মুক্তিযুদ্ধ

বীরগাথা ১৯৭১: ‘একাত্তরের যুদ্ধটা আমাদের ছিল, ভারতের নয়’

“হঠাৎ আব্বা বদলি হন গোপালগঞ্জে। ফরিদপুর থেকে আমরাও আসি তার সঙ্গে। আমি তখন ছোট। তবে মনে আছে অনেক ঘটনা। আমাদের বাসাটি ছিল বঙ্গবন্ধুর বাড়ির অপজিটে। খুব দুষ্ট ছিলাম। নানা বিষয়ে আগ্রহও কম ছিল না। বাড়িতে পাট ঝুলিয়ে রাখা হতো। দেখতে অন্য রকম লাগত। পাটে কি আগুন ধরে? তা দেখতে কুপি নিয়ে একদিন পাটে আগুন দিই। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে পাটগুলো। কী করলি বলে ছুটে আসে সবাই। পানি দিয়ে ওই আগুন নিভায়। এই কাণ্ড দেখে আব্বা ক্ষেপে যান। আমি তখন ভয়ে অস্থির। আব্বা খুঁজছেন আমাকে। পেলেই পিটুনি খেতে হবে। এক দৌড়ে চলে যাই রাস্তার ওপারে, শেখ মুজিবুরের বাড়িতে।

তখন সন্ধ্যাবেলা। উঠানে চেয়ার পেতে লোকজন নিয়ে বসে আছেন শেখ মুজিব। তার চেয়ারের পেছনে গিয়েই লুকালাম। আব্বাও তেড়ে আসেন। শেখ সাহেব আমাকে উদ্ধার করেন। আব্বাকে বুঝিয়ে বলেন– ‘ছোট মানুষ, ওকে কিছু বলো না।’ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আব্বার কোলে তুলে দেন। শেখ মুজিবের ওই ছোঁয়া এখনো অনুভব করতে পারি।

এরপর আমরা চলে আসি ফরিদপুরে। ওখানে দুটি লাইব্রেরি ছিল– নাম কায়েদে আজম লাইব্রেরি (বর্তমানে শেরেবাংলা লাইব্রেরি) ও কোহিনূর লাইব্রেরি। বই পড়ার নেশা ছিল। প্রতিদিন বাড়িতে একটি বই নেওয়া যেত। ভুয়া নাম দিয়ে আমি আনতাম দুটো। ওই বই চাচা-ফুফুরা মিলে পালাক্রমে পড়তাম। মাঝেমধ্যে মাশারির ভেতর হারিকেন নিয়ে সারা রাতে বই শেষ করতাম। এখন তো লাইব্রেরিতেই মানুষ যায় না। ঘরে বইভর্তি বুক সেলফও কমে দেখা যায়। বইয়ের পাঠক তৈরি করতে না পারলে সত্যিকারের শিক্ষা হবে কেমনে?

১৯৬৯-এর আন্দোলন তখন তুঙ্গে। স্কুলে আসত কলেজের ছাত্রনেতারা। ছাত্রনেতা ছিলেন শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, কবিরুল আলম মাও, নাসির ভাই প্রমুখ। এরা নানা বৈষম্যের কথা ব্রিফ করতেন। তাদের সঙ্গে আমরা মিছিল নিয়ে সারা শহর প্রদক্ষিণ করতাম। স্কুলে রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদি স্যার ছিলেন। উনিও সব সময় পাকিস্তানিদের বৈষম্যের কথা তুলে ধরে আমাদের উদ্দীপ্ত করেছিলেন।

এরপর কলেজে গিয়েই ইউওটিসি ট্রেনিং নিই। এটা ছিল সামরিক ট্রেনিং। থ্রি নট থ্রি রাইফেল খোলা, লাগানো, ফায়ার করা আর অপারেশনে ক্রলিং করা শেখানো হয়। কলেজ মাঠে নিয়মিত চলত ট্রেনিং। পাঞ্জাব রেজিমেন্টের হাবিলদার মুনতা খান ছিলেন ট্রেনার। পাকিস্তানিদের দেওয়া ওই ট্রেনিংই কাজে লাগে একাত্তরে।

তখন ফরিদপুরে মুসলিম লীগের নামকরা নেতা ছিলেন সোবহান মোল্লা, রাজ্জাক দারোগা, শমসের মৌলভি (মুসা বিন শমসেরের বাবা), আবদুর রহমান বাকাউল উকিল, রাজ্জাক মোক্তার প্রমুখ। এরা আমাদের মানুষই মনে করত না। সবাই ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী। পরে পিস কমিটির সদস্য হন নুরু মিয়া। যদিও তিনি কোনো হত্যা বা ধ্বংসাত্মক কাজে যুক্ত ছিলেন না। ফরিদপুরে ওই সময় আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন ইমাম উদ্দিন আহমেদ, মোশারফ হোসেন, শামসুদ্দিন মোল্লা, এস এম নুরনবী, ফিরোজ মাস্টার প্রমুখ।

সত্তরের নির্বাচনে ওখানে এমএনএ হিসেবে দাঁড়ান ওবায়দুর রহমান আর এমপিএ ইমাম উদ্দিন আহমেদ। তাদের প্রচারণায় আমরা চুঙ্গা নিয়ে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়তাম। সত্তরে আওয়ামী লীগের গণজাগরণ ঘটে। ফলে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল।

কিন্তু তবু ক্ষমতা ছাড়ে না পাকিস্তানিরা। ফলে সারা দেশে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। এরপর প্রিয় নেতা ভাষণ দেন রেসর্কোস ময়দানে। আমরা তা শুনি রেডিওতে। তখনই পরিষ্কার বুঝে যাই–যুদ্ধ ছাড়া উপায় নেই। ৭ মার্চের ভাষণই সবকিছু বদলে দেয়। ওই ভাষণ যখনই শুনি তখনই মনে হয় প্রথম শুনছি। বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণই আমাদের মুক্তির পথ দেখায়।”

মুক্তিযুদ্ধের আগের নানা ঘটনার কথা এভাবেই তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ হাফিজুল হক।

সৈয়দ এ এইচ আতিকুল হক ও হেলেনা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। বাড়ি ফরিদপুর পৌর এলাকায়, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ১৯৭০ সালে ম্যাট্রিক পাসের পর হাফিজুল ভর্তি হন ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে। ওই সময় ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদকও হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র।

২৫ মার্চ ১৯৭১। সারা দেশে ক্র্যাকডাউন হয়। পাকিস্তানি আর্মিদের ঠেকাতে হবে। তাই হাফিজুলরা প্রথমে স্টেডিয়ামে এবং পরে রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে রাইফেল ট্রেনিং দেন। সঙ্গে ছিলেন মোকারম, হেলালি, বদরুল হাসান, ফয়েজ, মেজবা উদ্দিন নোফেল প্রমুখ। কয়েকটা থ্রি নট থ্রি রাইফেলও তখন জোগাড় হয়ে যায়। এরপরই তারা পজিশন নেয় গোয়ালন্দ ঘাটের দিকে। কিন্তু পাকিস্তানিদের সাঁজোয়া বাহিনী দেখে ভড়কে যায় এবং পিছু হটে।

২০ এপ্রিলের পরের ঘটনা। পাকিস্তানি সেনাদের একটি গ্রুপ যশোর থেকে কামারখালী ঘাট পার হয়ে শেলিং শুরু করে। আরেকটি গ্রুপ ঢোকে গোয়ালন্দ ঘাট দিয়ে। তাদের আক্রমণে ফরিদপুর শহর জ্বলতে থাকে। শহরে ঢুকেই তারা প্রথম সাধুদের হত্যা করে। অতঃপর বিহারী ও মুসলিম লীগের লোকদের নিয়ে গণহত্যা চালায়।

পাকিস্তানপন্থী কুখ্যাত খুনি ছিল মকবুল। ফরিদপুর স্টেডিয়ামের পাশে একটা গণকবর আছে। সেখানে বহু লোককে নিজ হাতে জবাই করে সে। এসব দেখে ঠিক থাকতে পারে না হাফিজুল। তার চাচা শামসুল হকের সঙ্গে চলে যান পূর্ব গঙ্গবর্দিতে, এক আত্মীয়ের বাড়িতে।

এরপর কী ঘটল? সে ইতিহাস শুনি তার জবানিতে।

হাফিজুলের ভাষায়–“উই আর মোটিভেটেট বাই আওয়ার লিডারস। বঙ্গবন্ধুর ভাষণও অনুপ্রাণিত করেছে প্রবলভাবে। তাই যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। হায়ার ট্রেনিং করি বিহার চাকুলিয়ায়। আমরা ছিলাম থার্ড ব্যাচে। ত্রিশ দিনের ট্রেনিংয়ে শিখি এসএলআর, থ্রি নট থ্রি, এসএমসি, এলএমজি, পিস্তল, গ্রেনেড, টুইঞ্চ মর্টার, প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ, অ্যান্টিপারসনাল মাইন, জামপিং মাইন, অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মাইন প্রভৃতি। ‘দাউ কেলি রেডি’ নামক একটি ট্রেনিং হয়। খালি হাতে শত্রুকে পরাস্ত করার কৌশল শেখায় সেখানে। শেষের দিকে চলে নাইট প্যারেড। অন্ধকার রাতে পথ চলে কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে, সেটাও শিখি। ট্রেনিং করান হবিলদার সুকুমার ও হযরত আলী নামের এক কাশ্মীরি।

ট্রেনিং শেষে আমাদের পাঠানো হয় কল্যাণীতে। এরপর বয়রা বর্ডারের দত্তবলিয়া থেকে অস্ত্র দিয়ে পাঠানো হয় শিকারপুরে। ১৪ জনের গ্রুপে কমান্ডার ছিলেন মোকাররম ভাই, টোয়াইসি আবুল ফয়েজ। সহযোদ্ধা ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক, শহিদুল ইসলাম, জুরমত আলী, মতিন, খানে মাহবুব খোদা, হায়দার আলী মোল্লা, খলিলুর রহমান, পরশ ও সুবোধ প্রমুখ। আমরা যুদ্ধ করি ৮ নম্বর সেক্টরের লোহাগড়া, রাজবাড়ি, চৌগাছি, ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা প্রভৃতি এলাকায়।”

মুক্তিযুদ্ধে কয়েকটি অপারেশনের কথা এই যোদ্ধা তুলে ধরেন ঠিক এভাবে–“আমরা কুষ্টিয়ার শিকারপুর হয়ে ঢুকি। সুবেদার মোসলে উদ্দিনের ক্যাম্পে থাকতাম। ইন্ডিয়ান বিওপি ওটা। ইপিআররাও ছিল। আগস্টের শেষ দিকের ঘটনা। ভেড়ামারা হাইস্কুলে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। ওখানে অ্যাটাক করতে হবে।

আগেই রেকি করা হয়। আমি, হায়দার, মতিন, শহিদসহ মোট ত্রিশজন। কমান্ডে ইপিআররের তোফায়েল। হেঁটে রওনা হই। তালতলী খাল পার হয়ে এসে দেখি পাকিস্তানিদের ক্যাম্প নেই। ঘটনা কী? রেকির পরপরই ওরা ক্যাম্প সরিয়ে ফেলেছে। ভোরে নিজেদের ক্যাম্পে ফিরি। অবাক হলাম। আমাদের ক্যাম্পেও কেউ নেই। কয়েকজন ছিল। তাদেরও ধরে নিয়ে গেছে পাকিস্তানি আর্মিরা। এরপর মিরপুর থেকে ওরা শেলিং শুরু করে। ফলে শিকারপুর ক্যাম্পেই আমাদের ১৮-১৯ জন সহযোদ্ধা শহীদ হন। এরপরই ক্যাম্প সরিয়ে ফেলা হয়।

এরপর দত্তবলিয়ার বয়রা বর্ডার দিয়ে লোহাগড়া থানার ইটনায় আসি। রাতুল হাটে ছিল রাজাকারদের ঘাঁটি। অস্ত্র নিয়ে ওরা হাট পাহারা দিত আর লুটপাট করত। বিকেলে দেখি হাটের দোকানগুলো থেকে টাকা তুলছে। আমরা ওদের ধরে ওড়াকান্দি ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিই।

রোজার আগে ফরিদপুর রাজবাড়ির রেললাইন ওড়াতাম। এরপর ইলেট্রিক পোলও ওড়ানো শুরু করি। রাজাপুর ব্রিজে রাজাকারদের ক্যাম্পও দখলে নিই। অতঃপর প্ল্যান হয় ফরিদপুর টাউন অ্যাটাকের।

ফরিদপুর শহরের টেপাখোলায় বিহারীদের সহযোগিতায় পাক আর্মিরা থাকত। পাকিস্তানি প্যারা মিলিটারি ট্রুপ ছিল ওখানে। ঈদের দিন ওখানে কাওয়ালি হবে। এ খবর পাই আমরা। পরিকল্পনা হয়, আমি আর হায়দার গ্রেনেড থ্রো করব কাওয়ালির আসরে। মিরোজ আর কাশেম বোমা মারবে ফরিদপুর সিনেমা হলে। আমার মাথায় টুপি, পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবি, পায়ে স্যান্ডেল। হায়দারসহ আসি সাইকেলে। পকেটে ২টা করে গ্রেনেড। আমার কাছে একটা পিস্তলও। সন্ধ্যা হয় হয়। আমরা একটা গ্রেনেড মেরেই সরে পড়ি। বিকট শব্দে সেটা বিষ্ফোরিত হয়। তারপর দ্রুত সরে গিয়ে এক বাড়িতে আশ্রয় নিই। ওই বাড়ির লোকেরা মেয়েদের থাকার রুমে আমাদের লুকিয়ে রাখে। তখন খুঁজতে আসে রাজাকাররা। আইয়ুব নামে এক রাজাকার আমাদের পিছুও নেয়। কিন্তু মধ্যরাতে লুকিয়ে আমরা ক্যাম্পে ফিরে আসি। স্বাধীন বাংলা বেতারে ওই অপারেশনটির কথা শোনানো হয়েছিল। একাত্তরে সাধারণ মানুষ গেরিলাদের পাশে ছিল। ঘরে ভালো খাবার নাই, আছে শুধু ভাত আর ডাল। নিজে না খেয়ে তাই আমাদের খাইয়েছে ওরা। আমাদের কাছে ওটাই অমৃতের মতো মনে হয়েছে।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের কথা। ৮ নম্বর হেডকোয়ার্টার তখন ব্যারাকপুরে। মেজর এম আবুল মঞ্জুর স্যার সেক্টর কমান্ডার। উনি নির্দেশ দিলেন তোমরা অ্যাডভান্স টিমের সাথে জয়েন করো, বানপুরে। আমরা তাই করি।

আনুমানিক ৪ ডিসেম্বরের ঘটনা হবে। বানপুর বর্ডার থেকে মুভ করে চৌগাছির কাছাকাছি আমরা। সবার প্রথমে এফ এফ, পরে বাঙালি আর্মি ও ইপিআররা, এরপর ইন্ডিয়ান আর্মিরা আরবান ফ্রেইকেলে। সাঁজোয়া ওই যানটির নাম ছিল তুফান। ওটাতে কামান লাগানো। প্রতিটি গাড়িতে ইন্ডিয়ান ফ্ল্যাগ লাগনো। এভাবেই সামনে এগোচ্ছি। তুমুল সম্মুখযুদ্ধ চলছে। এক রাতে মঞ্জুর স্যার ডাকলেন।

বললেন–‘ফরম টুমোরো নো ফাইটিং’।

কেন স্যার?

তার অকপটে উত্তর–“‘উই আর নট ফাইটিং ফর ইন্ডিয়ান ফ্ল্যাগ।’ আমরাও বিষয়টিকে ভালোভাবে নেইনি। তাই সবাই একমত হলাম। ফলে দুই দিন ফাইটে যাইনি।

কিন্তু সামনে থাকা অনেক মুক্তিযোদ্ধাই এ খবর পায়নি। তারা অ্যাডভান্স করতে গেলে বহু হতাহত হয়। এরপরই ইন্ডিয়া সরকার স্বীকৃতি দেয়। তখন আমরা বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে আর জাতীয় সংগীত গেয়ে রণাঙ্গনে মার্চ করা শুরু করি। এ ইতিহাস তো কেউ লিখে নাই ভাই। এভাবে আমরা পৌঁছি যশোর ক্যান্টনমেন্টে।

অনেকেই মেজর মঞ্জুর সমালোচনা করেন। যারা বলেন তারা ভুল জানেন। একাত্তরে ওনার মতো দেশপ্রেমিক লোক আমরা দেখিনি। স্যালুট করি তাকে। রণাঙ্গনে নিজেদের পতাকা প্রতিষ্ঠার জন্য একাত্তরে আমরা যুদ্ধ করেছি। ভারত সহযোগিতা করেছে। আমরা তা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণও করি। কিন্তু এখনো ভারতীয় নানা চলচ্চিত্রে যখন মুক্তিযুদ্ধকে ভুলভাবে দেখানো হয়, তখন খুব খারাপ লাগে ভাই। এসবের প্রতিবাদও হওয়া উচিত। একাত্তরের যুদ্ধটা আমাদের ছিল, ভারতের নয়।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কয়েক প্রজন্মকে ভুল ইতিহাস শেখানো হয়েছে। তাই সরকারিভাবে তৃণমূলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো প্রয়োজন বলেন মনে করেন এই সূর্যসন্তান। তিনি বলেন–“১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া, জয় বাংলা বলা, স্বাধীনতার ইতিহাস চর্চা করা ছিল শাসকদের দৃষ্টিতে খারাপ কাজ। এটাই শিখেছে কয়েক প্রজন্ম। বিরাট জেনারেশন গ্যাপ হয়ে আছে। এটার জন্য সরকারকেই তৃণমূলে ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে হবে। তা না হলে প্রজন্ম কিন্তু ভুল পথে যাবে।”

রাজনীতিতে দুর্নীতিবাজদের ধরার পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মোটিভেশনও দরকার বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুল হক। শুধু আইন দিয়েই নয়। মনের দিক থেকেও রাজনীতিবিদরা যেন সৎ থাকতে চান, সেই পরিস্থিতিও তৈরি করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে সারা দেশে লাখো বিলবোর্ড আর তোরণ তৈরি করে শুভেচ্ছা জানানোর রীতি চালু আছে। এটা বন্ধ করা খুব প্রয়োজন। এই সব তোরণ বানানোর টাকা কোথা থেকে আসে? তৃণমূলে নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি করেন আর মানুষ গালি দেয় সরকার আর শেখ হাসিনাকে। এসব কাজের দায় কেন বঙ্গবন্ধুকন্যা নেবেন। তাই রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোর বিষয়েও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়াও প্রয়োজন বলে মত দেন এই যোদ্ধা।

পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি অগাধ বিশ্বাস বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুল হকের। তাই তাদের উদ্দেশেই তিনি বললেন শেষ কথাগুলো–“সত্যিকার অর্থে দেশকে ভালোবাসতে হলে সৎ হতে হবে, কমিটেড থাকতে হবে, নিজের দেশের ইতিহাস জানতে হবে। একাত্তরের বীরত্বের ইতিহাসই তোমাদের পথ দেখাবে। তোমরা সে পথেই দেশকে এগিয়ে নিও।”

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ প্রকাশে, প্রকাশকাল: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১

একাত্তরকে জানতে যুক্ত থাকুন ইউটিউব চ্যানেলটিতে: সালেকখোকন

© 2021, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button