মুক্তিযুদ্ধ

একাত্তরের বীরত্বের খেতাব ‘বীর প্রতীক’ আশির দশকেও কেন ব্যবহৃত হলো ?

১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক অবদানের জন্য মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলীসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব দেয়া হয়। সরকার একই সময়ে গেজেট আকারে বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম ও বীর বিক্রম খেতাব দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আশির দশক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে বিভিন্ন অপারেশনে সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর ৮২ জনকেও বিভিন্ন সময়ে ‘বীর প্রতীক’ নামে উপাধি দিয়েছে। একইভাবে ৫ জনকে ‘বীর উত্তম’ ও ২০ জনকে ‘বীর বিক্রম’ উপাধিও দেওয়া হয়। এতে একাত্তরের বীরত্ব ও সম্মাননাকে বির্তকিত করা হয়েছে বলে মনে করেন মেজর শওকত আলী (বীর প্রতীক)

২৬ মার্চ, ১৯৭১। সকাল বেলা। রাতেই ঢাকায় শুরু হয়েছে গণহত্যা। খবরটি পেয়ে ঠিক থাকতে পারি না। পাকিস্তান আর্মিদের ঠেকাতে হবে। দৌড়ে চলে যাই চট্টগ্রাম মেডিকেলের হোস্টেলে। বোরহান, সালাউদ্দিন সেখানে হাত বোমা বানাচ্ছিল। হেল্পিংয়ে ছিলাম আমি।

ক্লোজ ফ্রেন্ড শওকত হোসেনকে খুঁজছি। ও ভাল ড্রাইভ করতো। হঠাৎ দেখি একটা জিপ ঢুকছে মেডিকেলে। শওকতই চালাচ্ছে। সঙ্গে খাকি পোশাকে কয়েকজন আর্মিও আছে।

প্রথম ভড়কে গেলাম। গাড়ি থামিয়েই সে শুধু বললো- ‘যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। যাবি?’ রাজি হতেই তুলে নিল জিপে। খাকি পোশাকের ওরা ছিল বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সেনা। শওকতকে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে তারা টহল দিচ্ছিল।

চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সটির জায়গায় তখন ছিল একটি বড় গোডাউনের মতো। এইট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাম্প ছিল সেখানে। সেকেন্ড ইন কমান্ড তখন জিয়াউর রহমান। প্রথমে সিও ছিলেন পাঞ্জাবি, লেফটেনেন্ট কর্নেল জানজুয়া। ওই বেঙ্গলে আরও ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী, ক্যাপ্টেন অলি ও ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান প্রমুখ।

মেজর মীর শওকত আলীর আত্মীয় ছিল বন্ধু শওকত হোসেন। সে সুবাদেই স্টুডেন্ট হিসেবে আমরা জয়েন করি তার কাছে। অতঃপর থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালানো শেখানো হয় ক্যাম্প থেকেই। তা দিয়েই নিয়মিত সেনাদের সঙ্গে কাজ করতাম আমরা। স্বাধীনতার স্বপ্নে এভাবেই যুক্ত হয়েছিলাম এইট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে।

এ খবর পরিবার জানতো না। দুই একদিন কেটে গেল। অতঃপর ক্যাম্প থেকে বাড়িতে আসি আমরা। সঙ্গে ছিলেন নায়েক সুবেদার অলিসহ কয়েকজন।

বড় ভাই তখন স্কটল্যান্ডে। আব্বা চাকুরি করতেন পাকিস্তান রেলওয়েতে। যুদ্ধে যাওয়ার কথা শুনে প্রথম বাধা দেন তিনি। বললেন- ‘দুই তিনদিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার যাওয়ার দরকার নেই।’ কিন্তু আমি তবুও সিদ্ধান্তে অটল থাকি। আব্বা জোর করার চেষ্টা করেন। মা তখন পক্ষে ছিলেন। প্রতিবাদ করে তিনি শুধু বললেন-‘ওকে যেতে দেন। দেশের জন্য আমি ওকে উৎসর্গ করলাম।’ মায়ের কথাগুলো এখনও কানে বাজে। মনোবল তখন দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাই নি।’

এইট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এরপর ডিফেন্স গড়ে নাসিরাবাদ হাউজিং স্টেটে, এক নম্বর রোডে। ডানে পুরো পাহাড়। সামনে ছিল ক্যান্টনমেন্ট। ওরা যাতে এগোতে না পারে সে কারণে পজিশন নিই আমরা। রেলক্রসিং ছিল একটা। ওরা যেন ট্যাঙ্ক নিয়ে সেখানে না ঢুকে, আমরা তাই নিয়মিত পেট্রোলিং করতাম।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, যুদ্ধে যাওয়া ও জিয়ার চিঠি নিয়ে বেগম জিয়াকে আনতে যাওয়ার স্মৃতিচারণ করছেন  মেজর শওকত আলী 

ওই সময় একদিন আমাকে ডেকে পাঠালেন মেজর জিয়াউর রহমান। স্টুডেন্ট হওয়াতে কেউ সন্দেহ করবে না। তাই বেগম জিয়াকে নিয়ে আসার দায়িত্ব দেন আমায়।

জিয়াউর রহমান বলেন- তোমার ভাবী আর তারেককে আনতে হবে।

বললাম- স্যার, একলা যেতে পারব না।

তিনি বলেন- তুমি কাকে কাকে নিবে?

বলি- মিনিমাম ছয়জন লাগবে।

বেগম জিয়া তখন থাকতেন রোড ফোরে, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে। দোতলা ওই বাসাটা এখনও আছে। আমাকে একটা চিঠি লিখে দিলেন জিয়াউর রহমান। তাতে লেখা ছিল- ‘পুতুল, পত্রবাহকের সঙ্গে ছেলেকে নিয়ে চলে আসো।’

ব্রিটিশ স্টেনগান লোড, সিঙ্গেল সট, র‌্যাপিট ফায়ার- এগুলো তখন শিখে গেছি। রিভলবারও চালাতে পারতাম। ওগুলোসহ কিছু গ্রেনেডও সঙ্গে নিলাম। বাজারের ব্যাগের মধ্যে নিই অস্ত্রগুলো। সবার পড়নে লুঙ্গি আর গেঞ্জি। চেনার উপায় নেই।

রোড নম্বর টু পেরিয়ে থ্রি ধরে এগোচ্ছি। ফোরের কাছাকাছি আসতেই থমকে গেলাম। কখন যে পাকিস্তানিদের থার্ড কমান্ডো ব্যাটেলিয়ান ঢুকে গেছে, টেরই পাইনি। দেখলাম দুইজন সেনা পেট্রোলে বেরিয়েছে।

তখন আমরা পরিকল্পনা পাল্টাই। লুকিয়ে পেছন দিক দিয়ে বেগম জিয়ার বাড়িতে ঢুকি। দরজা নক করতেই তিনি নিজেই দরজা খুলেন। দেখে চিৎকার করার আগেই ইশারায় চুপ থাকতে বলি। অতঃপর হাতে তুলে দিই জিয়াউর রহমানে সেই চিঠিটা।

জিয়ার চিঠিটি বেগম জিয়া পড়লেন। অতঃপর যে কথাগুলো বললেন দ্যাটস ভেরি ইম্পর্টেন্ট।

তিনি রেগে বললেন- আমি যাব না। জিয়া একটা গাদ্দার। কমিশনড নেওয়ার সময় পাকিস্তানের ফ্ল্যাগ আর কোরআন শরীফ ধরে সে শপথ করেছিল- পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু করবে না। আর আজ, পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই সে বিদ্রোহ করেছে। আমি ওই বিদ্রোহী জিয়ার কাছে ফিরে যাব না।

অতঃপর তিনি বলেন- আমি তোমাদেরও ধরিয়ে দিব।

আমরা ভয় পেয়ে গেলাম। দেখলাম বাড়ির গেইটে পাকিস্তানি আর্মি দাঁড়িয়ে আছে।

তখন বিনয়ের সঙ্গে বললাম, ‘স্যার আমাদের অর্ডার করেছেন। তাই আসছি। চাইলে আপনি ধরিয়ে দিতে পারেন।’ কী চিন্তা করে যেন বেগম জিয়া আমাদের ছেড়ে দিলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে তোমরা যাও।’

সাতজনই ফিরে জিয়াউর রহমানকে একত্রে সব খুলে বললাম। উনি তখন খুবই বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন।”

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা ঘটনার কথা এভাবেই তুলে ধরছিলেন যুদ্ধাহত ও বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত মুক্তিযোদ্ধা মেজর শওকত আলী। এক বিকেলে তাঁর বাড়িতে বসেই চলে নানা আলাপচারিতা।

এম আশরাফ আলী ও শিরিন আরা বেগমের ছোট ছেলে শওকত আলী। বাবা ছিলেন রেলওয়ের চিফ ট্রাফিক ম্যানেজার। তাদের আদি বাড়ি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কট্টেশ্বর গ্রামে। কিন্তু পার্টিশনের সময় আশরাফ আলীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রাম। ফলে ছেলে শওকত আলীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরেই।

নার্সারি থেকেই শওকত আলী লেখাপড়া করেন সেন্ট প্ল্যাসিড হাই স্কুলে। ম্যাট্রিক পাশ করেন ১৯৬৮ সালে। অতঃপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম গভর্মেন্ট কলেজে। ১৯৭০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে চলে যান ঢাকায়। অনার্সে ভর্তি হন ইংলিশে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।

৭ মার্চ, ১৯৭১। শওকত আলী তখন জিন্না হলের (বর্তমান সূর্যসেন হল) ১৫৪ নম্বর রুমে থাকেন। বন্ধুদের সঙ্গে চলে আসেন রেসকোর্স ময়দানে। খুব কাছ থেকে প্রথম দেখেন বঙ্গবন্ধুকে। ভাষণ শুনে প্রতিক্রিয়ার কথা জানালেন তিনি। তাঁর ভাষায়-

“সাধারণ মানুষের ঐক্য দেখে মনে হয়েছে, ওইদিনই দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু বললেন- ‘…. প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শক্রর মোকাবিলা করতে হবে….।’ তখনই বুঝেছিলাম লড়াই করেই স্বাধীনতা আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু ওই ভাষণ না দিলে হয়তো কেউ মুক্তিযুদ্ধে এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ত না। উনি ডায়রেক্টলিং কিছু বললেন না। স্বাধীনতার সংগ্রাম আগে না বলে উনি বলেছিলেন ‘মুক্তির সংগ্রাম’। এরপরই আমি, আফতাব, মান্নান, শওকত, কামাল প্রমুখ চট্টগ্রাম চলে যাই। অতঃপর সেখানেই যুক্ত থাকি মিছিল মিটিংয়ে। পরবর্তীতে যোগ দিই এইট বেঙ্গল রেজিমেন্টে।’

এপ্রিল ১৯৭১। মাসটি তখনও শেষ হয়নি। শওকতরা প্রতিরোধ গড়ে চট্টগ্রাম শহরে। চকবাজার রোডে কক্সবাজারমুখি রাস্তার মুখেই ডিফেন্স ছিল তাদের। তিনতলা একটা ব্লিডিংয়ের দোতলায় থাকতেন। বাম পাশে ছিল এক সেকশন বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা। আর সামনে এক সেকশন ইপিআর। পাকিস্তানি সেনাদের ঠেকাতে হবে। তাই পাশেই একটি মসজিদের ভেতর এলএমজি ফিট করে অপেক্ষায় থাকে বাঙালি সেনারা। পাকিস্তানিরা আসতেই শুরু হয় গোলাগুলি।

ক্যাপ্টেন হারুন ও লেফটেনেন্ট শমসের মবিন চৌধুরী ছিলেন সেখানে। ক্যাপ্টেন হারুন ছিলেন ইপিআরের। উনারা কমান্ড করতেন। সহযোগিতার জন্য অস্ত্রহাতে তাদের সঙ্গে থাকতেন শওকতরা। এক পর্যায়ে পাকিস্তানিরা ট্যাঙ্ক নিয়ে আক্রমণ করলে শওকতদের এক সেকশন উড়ে যায়। টিকতে না পেরে তারা তখন চলে যান কালুরঘাট ব্রিজে।

এরপর কী ঘটল?

সে ইতিহাস শুনি শওকত আলীর জবানিতে। তাঁর ভাষায়- “ওখানে আমরা ডিফেন্স নিলাম। সামনে এক সেকশন ইপিআর। এরপর এইট বেঙ্গল। আর পেছনে ছিল বেঙ্গল রেজিমেন্ট। সবাই ট্রেইন্ড সোলজার। আমি আর শওকত স্টুডেন্ট। পরে ক্লাসমেট ফারুককে নিলাম। এরপর মাসুদও যুক্ত হয়। মেরিন অ্যাকাডেমি থেকে পালিয়ে আসে হাসমি মোস্তফা কামালও। আমাদের বলা হতো অনারেবল সোলজারস। শমসের মবিন ও হারুন সাহেবের সঙ্গে থাকাই ছিল কাজ। উনারা বললে আমরা ফায়ার ওপেন করতাম। পুরো দলের কমান্ড করতেন মেজর মীর শওকত।

কালুরঘাট ব্রিজে ফ্লাগ দেখিয়ে গাড়ি পাড়াপাড় করা হতো। ফ্ল্যাগ হাউজে পজিশনে ছিলেন ক্যাপ্টেন হারুন। উনার সঙ্গে বন্ধু শওকত ছিল। পাশেই একটা বাঙ্কারে এ কে ফোরটি সেভেন নিয়ে পজিশনে শমসের মবিন। একটি ব্রিটিশ স্টেনগান নিয়ে তার সঙ্গে ছিলাম আমি।

হঠাৎ ‘বাঁচাও’ বলে একটা চিৎকার হয়। শব্দটা আসছে ফ্ল্যাগ হাউজ থেকে। কী হয়েছে? শুনলাম ক্যাপ্টেন হারুনের গুলি লাগছে। দৌড়ে গেলাম। উনি জানালা দিয়ে বাইরে দেখছিলেন। ঠিক তখনই পাকিস্তানি সেনাদের টার্গেটে পড়ে যান। গুলি লেগে ফ্ল্যাগ হাউজ থেকে ৫-৬ ফিট নিচে পড়ে যান। দ্রুত একটা রশি ফেলে আমরা দুজন বহু কষ্টে উনাকে টেনে তুললাম।

গুলি লেগেছিল তার পেটে। ভুঁড়ি প্রায় বেরিয়ে যাচ্ছিল। বন্ধু ফারুকও তখন এগিয়ে আসে। হারুন স্যারের পেটে আমার গামছাটা বেধে দিই। ওখানে একটা মাইক্রোবাস রাখা ছিল। ফারুককে বলি, ‘তুই স্যারকে নিয়ে পটিয়া হেল্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে যা।’ ওটা না করলে তাঁকে সেদিন বাঁচানো যেত না।

একাত্তরে আহত হওয়ার ঘটনাটির বর্ণনা দিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী

এরপর ফিরে আসি শমসের মবিনের বাঙ্কারে। তাকে সেরু ভাই বলে ডাকতাম। ফায়ারিং তখনও হচ্ছে থেমে থেমে। সামনে এক সেকশন ইপিআর। ওরা যে কখন চলে গেছে আমরা টের পাইনি। ওদের ওখানে এসে পজিশন নিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা। ইপিআরের পোশাকের সঙ্গে ওদের পোশাকের বেশ মিল ছিল। ফলে আমরা বুঝতে পারি না।

হঠাৎ ইপিআরদের ওখান থেকে পাকিস্তান সেনাদের রকেট লঞ্চার মারার শব্দ পাই। বাইনোকুলার নিয়ে শমসের মবিন দেখেই বললেন- সর্বনাশ। ওরা তো খুব কাছে চলে এসেছে!

আমি পজিশনে চলে যাই। দূরে একজন এগোলে ফায়ার করি। সঙ্গে সঙ্গে সে পড়ে যায়। তবুও ওরা এগোচ্ছিল। সেরু ভাই বললেন- ‘শওকত গো ব্যাক।

আমি যেতে রাজি হই না। উনি বোঝালেন- আমাকে ধরলে জেনেভা কনভেশনে বিচার হবে। কারণ আর্মি অফিসার আমি। আর তোমাদের ধরলে স্পটেই গুলি করে মারবে ওরা।

ট্যাঙ্ক ঠেকানের জন্য ওখানে দুটি স্টিমরোলার রাখা ছিল। উনি অনুরোধ করলে তার পেছনে গিয়ে লুকাই। বন্ধু শওকতকে পাঠিয়ে দিই দূরে। গোলাগুলি তখনও চলছে। স্টিমরোলারের পাশ থেকে আমি ফায়ার দিচ্ছি। সেরু ভাই দেখে রাগ হন। বলেন- তুমি এখনও যাও নি।

বলি- আমি আপনাকে ফেলে যাব না।

আমার দিকে তিনি বন্দুক তাক করে আবারও যাওয়ার নির্দেশ দেন। খানিকটা দূরে গার্ডার পর্যন্ত সরে আসি তখন। অতঃপর তাকিয়ে দেখি শমসের মবিনের সঙ্গে পাকিস্তানিদের গোলাগুলি।

একাত্তরে ট্রেনিং ও অপারেশনের কথা জানাচ্ছেন বীর প্রতীক শওকত আলী

খানিক পরেই তার ব্যাটম্যান গুলি খেয়ে পেছনে সরে আসে। তার সাথে পরিকল্পনা করি সেরু ভাইকে সেভ করার। কিন্তু সে সুযোগ আমরা পাই না। ‘নারায়ে তাকবির’ বলে সেরু ভাইকে ওরা ঘিরে ফেলে। অতঃপর উনার মুখটা বুটের নিচে চেপে ধরে। সেরু ভাইকে বলেন- হাম অফিসার হে। হামকো কুচ মাত করো।

পাকিস্তানি সেনারা ক্ষিপ্ত হয়ে উত্তর দেয়- তুম শালা বাঙালি হে। বাঙালি কোই অফিসার নেহি হোতে। সব শালা গাদ্দার হোতে।

অতঃপর ওরা শমসের মবিনের পা বেধে নিয়ে যায়। খুব কাছেই ছিলাম। আমাদের দিকে ওদের চোখ পড়তেই এক সেনা বেয়নেড মারতে এগিয়ে আসে। হঠাৎ কি মনে করে যেন আবার ফিরে যায়। তা না হলে হয়তো সেদিনই মরতে হতো।”

প্রাণে বেঁচে গেলেও আরেক অপারেশনে ডান পায়ের গোড়ালিতে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয় এই যোদ্ধার। সেটা নিয়েই তিনি যুদ্ধ করেন সপ্তাহ দুয়েক। ফলে পা-টি ফুলে যায়।

কী ঘটেছিল রক্তাক্ত ওই দিনটিতে। জানতে চাই আমরা। উত্তরে খানিকটা নিরবতা। অতঃপর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বলেন- “তখনও স্টুডেন্ট হিসেবে ছিলাম। রামগড়ের রাইট সাইডে পাকিস্তানিদের বাঙ্কার ছিল। আমরা ইন্ডিয়ার কাছাকাছি। ওদের বাঙ্কার দখলে নিতে হবে। আমরা অ্যাটাক করতাম রাতে। তিনটার পর হতো মেইন অপারেশন। অ্যাটাক করেই চলে আসতাম।

পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া শেলের স্প্লিন্টারে বিদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলীর ডান পায়ের গোড়ালিতে

তখন শীতকাল। ফেনি নদীতে বুক পর্যন্ত পানি। সেটা পেরিয়ে উঠে আসি। ‘মুভ’ বলার সাথে সাথে এগোই। আন্ডার কাভার আমরা চার্জ দিতাম। চার্জ করছি। প্রচণ্ড গোলাগুলি ও শেলিং চলছে। হঠাৎ সামনে এসে পড়ে একটা শেল। অতঃপর স্প্লিন্টার ঢুকে যায় ডান পায়ের গোড়ালির নিচে। প্রথম বুঝতে পারিনি। রক্ত পড়তে দেখে গামছা দিয়ে বেঁধে দিই। সপ্তাহ দুয়েক পরেই পা যায় ফুলে। সেক্টর কমান্ডার দেখেই আমাকে পাঠিয়ে দেন বেইজ হাসপাতালে, গৌহাটিতে। পায়ের এক্স-রে করে মুখের দিকে খানিক তাকিয়ে থেকে ডাক্তার বললেন- ‘ভেতরে তো স্প্লিন্টার। তুমি আছো কীভাবে!’ পরে অপারেশন করে তিনি ডান পায়ের গোড়ালি থেকে স্প্লিন্টার বের করে আনেন। দুই সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলাম। অতঃপর কাউকে কিছু না জানিয়েই ক্যাম্পে ফিরি।”

এরপরও কি অপারেশনে যোগ দেন?

“না। আমরা রামগর ক্রস করে চলে গেলাম ভারতের সাবভুমে, ত্রিপুরায়। ওখানে হরিণা ক্যাম্পে উঠি। ট্রেনিং হয় প্রায় একমাস। ফিজিক্যাল ট্রেনিং ও এক্সপ্লোসিভ শেখায়। অতঃপর ট্রুপসের সাথে আমরা বর্ডার পার হয়ে হিট করেই আবার ফিরে আসতাম। এভাবেই চলছি।

মে মাসের কথা। প্রায় কয়েক হাজারে স্টুডেন্ট থেকে বাছাই করা হলো সাত জন। আমি হলাম প্রথম। সাত জনকে রিক্রুট করা হলো সেনাবাহিনীতে। আমি ছাড়াও চান্স পায় ওলি, ফারুক, হাসমত, হাসমি, মোস্তফা কামাল ও মাসুদ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আমরা ছিলাম প্রথম ব্যাচ।”

ট্রেনিং হলো কোথায়?

শওকত বলেন- “আগড়তলায় এনে আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে (মূর্তি)। অন্য সেক্টর থেকেও আসে অনেকেই। সর্বমোট ছিলাম ষাট জন। আর্মির বেসিক ট্রেনিং চলে সাড়ে চার মাস। অতঃপর সেকেন্ড লেফটেনেন্ট র‌্যাংক দিয়েই পোস্টিং দেওয়া হয় বিভিন্ন সেক্টরে। ভাগ্য আমার ভাল ছিল। ওয়ান সেক্টর থেকে এসেছিলাম স্টুডেন্ট হিসেবে। ওখানেই ফিরে যাই অফিসার হয়ে। ১২ অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে জয়েন করি। আর্মি নম্বর ছিল বিএসএস ৭২৮।”

সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলামের স্বহস্তে লেখা তৎকালীন নির্দেশনা

সেক্টর ওয়ানে শওকত আলী যখন যোগ দেন তখন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম। ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টসহ মোট ৩১০ জন সেনা দিয়ে উনি শওকতকে পাঠিয়ে দেন ফটিকছড়িতে। সেখানে কিরাম পাহাড়ে ডিফেন্স গড়ে শওকত আলী। পাকিস্তানি আর্মিদের ক্যাম্প তখন ছিল হাটহাজারিতে ও নাজিরহাট কলেজে। শওকত আলীর ট্রুপস সামনে এগিয়ে গিয়ে হিট করেই আবার ফিরে আসত। ফটিকছড়ির বাস স্ট্যান্ডের পাশে একবার অ্যাম্বুসে শওকতদের এগারজন যোদ্ধা শহীদ হয়েছিল। কিন্তু ওইদিনই তারা উড়িয়ে দিতে সক্ষম হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক লেফটেনেন্ট কর্নেল, তিন মেজর ও দুইজন লেফটেনেন্টসহ ১৭২ জনের এক বাহিনিকে। তার নেতৃত্বে এভাবেই সফল অপারেশন চলে দেশ স্বাধীনের আগ পর্যন্ত।

স্বাধীনতা লাভের পর এই বীর যোদ্ধা সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকেন। তাদের প্রথম ব্যাচের পদোন্নতি দিয়ে লেফটেন্টে কর্নেল করার কথা ছিল ১৯৭৯ সালে। কিন্তু জিয়াউর রহমান তা দেন নি। জিয়া হত্যাকাণ্ডের সময় মেজর হিসেবেই শওকত আলীর পোস্টিং ছিল রুমায়। ফলে সন্দেহবশত তাকে জড়ানো হয় জিয়া হত্যা মামলায়। পাঁচ বছর চলে ইন্টারোগেশন ও টর্চার। টর্চারে এই মুক্তিযোদ্ধার সামনের মাড়ির দাঁতগুলো সব পড়ে যায়। অতঃপর কোর্ট মার্শালে তাকে ১৪ বছর সাজা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে তিনি মুক্তি পান। কিন্তু চাকরি আর ফিরে পাননি।

কথা ওঠে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে। মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলীর ভাষ্য- “ছাত্রনেতারা তখন ভাল ছাত্রও ছিল। ত্যাগের মানসিকতা ছিল বেশি। খুব সহিংস তারা হতেন না। কলেজে ছাত্রলীগকে দুই টাকা করে চাঁদা দিতাম। নেতা যারা ছিলেন তাদের কোন লোভ-লালসা দেখি নাই। ওই টাকা দিয়েই নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হতো। এখন সব উল্টো। টাকা কামানোটাই সব। ছাত্র রাজনীতি মানেই টেন্ডারবাজি আর কোটিপতি হওয়া।”

এর জন্য দায়ী কে?

তাঁর উত্তর- “আফটার লিভারেশন রাজনীতি বদলে যেতে থাকল। মূল কারণ হলো বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স নামে একটা ফোর্স হয়। যেটাকে বিএলএফ বলে। সেখানে সব কিন্তু এসেছিল শুধুমাত্র ছাত্রলীগ আর যুবলীগ থেকে। যেটা কোনো ফোর্স ছিল না। দ্যাট ওয়াজ এ পলিটিক্যাল ফোর্স। ইন্ডিয়ান আর্মি ওদের লেটেস্ট আর্মস আর ট্রেনিং দিয়ে আমাদের পেছন পেছন পাঠিয়ে দিয়েছিল। ওদের অনেকেই যুদ্ধ করেছিল। আবার অনেকেই ব্যস্ত ছিল অন্তর্কলহে। আমি মনে করি, ঠিক তখন থেকেই স্টুডেন্ট পলিটিক্স টার্ন নেয় খারাপের দিকে।”

আঘাতের চিহ্ন দেখাচ্ছেন বীর প্রতীক শওকত আলী

স্বাধীনতা লাভের পর সেনাবাহিনীতে পাকিস্তান ফেরত অফিসারদের নেওয়াটা একদম ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে করেন এই বীর প্রতীক। তাঁর ভাষায়- “একটা সময়ে জেনারেল ওসমানি বঙ্গবন্ধুকে কনভিন্স করে পাকিস্তান ফেরত সেনা অফিসারদের এনেছিলেন। ওরা এসেই উল্টাপাল্টা আচরণ শুরু করে। সংখ্যায় ওরা ছিল অনেক। নানা বিষয়ে তারা আমাদের কটূক্তি করত। যোদ্ধা হিসেবে মেনে নিতে পারত না। ফলে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব তৈরি হতে থাকে। আরেকটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল টু-ইয়ারস সিনিয়রিটি। যেটা কোনো কাজে আসেনি। বরং আমাদের পিঠে একটা সিল পড়েছিল মাত্র।”

তিনি আরও বলেন- “তেলে-জলে তো মিশবে না কখনও। পাকিস্তান ফেরত ওরা ছিল এক আইডোলজির। আর মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল আরেক আউডোলজি। স্বাধীন দেশে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়েই সেনাবাহিনী গঠিত হলে অন্তত এতো ক্যু আর হত্যা হতো না। ক্ষমতার লোভে সেনাবাহিনীর ভেতরেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ যুদ্ধ চলেছে বহু বছর।”

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে এই সূর্যসৈনিক বলেন- “যারা পাকিস্তান ফেরত অফিসার তারা পেছন দিক থেকে ইন্ধন ও শক্তি জুগিয়েছে। আর আমাদের ভেতর কিছু স্টুপিড অফিসার স্বার্থের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সময়ে দেশটা মাত্র রাইজ করছিল। তাঁকে হত্যা করে ওরা তো ঘৃণার ইতিহাস রচনা করেছে।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও জিয়াউর রহমানের শাসনামল ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন করেন মেজর শওকত আলী

স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের সরকার গঠন প্রসঙ্গে বীর প্রতীক শওকত আলী অকপটে তুলে ধরেন নিজের মতামত। তাঁর ভাষায়- “প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। ব্যাক অফ দা মাইন্ড উনার ইনটেনশন ছিল ভিন্ন। রনাঙ্গণে আমরা মীর শওকত আলীকে পেয়েছিলাম। কিন্তু জিয়াকে যুদ্ধ করতে দেখিনি। তাছাড়া উনার স্ত্রী বেগম জিয়াও তো চাননি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিয়া যুদ্ধ করুক!”

১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক অবদানের জন্য মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলীসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব দেয়া হয়। সরকার একই সময়ে গেজেট আকারে বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম ও বীর বিক্রম খেতাব দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আশির দশক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে বিভিন্ন অপারেশনে সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর ৮২ জনকেও বিভিন্ন সময়ে ‘বীর প্রতীক’ নামে উপাধি দিয়েছে। একইভাবে ৫ জনকে ‘বীর উত্তম’ ও ২০ জনকে ‘বীর বিক্রম’ উপাধিও দেওয়া হয়। এতে একাত্তরের বীরত্ব ও সম্মাননাকে বির্তকিত করা হয়েছে বলে মনে করেন মেজর শওকত আলী (বীর প্রতীক)।

তাঁর ভাষায়- “আমরা অবজেকশনও দিয়েছিলাম তখন। উপাধি প্রদানের রীতি সেনাবাহিনীতে নতুন নয়। কিন্তু অন্য নামেও উপাধি দেওয়া যেত। আবার ওই নামের উপাধিগুলো কিন্তু এখন আর দেওয়া হচ্ছে না। আমি মনে করি রাষ্ট্রের জন্য ওই সিদ্ধান্তটি ছিল সত্যি অস্বস্তিকর। এটা একেবারেই ঠিক হয়নি। তাই যারা ওই উপাধিগুলো পেয়েছেন তাদের বীরত্বের সম্মান ঠিক রেখে ওই খেতাব বা উপাধিগুলোর নাম চেঞ্জ করা উচিত। তা না হলে একাত্তরের বীরত্বের খেতাব ‘বীর প্রতীক’ আশির দশকেও কেন ব্যবহৃত হলো! এমন প্রশ্ন ইতিহাসে থেকেই যাবে! বিষয়টি উপাধিপ্রাপ্তদের জন্যও বিব্রতকর!”

কী করলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে?

মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলীর উত্তর- “ভাল মানুষকে ভাল জায়গায় বসাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষকে চিনে নিতে হবে। মানুষের মধ্যে দেশাত্ববোধ জাগাতে হবে। শিক্ষার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সবকিছু শুধু পুলিশ প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। অন্যায় আর দুর্নীতি যেই করবে তারই শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমার বিশ্বা, প্রধানমন্ত্রী সে পথেই আছেন।”

পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি পাহাড়সম আশা বীর প্রতীক মেজর শওকত আলীর। চোখেমুখে আলো ছড়িয়ে তাদের উদ্দেশে তিনি শুধু বললেন- “তোমরা দেশকে মায়ের মতো ভালবেসো। দেশের উন্নতি হয় এমন কাজে যুক্ত থেকো। মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে নিজেকে মুক্ত রেখো। তোমরাই পারবে দেশটাকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে। মুক্তিযোদ্ধাদের দোয়া সবসময়ই তোমাদের সাথে থাকবে।”

সংক্ষিপ্ত তথ্য

নাম : যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর প্রতীক মেজর শওকত আলী।

ট্রেনিং অন্যান্য: প্রথমে স্টুডেন্ট হিসেবে কাজ করেন এইট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মে মাসে রিক্রুট হন সেনাবাহিনীতে। অতঃপর আর্মির বেসিক ট্রেনিং চলে সাড়ে চার মাস, ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে (মূর্তি)। ১২ অক্টোবর ১৯৭১ সেকেন্ড ল্যাফটেনেন্ট হিসেবে যোগ দেন সেক্টর ওয়ানে। আর্মি নম্বর ছিল বিএসএস ৭২৮।

যুদ্ধ করেছেন : এক নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন এলাকায়।

যুদ্ধাহত : ফেনি নদীর নিকটবর্তী এলাকায় অপারেশনের সময় পাকিস্তানি সেনাদের শেল এসে পরে তাঁর সামনে। ফলে একটি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয় তার ডান পায়ের গোড়ালির নিচে। পরে গৌহাটি বেইজ হাসপাতালে অপারেশন করে তা বের করে আনা হয়।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ২৬ জুলাই ২০১৮

© 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button