কলাম

শহীদদের তালিকা ও একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আনার উদ্যোগটি নিয়ে গণমাধ্যম সারাবছরই সরব থাকবে—এমনটাও আমাদের প্রত্যাশা

“পাকিস্তানি আর্মিরা এমনভাবে আসছিল যে সারদা পুলিশ একাডেমির পদ্মা নদীর দিকটাতেই পালানোর একমাত্র পথ মনে করে সবাই। ফলে আশপাশের গ্রামগুলো থেকেও বহু মানুষ আসে। পাশেই ছিল ক্যাডেট কলেজ। সেই দিককার লোকজন আর পুলিশ একাডেমির পুলিশরাও সিভিল ড্রেসে জড়ো হয়। আনুমানিক হাজার দুয়েক মানুষ জড়ো হয় ওই চরে।

বেলা তখন দুইটা বা আড়াইটা হবে। এক ক্যাপ্টেনের কমান্ডে পাকিস্তানি সেনারা পুলিশ একাডেমির ভেতরে ঢুকে। আর্মি দেখে চরের মধ্যে ছোটাছুটি শুরু হয়। প্রথমে সবাইকে একত্রিত করে ওরা। এরপর মহিলা ও ১৩ বছরের নিচের শিশুদের আলাদা করে বলে—‘তোম ঘারমে চ্যালে যাও।’

ফলে লোক কমে তখন থাকে হাজার বা তোরোশর মতো। সিপাহিরা অস্ত্র তাক করে চারদিক ঘিরে ফেলল। ক্যাপ্টেন তখন অস্ত্র লোড করছে। জোয়ান মানুষ যারা তাদের ওরা এক এক করে ডাকতে থাকল। প্রথমে উঠাল পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল সাহেবের গাড়ির ড্রাইভার, শামসু ভাইকে।

বলল—‘তুম জরুর পুলিশ হে।’

‘নেহি স্যার, হাম পুলিশ নেহি হে। বিজনেস করতা হে।’

ওরা তার হাঁটু ও হাতের কনুই চেক করেই নিশ্চিত হয়।

এরপর বলে—‘তুম জুট বলতাহে।’

তখনই ওই ক্যাপ্টেন খুব কাছ থেকে শামসু ভাইয়ের হার্টকে লক্ষ্য করে গুলি করে।

কয়েক হাত ওপরে উঠেই সে মাটিতে পড়ে যায়। মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। দু-এক মিনিট ছটফট করেই তার শরীর নিথর হয়ে যায়। একইভাবে হত্যা করে পুলিশ একাডেমির স্টেনোগ্রাফার কাজী গোলাম মোস্তফাসহ দশ-পনেরজন।

হঠাৎ ওরা আমাকে ডাক দেয়—‘এই বাচ্চু এদার আও, এদার আও।’

নিচের দিকে তাকিয়ে না শোনার ভান করি প্রথমে। পাশ থেকে একজন বলে, জিন্না তোমাকে ডাকতেছে। ধরেই নিয়েছি মেরে ফেলবে।

উর্দু ভালো বুঝতাম, কথাও বলতে পারতাম। ওটাই কাজে লাগাই।

উর্দুতে অনেক কথা বলার পর ক্যাপ্টেন বলে—‘ঠিক হ্যা তোমকো নেহি মারেগা, তুম এদার বেঠো।’

আমার সঙ্গে আরও ছয়-সাতজনকেও বসায়।

…এভাবে ছয় বছর ধরে সিরাজগঞ্জের ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে। পাশাপাশি শহীদ স্মরণে তাদের নিয়েই ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে গণহত্যার স্থানে, যুদ্ধের স্থানে আর শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন করছে তারা।

ওদের ওয়াল্যাসে বার্তা আসছিল। ওপাশ থেকে তাড়া দিচ্ছে। দ্রুত সবাইকে হত্যা করতে তখন ওরা ব্রাশফায়ার করার প্রস্তুতি নেয়। এটা শুরু করে ওই পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন। সিপাহিরা শুধু চারপাশে ঘিরে থাকে। বিশ বা পঁচিশ মিনিট এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এরপর একজন সিপাহির হাতে ওটা দিতেই সেও ফায়ার শুরু করে। মানুষের রক্তে ভেসে যেতে থাকে গোটা চরের মাটি।

চাচাতো ভাই খায়রুল আলম পরাগের কণ্ঠ ওইসময়ই শুনতে পাই। আম্মা বলে একটা চিৎকার দেয় সে। এরপর আর কোনো সাড়া শব্দ নেই! বিশ-পঁচিশ মিনিট পর গোটা চরটাই নীরব হয়ে যায়।

আমাদের ওরা প্যারেড গ্রাউন্ডে নিয়ে আসে। খানিক পরেই সেইখান থেকে দেখা গেল চরে স্তূপ করা লাশের ভেতর থেকে অনেকেই পালাচ্ছে। সবাই রক্তাক্ত। যন্ত্রণায় এদিক-ওদিক ছুটছে।

তখন ওই ক্যাপ্টেন চিৎকার দিয়ে বলে—‘শালা এ লোক তো জিন্দা হে আবতাক। এলেমজি ছোড়ো, এলেমজি ছোড়ো।’ ওরা এলেমজি দিয়ে কুকুরের মতো মানুষগুলো মারে।

তখন আমাদেরও আবার চরে নিয়ে আসে। সেইখানে যেতেই দেখি চাচাকে (আজিজুল আলম)। গুলি লেগে তার ভুঁড়িটা অনেকটাই বের হয়ে এসেছে। যন্ত্রণায় তিনি কাতরাচ্ছেন। জ্ঞান তখনো ছিল। রক্তে চারপাশটা ভরে গেছে। চাচা তখন ওই ক্যাপ্টেনকে চেঁচিয়ে বলেন—‘এয়া কিয়া জুলুম হে ভাই। এয়া কিয়া জুলুম হে। খোদাতালা বরদাস নেহি করেগা।’ পরপর তিনবার কথাগুলো বললেন তিনি।

ওই পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন গর্জে উঠে। ‘শুয়োরকা বাচ্চা’ বলেই চাচার খুব কাছে গিয়ে কপালের মাঝ বরাবর একটা গুলি করে। মাথার খুলিটা উড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু না, তা হলো না। খুলিটা উঠে গিয়ে গোটা মুখটায় ঢেকে গেল। তিনি তখন শুধু একবার উ্হ শব্দটি করলেন। এর পরই উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন।

লাশের স্তূপ থেকে অনেকেই কিছুটা দূরে সরে গিয়ে পড়েছিল। সেই লাশগুলো আমরা একত্র করতে থাকি। দেখেছি, অনেকের শরীরে গুলি একদিক দিয়ে ঢুকে আরেকদিক দিয়ে ভোগলা হয়ে বেরিয়ে গেছে।

ওরা পেট্রোল ভর্তি টিন এনে আমাদের হাতে দিয়ে বলে—‘পেট্রোল লাগাও।’

গায়ে তখন শক্তি নেই। ভালোভাবে পেট্রোল ছিটাতেও পারছি না। পরে ওরাই লাশের স্তূপে পেট্রোল ছিটালো। এরপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বিধবা মায়ের কথা বলে ক্যাপ্টেনের প্রাণ ভিক্ষা চাইলে সে ছেড়ে দেয়। ফলে দৈবক্রমেই বেঁচে যাই।”

রাজশাহীর চারঘাট থানাপাড়ার গণহত্যা নিয়ে এভাবেই নিজের ভাষ্য তুলে ধরেন প্রফেসর ড. জিন্নাতুল আলম জিন্না। ১৩ এপ্রিল ১৯৭১, পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা চালায় থানাপাড়ায়, সারদা পুলিশ একাডেমির ভেতরে। পুলিশ একাডেমির সাথেই ছিল তার বাড়ি। ওই গণহত্যায় নিজের প্রাণে বেঁচে গেলেও শহীদ হয় তার ছোট ভাই শফিকুল আলম পান্না, চাচা আজিজুল আলম, চাচাতো ভাই খায়রুল আলম পরাগ, ছোট ভগ্নিপতি মহসীন আলী।

মনের ভেতর ভয়ের ছাপটা কাটেনি তার। স্বপ্নে পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ এখনো দেখেন। মাঝে মধ্যে শহীদদের আর্তচিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। রক্তাক্ত প্রিয়জনের আর্তনাদে ঘুমাতে পারেন না। ওই ঘটনার পর থেকে সব দেশের আর্মিকেই ঘৃণার চোখে দেখেন তিনি।

একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার বিষয়ে উল্লিখিত উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আনার বিষয়ে বিশেষভাবে কাজ করছেন বিদেশে বসবাসরত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু মানুষ। অথচ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ তেমন নেই।

শহীদদের তালিকা ও শহীদ পরিবারগুলোর স্বীকৃতি দেওয়া প্রসঙ্গে জিন্নাতুল আলম বলেন এভাবে—‘আমার বিধবা বোনের ছেলেমেয়েগুলো মানুষ করেছি। কেউ কোনোদিন এসে একবার জিজ্ঞেসও করেনি কীভাবে চলছে পরিবার? আর্থিক সুবিধার দরকার নেই, রাষ্ট্র তো শহীদ পরিবারগুলোর সম্মানটা অন্তত দিতে পারত। থানাপাড়ায় আনুমানিক ১২শ থেকে ১৩শ মানুষ শহীদ হয়েছে। গোটা গ্রামে এমন কোনো পরিবার পাবেন না যে কেউ শহীদ হয়নি। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনো এদের পূর্ণাঙ্গ কোনো তালিকা হয়নি, করার চেষ্টাও নেই।’

যাদের রক্তে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা, স্বাধীন দেশে সেইসব শহীদদেরই আমরা ভুলে গেছি! এমন কষ্টের অনুভূতি প্রায় প্রতিটি শহীদ পরিবারের হৃদয়ে আজও রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে। রাষ্ট্র কি অনুভব করতে পারে তাদের কষ্টগুলো?

পাশাপাশি একাত্তরে শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাস প্রজন্মের কাছে আমরা কতটা তুলে ধরতে পেরেছি—তা নিয়েও আলোচনার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়ে রাষ্ট্রেরই বিশেষ ভূমিকা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা উচিত। তবে রাষ্ট্র দায়িত্ব পালন করছেন না শুধুমাত্র এই অজুহাতে স্থানীয় উদ্যোগগুলো বন্ধ রাখাটাও সমীচীন নয়।

এক্ষেত্রে সিরাজগঞ্জে গণহত্যা অনুসন্ধান কমিটির উদ্যোগের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেইখানে তারা বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গড়ে তুলেছে কমিটি। প্রতি বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের দিনে দলবেঁধে তারা ফুল হাতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কাছে গিয়ে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে আপনার বা আপনার পরিবারের অবদান অনেক। তাই জাতি আপনার বা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’ তখন ওই মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবার ভীষণ আবেগতাড়িত হয়। তা দেখে নতুন প্রজন্মকে আবেগতাড়িত হতে দেখা যায়। এভাবে ছয় বছর ধরে সিরাজগঞ্জের ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে। পাশাপাশি শহীদ স্মরণে তাদের নিয়েই ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে গণহত্যার স্থানে, যুদ্ধের স্থানে আর শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন করছে তারা। এটিকে সারাদেশেই একটা রীতিতে পরিণত করা যায় খুব সহজে।

একাত্তরে ৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছে। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের এত বছর পরও ১৯৭১ সালে যে সীমাহীন গণহত্যা চালিয়েছে, তার জন্য বিন্দুমাত্র দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা চায়নি পাকিস্তানের কোনো সরকার, বিচার করেনি তৎকালীন একজন জেনারেলেরও। পাশাপাশি মেলেনি গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও।

অতিসম্প্রতি (২০ ফেব্রুয়ারি) নেদারল্যান্ডসের হেগে প্যালেস্টাইন ইস্যুতে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) বাংলাদেশ বিবৃতি প্রদান করে। নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ সেইখানে প্যালেস্টাইন ইস্যুতে দেওয়া বিবৃতিতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যায় ৩০ লাখ মানুষের প্রাণহানির কথা প্রথমবারের মতো উল্লেখ করেন। এটি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে রেকর্ড হওয়ায় বাংলাদেশের গণহত্যায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে ব্যাকগ্রাউন্ড ম্যাটেরিয়াল বা প্রমাণ হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন গবেষকরা।

এর আগে, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি’ শীর্ষক ৮ পৃষ্ঠার একটি প্রস্তাব তোলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে। ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতা রোহিত খান্না এবং রিপাবলিকান আইন প্রণেতা স্টিভ শ্যাবট এই প্রস্তাবটি তোলেন। এতে একাত্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানানো হয়।

প্রস্তাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি বেঁচে থাকা অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান ছাড়াও ১৯৭১ সালে নিহত ও অত্যাচারের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী বাঙালিদের ওপর যে সহিংসতা চালিয়েছে তাকে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতিও আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে।

এছাড়া একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর চালানো পাকিস্তানিদের বর্বরতা গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জেনোসাইড ওয়াচ’। সেইসব অপরাধ ও গণহত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকার করে নিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব পাসের আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।

২০২২ সালের প্রথম দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ‘লেমকিন ইন্সটিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন’ একাত্তরে বাংলাদেশিদের ওপর পাকিস্তানিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এসব উদ্যোগ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি।

তবে একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার বিষয়ে উল্লিখিত উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আনার বিষয়ে বিশেষভাবে কাজ করছেন বিদেশে বসবাসরত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু মানুষ। অথচ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ তেমন নেই। এই বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে দীর্ঘ পরিকল্পনা ও বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। পাশাপাশি একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার অপরাধ প্রমাণের তথ্য-উপাত্ত ও প্রামাণ্য সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা উপস্থাপনের মাধ্যমে বিশ্ব জনমত গড়ার কার্যকরী উদ্যোগও নিতে হবে সরকারকেই।

এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার আন্তরিক নয় এমনটি বলা যাবে না। পাকিস্তানি সেনাদের বর্বর হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয় ২০১৭ সালে, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে। এরপর থেকে এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিরও জোর দাবি ওঠে।

সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হলে একাত্তরে বাংলাদেশের জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায় করা সম্ভব বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য সুষ্ঠু সমন্বয় দরকার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মধ্যে। ১০ মার্চ ২০২৪ তারিখে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ: সিকিং রিকগনিশন অ্যান্ড রিপারেশন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।

তা নিয়ে আমরাও সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ দেখতে চাই। পাশাপাশি একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আনার উদ্যোগটি নিয়ে গণমাধ্যম সারাবছরই সরব থাকবে—এমনটাও আমাদের প্রত্যাশা।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে ঢাকাপোস্ট ডটকমে, প্রকাশকাল: ২৫ মার্চ ২০২৪

© 2024, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button