার। আড়াই শ থেকে তিন শ সদস্য ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান প্রভেনশিয়াল রিজার্ভ ফোর্সে (ইপিপিআরএফ)। চারটি টিনশেড ব্যারাকে থাকতেন এই ফোর্সের সদস্যরা।  ডিএসবি, এসবি, বিভিন্ন সোর্স ও গোয়েন্দাদের মাধ্যমে আসছিল নানা খবর। পাকিস্তানের আইএসআই গোয়েন্দা সংস্থা রাজারবাগকে সিরিয়াসভাবে টার্গেট করে রেখেছে। কারণ ইস্ট পাকিস্তানের বৃহত্তম পুলিশ লাইনস ছিল রাজারবাগ, যেখানে বাঙালি সদস্য ছিলেন সবচেয়ে বেশি।

রাজারবাগের প্রতিরোধযুদ্ধে কোনো কর্মকর্তা কিন্তু নেতৃত্ব দেননি। সন্ধ্যার ঠিক পরের ঘটনা। তখনো পাকিস্তানের চাঁদতারা পতাকা উড়ছিল। আমরা ‘জয় বাংলা’ ও ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগান তুলে ওই পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দিই।

রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টা। একটা ওয়্যারলেস মেসেজ আসে তেজগাঁও এলাকায় প্যাট্রলে থাকা ওয়্যারলেস অপারেটর আমিরুলের কাছ থেকে। মেসেজে বলা হয়, ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৩৭ ট্রাক সশস্ত্র সেনা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। খবরটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সেন্ট্রিও তখন পাগলা ঘণ্টা পেটায়।

অস্ত্রাগারে গিয়ে দেখলাম তালা মারা। সেন্ট্রি  বলে, ‘হাশেম স্যার (সুবেদার আবুল হাশেম) তালা মাইরা চাবি নিয়া গেছে মফিজ স্যারের বাসায়।’ দৌড়ে গেলাম সেখানে। দেখি একটি ট্রাকের ভেতর মফিজ স্যার পরিবারসহ উঠে গেছেন। তাঁকে থামাই। অস্ত্রাগারের চাবি চাই। চাপের মুখে একটা অস্ত্রাগারের চাবি দেন।

ওই চাবি নিয়ে একটা অস্ত্রাগারের দরজা খুলে দিই। রাইফেল দিয়ে আরেকটা অস্ত্রাগারের তালার মধ্যে গুলি করেন একজন। তবু তালাটা ভাঙে না। এরপর একটা শাবল দিয়ে ওই তালাটা ভেঙে ফেলি। ভেতরের অস্ত্রগুলো তখন যে যার মতো নিয়ে যায়।

প্যারেড গ্রাউন্ডে একটা গ্রুপ, ১ নম্বর ও ২ নম্বর গেট, মূল ভবনের ছাদ ও বিভিন্ন স্থানে পজিশন নিয়ে অপেক্ষায় থাকি আমরা।

রাত আনুমানিক ১১টা। পাকিস্তানি কনভয়ের ওপর শান্তিনগরে ডন স্কুলের ছাদের ওপর থেকে পুলিশ প্রথম গুলি চালায়।

শাহজাহান, আব্দুল হালিম, ওয়্যারলেস অপারেটর মনির, গিয়াসউদ্দিনসহ পজিশনে থাকি মূল ভবনের ছাদে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজারবাগের দিকে ওরা আক্রমণ করে। আমাদের ১০টা গুলির বিপরীতে ওরা জবাব দিয়েছে প্রায় কয়েক হাজার গুলির মাধ্যমে। ওরা ট্যাংক, রকেট লঞ্চার ও হেভি মেশিনগান ব্যবহার করে। অল্প সময়ের ভেতর টিনশেডের ব্যারাকগুলোতে আগুন লেগে যায়। জীবন বাঁচাতে ভেতর থেকে পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পাকিস্তানি সেনারা ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে তাঁদের হত্যা করে।

ফজরের আজান দিচ্ছে তখন। আর্মিরা রাজারবাগের ১ ও ২ নম্বর গেট দুটি ট্যাংকের সাহায্যে ভেঙে ভেতরে ঢোকে। আসে ১০টি খালি ট্রাকও। এক থেকে দেড় শ পুলিশের লাশ পড়ে ছিল। ওগুলো ট্রাকে করে ওরা সরিয়ে ফেলে।

ছাদে উঠে টেনেহিঁচড়ে নামায় আমাদের। বেয়নেট দিয়েও খুঁচিয়েছে, অস্ত্র কেড়ে নিয়ে হাত ওপর দিকে তুলে মারতে মারতে নিচে নামিয়েছে। রাস্তায় ফেলে ক্রলিং করায়। নির্দয়ভাবে পেটায়ও।

দেখলাম একটা ময়লার ড্রেনে পড়ে আছে আমাদের ক্যান্টিন বয়। বয়স চৌদ্দর মতো। আর্মিরা তাকে সেখান থেকে উঠিয়ে পিচঢালা রাস্তায় এনে আছড়ায়। তার মুখ ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। ছেলেটা কাঁপতে কাঁপতে বলছিল, ‘পানি পানি।’ এক পাকিস্তানি আর্মি পাশে নিয়ে প্যান্টের জিপার খুলে তার মুখে প্রস্রাব করে দেয়। ওই মুহূর্তটা খুবই খারাপ লাগছিল। একাত্তরে মানবতা প্রতি মুহূর্তে পদদলিত হয়েছে রাজারবাগে!

গণহত্যার রাতে ফজলুল হক হল

মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন।একাত্তরের ২৫ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছিলেন মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন। পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ছবি: সালেক খোকন

ফজলুল হক হলে আমাদের একটা গ্রুপ ছিল। নাম ‘সূর্য সেন স্কোয়াড’। বন্ধু আনোয়ার হোসেন ছিল এর লিডার। বাইরে থেকে কিছু কেমিক্যাল এনে শদুয়েক মলোটভ ককটেল বানিয়েছিলাম অসহযোগের সময়। তিনটা রাইফেলও জোগাড় হয়ে যায়। প্রতিদিন বিকেলে ইকবাল হলে যেতাম। পরবর্তী নির্দেশনাসহ ব্রিফিং হতো ওখানে। ছাত্রলীগের পক্ষে সাধারণত ওটা করতেন শাজাহান সিরাজ।

২৪ মার্চ ১৯৭১। ইকবাল হলে গিয়ে কাউকেই পেলাম না। ব্রিফিংও হলো না। একজন বলল, ‘আলোচনা সুবিধার হচ্ছে না। সরকার উল্টাপাল্টা কিছু করতে পারে। তোমরা আজই নিরাপদ গন্তব্যে চলে যাও।’

২৫ মার্চ ১৯৭১। সকাল থেকেই ফজলুল হক হল ছাড়তে থাকে ছাত্ররা। শেষে ছিলাম ৪১ জনের মতো। দিন গড়িয়ে রাত আসে। ডাইনিং বন্ধ। তাই রাতের খাবারের জন্য চলে যাই সচিবালয়ের পেছনে, চিটাগাং রেস্টুরেন্টে।

হঠাৎ সাঁজোয়া যানের শব্দ। দেখলাম আর্মির কনভয় যাচ্ছে। অস্ত্র তাক করে চারপাশ দেখছে সেনারা। ওদের চোখে-মুখে হিংস্রতার ছাপ। আমরা দ্রুত হলে ফিরলাম। কিন্তু হলের উত্তর গেটের সামনে আসতেই শুরু হয় কামানের গর্জন। গোলাগুলিরও শব্দ পাই অবিরত। ওই সময়ের অনুভূতিটা ঠিক বোঝানো যাবে না। হাউস টিউটর এসে বললেন, ‘তোমরা নিরাপদ জায়গায় চলে যাও। তবে অবশ্যই হলের বাইরে যেয়ো না।’

তখন হলের ছাদে অবস্থান নিই। সঙ্গে ছিল তিনটা রাইফেল আর কিছু ককটেল। চার বন্ধু হলের চারটা গম্বুজের নিচে পজিশন নিয়ে থাকি। চারপাশ দেখতে ওরা আগে আলোর মতো একটা গুলি ছোড়ে। এর পরই ফায়ার করতে থাকে। রাত ২টার পর দেখি পুরান ঢাকার দিকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। চারপাশে শুধু গুলি, চিৎকার আর মানুষের কান্নার শব্দ। ফজরের আজান পড়েছে তখন। ভাবলাম, এবার হয়তো গোলাগুলি থেমে যাবে। কিন্তু আজানের সময়ও পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিল।

২৬ মার্চ ভোরবেলা। ছাদ থেকে নেমেই একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিই। কিন্তু গেটের সামনে যেতেই দৌড়ে আসে দারোয়ান। জানায়, শহীদুল্লাহ হক হলে অ্যাটাক হয়েছে। ছয়জনের লাশও পড়ে আছে। আর্মিরা এদিকেই আসছে। আমি চলে যাই তিনতলায়, আমার ৩৫২ নম্বর রুমের সামনের বারান্দায়। সেখানে বসে রেলিংয়ের দেয়ালের ফাঁক দিয়ে দেখি সব কিছু।

ওরা এসেই দারোয়ানকে ডাকে। সে বিহারি হলেও বাঙালিদের পক্ষে ছিল। পাকিস্তান আর্মিদের সে বলে, ‘এই হলে ভালো ছাত্ররা থাকে। তারা কেউ আন্দোলন করে না। ছুটির কারণে সবাই বাড়ি চলে গেছে। এখন কেউ নেই, স্যার।’

তার কথায় পাকিস্তানি আর্মিরা প্রথম আশ্বস্ত হয়। কিন্তু হঠাৎ তাদের চোখ পড়ে পতাকার দিকে। প্রথম ওড়ানো বাংলাদেশের পতাকাটি তখনো হলের সামনে পতপত করে উড়ছিল। তা দেখে আর্মিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ‘মাদারচোদ’ বলে গালি দিয়ে দারোয়ানের ওপর চড়াও হয়। এরপর পতাকাটি নামিয়ে বুটের তলায় কিছুক্ষণ মাড়িয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাগে চারদিকে কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুড়ে। একটি গুলি এসে পড়ে আমার ঠিক সামনেই। কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে পাকিস্তানি আর্মিরা তখন অন্যত্র চলে যায়। ফলে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি থেকেই ফিরে আসি আমরা। এরপর কিছু সময় অডিটরিয়ামে এবং পরে চলে যাই কার্জন হলে। ফজলুল হক হলে থাকলে হয়তো বেঁচে থাকতে পারতাম না। কেননা আর্মিরা আবারও এসে গোটা হল সার্চ করেছিল।

২৭ মার্চ, সকালবেলা। চার ঘণ্টার জন্য কারফিউ তুলে নেওয়া হয়। তখন হেঁটে চলে আসি সদরঘাটে। পথে পথে দেখি লাশ আর রক্ত। অনেক বাড়িঘরও ছিল পোড়া। নাজিমউদ্দিন রোডে রিকশায় পড়ে থাকতে দেখেছি কয়েকটি লাশ। সদরঘাটে গিয়ে দেখি লাখো মানুষের ভিড়। জীবন নিয়ে সবাই পালিয়ে যাচ্ছে।

ওরা পাখির মতো মারতে থাকে ঢাকার মানুষকে

সাইদুর রহমান প্যাটেল, ছবি: সালেক খোকন

সাইদুর রহমান প্যাটেল। তাঁর বাড়ি পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ায়। মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর কী করলেন তাঁরা? তাঁর ভাষায়, ‘হাইকমান্ডের নির্দেশে গেণ্ডারিয়া এলাকার সিভিল বন্দুকগুলো সংগ্রহে নামি। ১০১১টা বন্দুক চলে আসে হাতে। খবর ছিল কিছু একটা ঘটবে। তাই তিনটা গ্রুপ করে আগে থেকেই প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিই আমরা। পরে ভারতে গিয়ে প্যাটেল ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনসহ প্রথম দুটি ফুটবল ম্যাচে অংশ নেন। এরপর খেলার মাঠ ছেড়ে চলে আসেন সম্মুখসমরে। অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন নম্বর সেক্টরের কনশতলা, লালমাই, সোয়াগাজী, সূর্যনগর, চৌদ্দগ্রাম, বুচ্চিবাজার, কেকেনগর প্রভৃতি অঞ্চলে।

২৫ মার্চ। মধ্যরাত। পাকিস্তানি সেনারা পাখির মতো মারতে থাকে ঢাকার মানুষকে। আমরা তখন লোহারপুলের ওপর ড্রাম, ভাঙা জিনিস, গাছের ডাল দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করি। পাকিস্তানিদের গাড়ি যেন না আসতে পারে সে জন্য মনিজার রহমান গার্লস হাই স্কুল ও বাবুল লন্ড্রির সামনে তৈরি করি বড় গর্ত। গেণ্ডারিয়া স্টেশনের শ্রমিকদের নিয়ে জুরাইন ও দয়াগঞ্জের রেললাইনের কয়েকটা পাতও উপড়ে ফেলি।

সূত্রাপুর থানার ওসি তখন সিকদার। সেকেন্ড অফিসার সাত্তার খানের মাধ্যমে খবর পাই বাঙালি পুলিশ সদস্যদের আর্মস কেড়ে নিয়ে থানায় বসিয়ে রেখেছেন ওসি। সেনারা তখন সদরঘাটে হত্যা চালিয়ে লালকুঠির আর্মির সাব-ক্যাম্পে বিশ্রাম নিচ্ছে। খুব কাছেই সূত্রাপুর থানা। তবু জীবনের ঝুঁকিকে তুচ্ছ করে আমরা ২৭ জন থানা আক্রমণ করি। সিরু, আজিজ, মঈন, শাহজাহান, মনু, আবুল, বজলু, মঈনসিনা, দুলাল, দুলু, অজয়, আকবর, বিডিআরের এক সিপাই সঙ্গে ছিলেন। অতঃপর থানা থেকে একটি রিভলবারসহ ৩১টি রাইফেল নিয়ে প্রকাশ্যে চলে আসি ধূপখোলা মাঠে। তখন ভোর হয়। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছুড়ে আত্মগোপনে চলে যাই। এর পরই পাকিস্তানি সেনারা রকেট লঞ্চার দিয়ে ব্যারিকেড উড়িয়ে গেণ্ডারিয়ায় ঢুকে অত্যাচার চালাতে থাকে। ২৭ মার্চ ওরা গুলি করে হত্যা করে ১৩ জনকে। এর মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির দুলালও ছিলেন।’

২৯ মার্চ ১৯৭১। ভোরবেলা। বাসার লেপ ও চাদরে অস্ত্রগুলো মুড়িয়ে ঘর ছাড়ি। ঘুণ্টিঘর বস্তির রহিম ভাই কয়েকটা রিকশা দিয়ে সহযোগিতা করেন। আরসিন কম্পানির ঘাট হয়ে চলে যাই নদীর ওপারে। আদম ব্লিডিংয়ে, শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে। ঢাকা জুট মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তখন লালবাহিনীর মান্নান। পরে চলে যাই ভারতে।’

ভাবিনি এত বড় ম্যাসাকার করবে পাকিস্তানিরা!

শেখ আব্দুল মান্নান, ছবি: সালেক খোকন

শেখ আব্দুল মান্নানের বাবা ছিলেন পাকিস্তান আর্মিতে। ১৯৬১ সালে তিনি অবসর নেন মেজর হিসেবে। তখন থেকেই তাঁরা থাকেন ক্যান্টনমেন্টে, কচুক্ষেত এলাকায়। সত্তরের নির্বাচনে আদমজী কলেজ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ভোট দেওয়া নিয়ে মান্নানের সঙ্গে হাতাহাতি হয় এক পাকিস্তানি সেনার। ফলে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর বাবা আন্ডারটেকিং দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন। মান্নান তখন থাকেন ফার্মগেট এলাকায়।

২০ মার্চের পরই খবর আসে আর্মি নামার। ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফার্মগেটে আর্মি মুভ করার তখন একটাই রাস্তা। মান্নানরা কাঁঠালবাগান থেকে করাত সংগ্রহ করে রাখে গাছ কেটে ব্যারিকেড দিতে। আওলাদ হোসেন মার্কেট এলাকা থেকে বাঁশ আর ঠেলাগাড়ি দিয়ে বাধা সৃষ্টিরও পরিকল্পনা হয়।

২৫ মার্চ ১৯৭১। রাত তখন ৮টা। শালিমার হোটেলের সামনে গাছ কেটে ক্যান্টনমেন্টের রাস্তা ব্লক করেন তাঁরা। ফার্মগেট পুলিশ বক্স পর্যন্ত ব্যারিকেড দেওয়া হয় তিনটি। কারওয়ান বাজারেও ব্যারিকেড পড়ে। রাতেই একটি গ্রুপের সঙ্গে মান্নান চলে যান বুড়িগঙ্গার ওপারে। এর কয়েক দিন পরই তিনি অ্যারেস্ট হন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে।

কারফিউ উইথড্র হলে জিনজিরায় আসি। সেখানেই দেখা হয় ধামালকোটের লতিফের সঙ্গে। জড়িয়ে ধরে সে বলে, ‘ক্যান্টনমেন্টের সিভিল এলাকা পুড়িয়ে দিছে ওরা। খোঁজ নেন আপনার মা-বাপ বেঁচে আছেন কি না।’ বুকের ভেতরটা তখন খামচে ধরে। সদরঘাট আসতেই দেখি রাস্তা রক্তে রক্তাক্ত। ফায়ার ব্রিগেডের হোস পাইপে পানি দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করা হচ্ছে। দেখেই মনটা খারাপ হয়। এত বড় ম্যাসাকার করবে পাকিস্তানিরা! আমরা ধারণাও করতে পারিনি।

শাঁখারীপট্টিতে মানুষ পুড়ে চর্বি গলে পড়ে ছিল

কামরুল আমান, ছবি: সালেক খোকন

একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য ‘বিশ্ববিবেক জাগরণ পদযাত্রা অংশ নিয়েছিলেন অন্যতম ডেপুটি লিডার হিসেবে। বাবা চাকরি করতেন ঢাকেশ্বরী কটন মিলে। সেই সুবাদে থাকতেন নারায়ণগঞ্জে। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন তোলারাম কলেজের ছাত্র।

২৫ মার্চ ১৯৭১। রাতের মধ্যেই ঢাকার গণহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। কারফিউ চলছিল। তা শিথিল হতেই কাউকে কিছু না জানিয়েই রওনা হলাম ঢাকার দিকে। ডেমরার ডিএনডি মাটির বাঁধ। ওই পথেই শত শত লোক পালিয়ে আসছে ঢাকা থেকে। সবার মুখে লোক মরার খবর। মাতুয়াইলে এসে দেখি রাস্তার ঢালে পড়ে আছে সাত-আটজনের গলা কাটা লাশ। তাদের কখন মারা হয়েছে কেউ জানে না। দেহ তখনো কই মাছের মতো নড়ছিল। এ যেন জিন্দা লাশ! বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় গিয়ে দেখি একজনের হাতের কবজি বেরিয়ে এসেছে মাটির ওপরে। কার লাশ এটা? কেউ জানে না। খবর পেয়ে ছুটে যাই শাঁখারীপট্টিতে। আহা রে! কী নির্মমভাবে ওরা মানুষ পোড়াইছে। কোর্ট বিল্ডিংয়ের পাশেই শাঁখারীপট্টির প্রবেশমুখ। সেটি বন্ধ করে আগুন দিয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনারা। সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কয়েকটি বাড়িতে তখনো আগুন জ্বলছিল। একটি বাড়িতে পা রাখতেই গা শিউরে ওঠে। মানুষ পুড়ে চর্বি গলে মেঝেতে পড়ে আছে, তাতে পড়েছে আমার পা। এর চেয়ে ভয়াবহ আর মর্মান্তিক দৃশ্য কী হতে পারে!

সোবহানবাগ মসজিদে ফেলে রাখা হয় খোকন ভাইয়ের লাশ

রুহুল আহম্মদ বাবু, ছবি: সালেক খোকন

রুহুল আহম্মদ বাবু। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন নম্বর সেক্টরে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর থেকে ইকবাল হলের (বর্তমানে জহুরুল হক হল) পানির ট্যাংকের মাঠে ট্রেনিংয়ের আয়োজন করেন ছাত্রনেতারা। রুহুল আহম্মদ বাবু সেখানে ডামি রাইফেল দিয়ে ট্রেনিং করেন।

২৫ মার্চ সন্ধ্যায় সিরাজ নামে একজন এসে বলে, ‘বাবু, আজ রাতে আর্মি নামব। যেভাবে পারছ ব্যারিকেড দে।’ কলাবাগান লেকের পাশে বড় একটা গাছ ছিল। এলাকার লোকজন নিয়া আমরা ওই গাছ কেটে রাস্তায় ফেলি। মনে তখন অন্য রকম স্পিরিট। গাছের ব্যারিকেড দিয়াই ট্যাংক থামামু। মনে ছিল শুধু দুর্বার সাহস।

ঢাকা কলেজের উল্টো দিকে চিটাগাং হোটেল। সেখানে বসে বুন্দিয়া আর পরোটা খাচ্ছি। সঙ্গে মাহবুবুর রহমান সেলিম, আইয়ুব খান, আমার ছোট ভাই আর খোকন ভাই। রাত তখন আনুমানিক ১১টা। হঠাৎ গুলির শব্দ। খোকন ভাই উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘ধানমণ্ডিতে কে গোলাগুলি করে? বাবু চল তো, শেখ সাহেবরে পাহারা দিমু।’

আমাদের জিপের সামনে বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ লাগানো। বনেটের ওপর আমি বইসা আছি ওই ডামি রাইফেলটা নিয়া। পথে পাকিস্তানিদের সাঁজোয়া গাড়িগুলো সাইড দেয়। ওরা ভাবছে কোনো আর্মি অফিসারের গাড়ি হবে। আমরা দ্রুত কলাবাগানের বশিরউদ্দিন রোডে যাই। ছায়ানটের অফিস ছিল ওখানে। সেখানেই গাড়িটা রাখি।

বুঝে যাই কিছু একটা ঘটবে। পান্থপথে তখন ধানমণ্ডি লেকেরই একটা ডোবা ছিল। সেটা পার হয়ে ওপারে গিয়ে শেখ সাহেবের বাড়িতে যাব—এমনটাই পরিকল্পনা। রাস্তার পাশে ডোবার আড়ালে লুকিয়ে আমরা। প্রথম খোকন ভাই দৌড়ে রাস্তা পার হন। ওপারে গিয়ে হাতের টর্চটা জ্বালাতেই অজস্র গুলির শব্দ। কী হলো? দেখলাম তিনি মাটিতে পড়েই ছটফট করছেন। একসময় তা নিথর হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। আর্মিদের দুটি জিপ আসে। তার মুখে ওরা লাইট মেরেই বলে—‘শালা মার গিয়া’। তখনই রিয়ালাইজ করলাম—‘হোয়াট দ্য হেল’। আমরা যা করতে যাচ্ছি তা তো ছেলেখেলা নয়।

রাতেই লুকিয়ে বাসায় ফিরলাম। শরীরটা তখনো কাঁপছে। খোকন ভাইয়ের জন্য বুকের ভেতর চাপা কষ্ট। কারফিউ উঠলে আমরা লাশের খোঁজে বের হই। ওরা লাশটা সোবহানবাগ মসজিদের বারান্দায় ফেলে রেখেছিল। হাতটায় তখনো টর্চলাইট ধরা। গুলিতে আরেক হাত উড়ে গেছে। বাড়ি ফিরতেই আম্মা বললেন যুদ্ধে যাও।

 প্রচ্ছদ : মাহবুবুল হক

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক কালের কণ্ঠে স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ সংখ্যায়, প্রকাশকাল: ২৬ মার্চ ২০২৩

© 2023, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button