মুক্তিযুদ্ধ

মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র নৌ-কমান্ডোরাই ছিলেন সুইসাইডাল স্কোয়াড

“খেলোয়াড় ছিলাম ছোটবেলা থেকেই। দূরের গ্রামে হায়ারেও খেলতে যেতাম। ফুটবল, সাঁতার, ভলিবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকস, বর্শা নিক্ষেপ প্রভৃতি খেলেছি। ক্রিকেট টিমে ছিলাম ফাস্ট বোলার, ফুটবলে ডিফেন্সে খেলতাম আর সাঁতারে ঢাকা ডিভিশনে সার্টিফিকেটও পেয়েছি। ১৯৬৬ সাল থেকে জোনাল স্পোর্টসে অ্যাটেন্ড করি। পরের বছর থেকেই খেলাগুলোতে প্লেস করতে থাকি। রাজনীতি অত বুঝতাম না। গ্রামেই থাকতাম, খেলা নিয়েই পড়ে থাকতাম।

বড় ভাই মুসলেম উদ্দিনের মুখে শুনতাম দেশ নিয়ে নানা বৈষম্যের কথা। ওইসময় তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাস করে চাকরির জন্য ঘুরছেন। প্রত্যেক মাসেই ইন্টারভিউ দিতেন। কিন্তু চাকরি হতো না। কেন? কারণ বাঙালিদের সুযোগ ছিল কম।

এছাড়া এদেশে যা উৎপন্ন হতো তা নিয়ে যেত পশ্চিম পাকিস্তান। উন্নতিটা সেখানেই হতো বেশি। পূর্ব পাকিস্তানে গরীব আরও গরীব হতে থাকে। পাকিস্তান আমলে অভাবও ছিল খুব। এ কারণেই ছাত্ররা প্রতিবাদ ও সংগ্রাম করত। বড় ভাই ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তার কাছ থেকেই পেতাম দেশের নানা খবরাখবর। তখনই মনে হয়েছে দেশটা স্বাধীন হওয়া দরকার।

বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেন সাত মার্চ। আমরা ভাষণ শুনি একদিন পর, রেডিওতে। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।… মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো…।’ তখনই বুঝে যাই রক্ত ছাড়া স্বাধীনতা মিলবে না। কিন্তু দেশে কী ঘটবে তখনও জানি না!”

একাত্তর পূর্ববর্তী ঘটনাগুলো এভাবেই তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো মো. মতিউর রহমান (বীরপ্রতীক)। এক সকালে তার বাড়িতে বসেই আলাপ হয়। আলাপচারিতায় উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের অজানা সব ঘটনা।

তার বাবা আব্দুল আলী ছিলেন কাপড়ের ব্যবসায়ী আর মা জোলখা বেগম গৃহিণী। ৫ ভাই ২ বোনের সংসারে মতিউর তৃতীয়। বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার সাতঘড়িয়া গ্রামে। তার লেখাপড়ার শুরুটা শিমুলিয়া হাই স্কুলে। অতঃপর ভর্তি হন ব্রাহ্মণগাও হাইস্কুলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ওই স্কুলেরই দশম শ্রেণির ছাত্র।

২৫ মার্চের পর দেশের অবস্থা বদলে যেতে থাকে। মতিউর খেলতে গেলে প্রায়ই গ্রামের মাঠে বোম্বিং হতো। ভয়ে সবাই পালাত তখন। পাকিস্তানি আর্মিদের অত্যাচারের খবর তার কিশোর মনকে নাড়া দিত। একসময় ঠিক থাকতে পারেন না মতিউর। নূর ইসলাম, শহিদ, কাউসার ফরাজীর সাথে যুদ্ধে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।

কোথায় গেলেন?

মতিউরের ভাষায়, ‘মে মাসের শেষের দিকে এক দুপুরে খেলার কথা বলে বের হই। পাশের গ্রামের শহিদুল ইসলাম ছিল পথপ্রদর্শক। ভারতে যাওয়ার পথ চিনত সে। ফরিদপুর দিয়ে যশোর হয়ে ভারতের চব্বিশ পরগনায় যাব। কিন্তু বাগদা বর্ডার পার হওয়ার আগেই সঙ্গের দুই বন্ধু মত পাল্টাল। তারা বাড়িতে ফেরত গেল। আবার একজন ভারতে গিয়ে আর ট্রেনিংয়ে যেতে চাইল না। তখন আমি একা। কিন্তু সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। লোকমুখে ঠিকানা জেনে বাসে উঠে বসি। কিন্তু পকেটে কোনো টাকা নেই। ভাড়া দিতে না পারায় মাঝপথেই নেমে যেতে হয়। পরে হেঁটেই চলে যাই বনগাঁ, টালিখোলা ক্যাম্পে। সেখানে বিকেলের দিকে লাইনে দাঁড়াতেই নিয়ে নিল। প্রায় দুই সপ্তাহ লেফট-রাইট আর ক্রলিং করানো হয় ওই ক্যাম্পে।’

নৌ-কমান্ডো ট্রেনিং কি ওই ক্যাম্পেই হয়েছিল?

‘না, টালিখোলা ক্যাম্পে একদিন আসেন ওসমানী সাহেব। সঙ্গে ছিলেন ইন্ডিয়ান নেভির প্রধান। একাত্তরে আটজন বাঙালি সাবমেরিনার জাহাজ আনতে গিয়েছিলেন ফ্রান্সে। তারা ওখান থেকে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে পালিয়ে চলে আসেন ইন্ডিয়ায়। তারাও ওইদিন ওসমানী সাহেবের সঙ্গে আসেন। প্রথমে সকলকে ফলিং করানো হয়। পরে বাছাই করা হয় ৬০ জনকে। মেডিকেল টেস্টের পর বাতিল হয় বিশজন। আমিসহ চল্লিশজনকে বলা হলো, একটা গ্রুপ করা হবে যারা অপারেশনে গেলে মরতেও হতে পারে। শুনে আমরা রাজি হয়ে যাই, মরতে হলে দেশের জন্য মরমু।

মতিউর রহমানের বীরপ্রতীক সনদ

আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদে, ভাগিরথী নদীর পাড়ে। ওটা ছিল পলাশীর প্রান্তর। বিভিন্ন ক্যাম্প থেকেও বাছাই করে আনা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র নৌ-কমান্ডোরাই ছিল সুইসাইডাল স্কোয়াড। তাই ট্রেনিংয়ের শুরুতেই একটা ফর্মে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ইন্ডিয়ান নেভির অফিসাররা আমাদের ট্রেনিং করান।

প্রথম দিকে প্রত্যেককে পায়ে ফিন্স পরে চিৎসাঁতারের অভ্যাস করায়। বুকে গামছা দিয়ে ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের মাটির টিবি বা ইট বেঁধে নদীতে চিৎসাঁতার করানো হতো। সবচেয়ে কঠিন ছিল ডুব দিয়ে পানির নিচে লোহার প্লেটের গায়ে মাইন লাগিয়ে নির্দিষ্ঠ সময়ের মধ্যে সাঁতার কেটে ফেরত আসা। এছাড়া কেউ মারতে আসলে তাকে প্রতিহত করার যুদ্ধও শেখানো হয়। প্রতিদিন প্রায় ১৭-১৮ ঘন্টা প্রশিক্ষণ হতো। আমার নৌ-কমান্ডো নম্বর ছিল ৪৪। বিশেষ এই নৌ-কমান্ডো ট্রেনিং চলে প্রায় আড়াই মাস।’

নৌ-কমান্ডোরা ছিলেন দশ নম্বর সেক্টরের অধীনে। কোনো সেক্টর কমান্ডার ছিল না এই সেক্টরে। প্রধান সেনাপতি কর্নেল এমএজি ওসমানী এই সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করতেন। অপারেশনের জন্য যখন নৌ-কমান্ডোদের বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো হতো তখন তারা ওই সেক্টরের অধীনেই কাজ করতেন। অপারেশন শেষে আবার ১০ নম্বর সেক্টরের অধীনে চলে আসতেন নৌ-কমান্ডোরা।

নৌ-কমান্ডো ট্রেনিং শেষেই অপারেশন জ্যাকপটের পরিকল্পনা করা হয়। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরসহ দাউদকান্দি ফেরিঘাটে নৌ-অ্যাটাকের পরিকল্পনা এটি। ১৬০ জন নৌ-কমান্ডোকে কয়েকটি দলে ভাগ করা হয় প্রথমে। যেমন– চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর অ্যাটাকের জন্য সাবমেরিনার আবদুল ওয়াহিদের নেতৃত্বে ৬০ জন নৌ-কমান্ডো, মংলা বন্দরের জন্য সাবমেরিনার আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে ৬০ জন, চাঁদপুর নদীবন্দরের জন্য সাবমেরিনার বদিউল আলমের নেতৃত্বে ২০ জন এবং নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরসহ দাউদকান্দি ফেরিঘাটের জন্য সাবমেরিনার আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে ২০ জন নৌ-কমান্ডোকে পাঠানো হয়। মতিউর রহমান ছিলেন নারায়ণগঞ্জের গ্রুপটিতে।

অপারেশন জ্যাকপট অ্যাটাকটি কীভাবে করলেন?

বীরপ্রতীক মতিউরের ভাষায়, ‘ট্রেনিংয়ের পর আমাদের পাঠানো হয় আগরতলায়, নিউ ট্রানজিট ক্যাম্পে। সেখানে প্রত্যেককে দেওয়া হয় একটি লিমপেট মাইন, ফিন্স, সুইমিং কস্টিউম, নাইফ, কাঁধে ঝোলানোর চটের ব্যাগ, কিছু কাপড়-চোপড়, বন্দরের ম্যাপ এবং জোয়ার-ভাটার চার্ট প্রভৃতি। প্রত্যেক গ্রুপকে একটি রেডিও দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের গ্রুপে সাবমেরিনার আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা ছিলাম ২০ জন। বর্ডার পার হলে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা পথ দেখিয়ে নিরাপত্তা দিয়ে আমাদের গন্তব্যে নিয়ে আসে। নারায়ণগঞ্জে মুসার চরে আমরা আত্মগোপন করে থাকি। নদীবন্দর থেকে সেটি ছিল প্রায় এক মাইল দূরে।

লিমপেট মাইন গাছমা দিয়ে বুকে বেঁধে জাহাজে লাগাতে হবে, বড় জাহাজে তিনটা আর ছোট হলে দুইটা মাইনই যথেষ্ট, ডুব দিয়ে আগে দেখতে হবে জাহাজের গায়ে শ্যাওলা আছে কিনা, থাকলে জায়গাটা পরিষ্কার করে মাইন ফিট করতে হবে, নোঙর করা আর্মস ও গোলাবারুদপূর্ণ পাকিস্তানি জাহাজই টার্গেট, বিস্ফোরণ করে দ্রুত ফিরে যেতে হবে ট্রানজিট ক্যাম্পে– এমন নির্দেশনাই দেওয়া ছিল অপারেশন জ্যাকপটের নৌ-কমান্ডোদের।

আরও নির্দেশ ছিল ভারত থেকে সিগন্যাল আসবে রেডিওতে গানের মাধ্যমে। নির্ধারিত প্রথম গানটি বাজে ১৯৭১ সালের ১৩ অগাস্ট সকালে। আমরা তখন রেকি করতে বের হই। আদমজী জুটমিলের মসজিদের উঁচু মিনারে উঠে বন্দরে আর্মিদের পজিশন, জাহাজের পজিশন দেখে কমান্ডারকে গিয়ে বলি। রেডিওতে প্রথম গানটি শোনানোর ২৪ ঘন্টা পর দ্বিতীয় গানটি বাজবে এবং ওইদিন রাতেই আক্রমণ করতে হবে। এমনটাই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু দ্বিতীয় গানটি শোনানো হয় একদিন পর অর্থাৎ ১৫ অগাস্ট তারিখ সকালে। ফলে ওইদিন রাতেই নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে অপারেশনের প্রস্তুতি নিই আমরা।

আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে অপারেশনে আমি ছাড়াও অংশ নেন আবদুর রহিম, হেদায়েত উল্লাহ, আজহার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, হাবিবুল হক, মাহবুব আহমেদ মিলন, জিএম আইয়ুব, আবদুল মালেক, আবদুল জলিল, ফজলুল হক ভুঞা প্রমুখ।

আমার কাজ ছিল এক্সপ্লোসিভ দিয়ে নদীবন্দরের টার্মিনাল উড়িয়ে দেওয়া। যাতে অন্য কোনো জাহাজ ভিড়তে না পারে। এক্সপ্লোসিভ লাগিয়ে দ্রুত সরে আসি। সঙ্গের তিনজন একটি পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজের গায়ে মাইন ফিট করে চলে আসে। নির্ধারিত সময় পর জাহাজ ও টার্মিনালে বিস্ফোরণ ঘটে। পাকিস্তানি আর্মিরা তখন এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। দূর থেকে আমরা বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনি। অন্যরকম আনন্দ লেগেছিল তখন। এরপরই দ্রুত ফিরে যাই আগরতলায়, নিউ ট্রানজিট ক্যাম্পে। অপারেশন জ্যাকপটের পর আমাদের দ্বিতীয় অপারেশন ছিল কাঁচপুর ফেরিঘাটে জাহাজ ও ফেরি ডুবিয়ে দেওয়া। সেটিতেও সফল হই। তৃতীয় নৌ-অ্যাটাক করি কলাগাইছায়, পাকিস্তানি জাহাজে।’

একবার রেকি করতে গিয়ে ধরা পড়ার উপক্রম হয় বীরপ্রতীক মতিউরের।

কী ঘটেছিল সেদিন?

তিনি বলেন, ‘লুঙ্গি আর শার্ট পরে রেকি করতে যাই কাঁচপুরে। তখন ওখানে ফেরি দিয়ে গাড়িগুলো পারাপার হতো। পাকিস্তান আর্মিদের একটা ক্যাম্পও ছিল। আমাকে দেখেই ওদের সন্দেহ হয়। ফলো করতে থাকে। ওদের দেখে আমিও দ্রুত নদীর ধারে একটি টঙ হোটেলের পেছনে গিয়ে লুকাই। হোটেলের থালাবাসন ধুতে থাকি। যাতে কেউ চিনতে না পারে। আর্মিরা হোটেলে ঢুকেই বলে– ‘ইধার মুক্তি হ্যায়? ম্যানেজার না বলতেই আশপাশ চেক করে ওরা। কিন্তু আমায় চিনতে পারে না। ফলে প্রাণে বেঁচে যাই। একাত্তরে ধরা পরার এমন ঝুঁকি ছিল সবসময়।’

সাধারণ মানুষের অপরিসীম সাহায্য পেয়েছিলেন নৌ-কমান্ডোরা। তারা খাবার ও থাকার জায়গা দিয়ে পাশে থাকতেন। সোর্সও ছিল গ্রামের সাধারণ মানুষ। ঘাটে পাকিস্তানিদের বড় জাহাজ এলেই তারা মতিউরদের কাছে খবর পৌঁছে দিতেন।

দেশ যখন স্বাধীন হয় মতিউর তখন নারায়ণগঞ্জে। তারা ঢাকায় আসার সময় পথে পথে দেখেন মানুষের লাশ। ডিসেম্বরের শেষের দিকে তিনি ফিরেন যান নিজ গ্রামে, মায়ের কাছে।

একাত্তরে তার মায়ের যুদ্ধটা কেমন ছিল?

তার ভাষায়, ‘সাত মাস বাড়ির সাথে যোগাযোগ ছিল না আমার। ফিরে এসে দেখি আমার চিন্তায় মায়ের ব্রেন আউট, পাগল হয়ে গেছেন তিনি। শুকায়া তার শরীরের বেহাল দশা। আমাকে পেয়ে মায়ের সে কি কান্না! মা মানত করেছিলেন ছেলে ফিরে আসলে গরু জবাই করে মানুষ খাওয়াবেন। ফিরে আসার আনন্দে তাই করেন তিনি।’

বর্তমান সরকারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে এবং দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন বীরপ্রতীক মতিউর রহমান। শেখ হাসিনা সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেয় এবং মূল্যায়ন করে। তাই তিনি সরকারকে ধন্যবাদও জানান। বলেন, ‘এই সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সরকার। স্বাধীনের পর রাজাকাররা পালিয়ে ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান রাজাকার ও আলবদরদের নিয়েই সরকার গঠন করে। তখন আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতেও ভয় পেতাম। তাই আমার মতে, জিয়াউর রহমানের সরকার রাজাকারের সরকার, স্বাধীনতাবিরোধীদের সরকার।’

তরুণ ও যুবকদের খেলাধুলায় যুক্ত রাখা জরুরী বলে মনে করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো মতিউর রহমান। তার ভাষায়, ‘এখন তো যুবকরা খেলাধুলা করতেই চায় না। এটা অনেক বড় ক্ষতি ডেকে আনবে। আপনি যদি রাত দুইটা পর্যন্ত মোবাইল টিপেন, ব্রেনের কিছু থাকবে? এখন আড্ডায় কেউ কারো সাথে কথা কয় না, খালি মোবাইল টিপে। এসব করেই তো তাদের জীবন শেষ। প্রজন্মকে খেলাধুলার প্রতি উৎসাহিত ও নিয়োজিত করা প্রয়োজন। বড় কিছু করতে হলে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। তাই খেলাধুলা করে শরীরের ঘামও ঝরাতে হবে।’

প্রজন্মের উদ্দেশেই নৌ-কমান্ডো মো. মতিউর রহমান (বীরপ্রতীক) বললেন শেষ কথাগুলো। তার ভাষায়, ‘মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে বসে থাকলে কি দেশ স্বাধীন হতো? মরার চিন্তায় যদি যুদ্ধে না যেতাম তাহলে কি স্বাধীনতা আসত? তোমরাও স্বপ্নটাকে বড় করো। অলস হইও না, সবসময় চেষ্টা করে যাও। দেশের ও নিজের জন্য কাজ করো। কাজই তোমাকে এগিয়ে নেবে।’

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নৌ-কমান্ডো মো. মতিউর রহমান (বীরপ্রতীক), ছবি: সালেক খোকন

সংক্ষিপ্ত তথ্য

নাম: বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো মো. মতিউর রহমান (বীরপ্রতীক)।

ট্রেনিং: ভারতের মুর্শিদাবাদে ভাগিরথী নদীর পাড়ে আড়াই মাস নৌ-কমান্ডো ট্রেনিং নেন। নৌ-কমান্ডো নম্বর ছিল ৪৪।

মুক্তিযুদ্ধ করেছেন: অপারেশন জ্যাকপটের আওতায় সাবমেরিনার আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে পাকিস্তানি সেনাদের জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়াসহ কাঁচপুর ফেরিঘাটে জাহাজ ও ফেরি এবং নারায়ণগঞ্জের কলাগাইছায় জাহাজে মাইনের বিস্ফোরণ ঘটান।

লেখাটি প্রকাশিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ১৩ অক্টোবর ২০২১

© 2021, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button