মুক্তিযুদ্ধ

স্বাধীন দেশে একে অপরকে বলি ‘জয় বাংলা’

‘জয় বাংলা’-কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর হলেও এমন সংবাদ আমাদের প্রেরণা দেয়, আন্দোলিত করে।

‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি শুরু হয়েছিল কীভাবে? জানা যায় ১৯৬৯ সনের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের একটি সভা হয়। ওই সভায় ১৭ মার্চ শিক্ষা দিবস পালনের কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা চলছিল। আলোচনার একপর্যায়ে তৎকালীন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা আফতাব উদ্দিন আহমেদ (পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন) এবং দর্শন বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক চিশতি শাহ হেলালুর রহমান (একাত্তরে শহীদ হন) ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি প্রথম উচ্চারণ করেন। সভা চলাকালীন আকস্মিকভাবে সবাইকে চমকে দিয়ে তারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি দেন। সঙ্গে সঙ্গে সাত-আটজন কর্মী প্রতিধ্বনি করে বলেন ‘জয় বাংলা’। ওই সময় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ হাতে লেখা তিন পাতার একটি পত্রিকাও প্রকাশ করে। যার নাম ছিল ‘জয় বাংলা’।

শুরুর দিকে এই স্লোগানটি নিয়ে তৎকালীন নেতা-কর্মীদের অনেকের ভেতরই নানা আলোচনা-পর্যালোচনা হতে থাকে। নেতাদের অনেকে আপত্তিও তোলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘জয় বাংলা’র পক্ষে।

একটি ঘটনায় তা বেশ স্পষ্ট হয়। ১৮ জানুয়ারি ১৯৭০। পল্টনে বিশাল জনসভা চলছে। মঞ্চের শামিয়ানায় আটকানো হার্ডবোর্ডের ওপর লাগানো কাঠের খণ্ডে উজ্জ্বল লাল রঙে লেখা হয়েছে ‘জয় বাংলা’ শব্দ দুটি । ওই সভায় সভাপতিত্ব করছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাজউদ্দীন আহমদের বক্তব্যের পরই তিনি মঞ্চে বসা অবস্থায় বললেন, “সিরাজ (সিরাজুল আলম খান) স্লোগান দে”। দ্রুত মাইকের সামনে গিয়ে সিরাজুল আলম খান আবেগঘন কণ্ঠে বললেন, “আসুন, সাত কোটি মানুষের পক্ষ হয়ে আমরা সকলকে জানিয়ে দেই, যার কণ্ঠে যত জোর আছে আমরা একসঙ্গে বলে উঠি ‘জয় বাংলা’।” লাখো কণ্ঠে তখন আওয়াজ ওঠে- ‘জয় বাংলা’। এমন ইতিহাসের কথা জানা যায় বিভিন্ন গ্রন্থ ও আত্মজীবনী থেকে।

১৯৭০-এর ৭ জুন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বিশাল এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে প্রথম যুক্ত করেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি। ১৯৭১ সনের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েই তার অবিস্মরণীয় বক্তৃতা শেষ করেছিলেন। তাই জয় বাংলা স্লোগান বাঙালির আত্মপরিচয়ের স্লোগান। এ স্লোগান বাঙালি জাতিকে করেছিল ঐক্যবদ্ধ।

একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু মূলনীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যার মূলে ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করেছিল একাত্তরে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস অর্জনের পথ ছিল কণ্ঠ আকাশে তুলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া। তাদের বীরত্ব প্রকাশের ভাষাটিও ছিল ‘জয় বাংলা’।

দুই বছর আগে উচ্চ আদালতের এক রায়ে জাতীয় দিবস, সরকারি অনুষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চারণের ওপর জোর দিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে ওই সময় আদালত বলে, ‘জয় বাংলা’ জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। ‘জয় বাংলা’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় স্লোগান এবং জয় বাংলা ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত। উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনার আলোকেই সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টের এমন রায় কার্যকর করতে কেন দুই বছর সময় লাগল? এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

কখন ও কোথায় জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহার করতে হবে? মন্ত্রিপরিষদ সচিব এটি স্পষ্ট করেছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, সাংবিধানিক পদধারী সব ব্যক্তি, রাষ্ট্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী রাষ্ট্রীয় বা সরকারি অনুষ্ঠানের শেষে জয় বাংলা বলবেন৷ এছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোনো ধরনের সভা-সেমিনার শেষে জয় বাংলা বলতে হবে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাসেম্বলিতে অংশগ্রহণকারীদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে হবে৷ আর যে কোনো ধরনের অ্যাসেম্বলি, অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি যে ব্যক্তিই থাকবেন, তিনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেবেন৷ মন্ত্রিপরিষদের সভায় এটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷

এমন সিদ্ধান্তে আনন্দিত মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, ‘জয় বাংলা’ মুক্তিযোদ্ধাদের স্লোগান, ‘জয় বাংলা’ মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এদেশ আরেক পাকিস্তান বনে যায়। জিয়াউর রহমানের আমলে টেলিভিশন, রেডিও ও পত্রিকায় জয় বাংলা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ বইয়েও লেখা যেত না৷ বঙ্গবন্ধু শব্দটিও লেখা যেত না। লেখা হতো শেখ মুজিব৷ মুক্তিযোদ্ধারা প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর নাম ও জয় বাংলা স্লোগান দিতে পারতেন না। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার অপরাধে অনেকের ওপরই নেমে আসত অত্যাচারের খড়্গ।

জয় বাংলা প্রসঙ্গে কথা হয় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আহম্মদ বাবুর সঙ্গে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন চার নম্বর সেক্টরে। জয় বাংলা স্লোগান প্রসঙ্গে তিনি অকপটে বলেন,

“একাত্তরে যখন স্পিরিটের প্রয়োজন হয়েছে আমরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধারা জীবনও দিয়েছে ‘জয় বাংলা’ বলে। এই স্লোগান দিয়েই আমরা অপারেশন শুরু করেছি। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের জন্যও ‘জয় বাংলা’ স্লোগানই ছিল আতঙ্ক। সরকার এটিকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছে এটা আশার কথা। আমি মনে করি ধর্মনিরপেক্ষতার পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি খুবই পজেটিভ উদ্যোগ। ভারতে বিভিন্ন বাহিনীতে ‘জয় হিন্দ’ বলার প্রচলন রয়েছে। তাহলে রক্তে পাওয়া এই স্বাধীন দেশে আমরা কেন একে অপরকে বলি না ‘জয় বাংলা’? সরকারের উচিত হবে এই স্লোগান সব ক্ষেত্রে নিশ্চিত করারও উদ্যোগ নেওয়া।’’

এ নিয়ে কথা বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজ আলম বেগও। ক্যাপ্টেন বেগ নামে তিনি অধিক পরিচিত। একাত্তরে নয় নম্বর সেক্টরের শমশেরনগর সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে সমগ্র সাতক্ষীরা অঞ্চলে গেরিলা, সম্মুখ ও নৌ-কমান্ডো যুদ্ধসমূহ পরিচালনা করেন তিনি। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

‘‘জয় বাংলা স্লোগানই ছিল একাত্তরের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। প্রথম দিকে সবাই ছিল আইডিওলজিক্যাল ফ্রিডম ফাইটার। যারা বুক দিয়ে বিশ্বাস করত বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। পাকিস্তানিরা আসছে অন্যের দেশে। জোর করে একটা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে মাতবরি করতে আসছে। আর আমাদের দেশেই আমরা। নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড় সব চেনা। এখানে আমরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও শুনেছেন ৯০ হাজার ওয়েল ইকুয়েপড সেনা সারেন্ডার করেছে। একমাত্র যদি তারা কাপুরুষ না হয়। এমন নয় যে তাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে গিয়েছিল। তবুও সারেন্ডার করতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানি সেনারাই। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই হয়েছে এটা। এই দেশ আমার মায়ের দেশ। মাকে মুক্ত করাই তখন ছিল সবচেয়ে বড় কাজ। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার বুকে তখন ছিল এই আগুন। আর সাহস ছিল ওই স্লোগান। তাই আমি বলি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েই তো আমরা দেশ জয় করেছি। ওই অর্থে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই স্লোগানই ছিল জাতীয় স্লোগান।’’

কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পর বিভক্তির রাজনীতির কারণেই জয় বাংলা স্লোগানকে দলীয় স্লোগান হিসেবে দেখিয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে বলে মনে করেন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নেতা এবং বর্তমান আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ। এ নিয়ে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার ভাষ্য ছিল এমন-

‘‘স্বাধীনতার পরও কিন্তু আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জয় বাংলা স্লোগান দিতাম। যে জাসদ একসময় জয়বাংলা স্লোগান দিত, তারা সেই স্লোগান দেওয়া বন্ধ করে দেয়। জাসদ তো আওয়ামী লীগ থেকেই বেরিয়ে গিয়ে নতুন দল করেছিল ১৯৭২ সালে। এরপর বিভিন্ন দল এটাকে দলীয় স্লোগান হিসেবে চিহ্নিত করতে থাকে। যা ছিল সত্যি দুর্ভাগ্যজনক।’’

কিন্তু জাসদ নেতাদের বক্তব্য, সদ্য স্বাধীন দেশে শেখ মুজিবের সরকারের বিরোধিতা করে নতুন দল জাসদের উত্থান হলে সেই দলটি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ব্যবহার করেনি সত্য, কিন্তু তারা ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগানও দেয়নি। ১৯৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পরই জয় বাংলার পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগানের প্রচলন শুরু হয়। যারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী নন, যারা পাকিস্তানে বিশ্বাস করেন এবং যারা ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী, তখন তারাই এই স্লোগানের প্রচলন ঘটায়। যার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন জিয়াউর রহমান।

বিশ্বের প্রায় একশ ষাটটি দেশে জাতীয় স্লোগান আছে। আমাদের ছিল না। ‘জয় বাংলা’ আমাদের জাতীয় ঐক্য ও প্রেরণার প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে মিশে থাকা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকেই করা হয়েছে জাতীয় স্লোগান। এটি যেমন আশা জাগানিয়া খবর তেমনি গৌরবেরও বিষয়। স্বাধীন দেশে চলুন একে অপরকে বলি ‘জয় বাংলা’।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ৪ মার্চ ২০২২

© 2022, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button