আদিবাসী

পন্ডিতির জারিজুরি জড়ানো বিরক্তিকর প্রবন্ধ নয় এটি

বার্তানেট২৪.কম

যেভাবে  বইটি লিখা শুরু;

সরকারি চাকরিতে বদলির ধাক্কা লাগে প্রায়ই। নাচোল থেকে হালুয়াঘাট, সেখান থেকে এসেছি দিনাজপুরে। মাঝে মাঝে যেতে হয়েছে নেত্রকোনার প্রত্যন্ত দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে। এ অঞ্চলগুলোতে পাড়াভেদে বাস করে তুরি, মুশহর, মাহালি, ভুনজার, সাঁওতাল, মুন্ডা, কড়া, গারো এবং ওঁরাও সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে জানাশোনা হয় তাঁদের সঙ্গে।
বছর চারেক আগের কথা। একদিন দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী এক আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে বেশ অবাক হই। পূর্বপুরুষদের জাতধর্ম বুকে নিয়ে সেখানে কোনরকম টিকে আছে একটি সম্প্রদায়। আদিবাসী এ সম্প্রদায়টির নাম কড়া। খোঁজ নিয়ে জানলাম এদেশে এটিই কড়াদের একমাত্র পাড়া। টিকে আছে মাত্র ১৯টি পরিবার। ভাবা যায়, এ দেশ থেকে নিঃশব্দে হারিয়ে যাচ্ছে একটি জাতি। হারিয়ে যাচ্ছে একটি ভাষা, সংস্কৃতি আর জাতির আচার-অনুষ্ঠানগুলো। মূলত কড়াদের দলবদ্ধতা, সততা, পরিশ্রম আর সরলতায় আমি মুগ্ধ হই। কড়াদের টিকিয়ে রাখতেই আদিবাসী বিষয়ে কলম ধরা শুরু।

যেভাবে বইটি লিখা;

দিনের পর দিন আদিবাসী পাড়া ঘুরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তুলে এনেছি তাঁদের পূজাপার্বণ, জীবনযাপন, ধাঁধা, লোককাহিনী, রূপকথা আর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির নানা বিষয়। বইটিতে যুক্ত করেছি নিজের তোলা আদিবাসীদের নানা আলোকচিত্র।

 বইটি আপনি কেন পড়বেন?

আদিবাসীদের কথা উঠলেই আমাদের দৃষ্টি চলে যায় পাহাড়ের দিকে। কিন্তু সমতলের আদিবাসীদের খবর আমরা কতটুকুইবা রাখি। দিনের পর দিন খুব কাছ থেকে দেখছি তুরি, মুশহর, মাহালি, ভুনজার, সাঁওতাল, মুন্ডা, কড়া, গারো এবং ওঁরাও সম্প্রদায়ের আদিবাসীদের পূজাপার্বণ, জীবনযাপন, গোত্র পরিচালনা, প্রতিবাদ আর বিশ্বাসের নানা লোকাচার। দেখেছি; এ আমলেও অভাবের সময়টাতে কীভাবে আদিবাসীরা আগাম শ্রম বিক্রি করে মহাজনদের কাছে। জাতধর্ম নিয়ে আঁকড়ে থাকা আদিবাসীরা কীভাবে শোষিত হচ্ছে ধর্মান্তরিত আদিবাসীদের দ্বারা, কী করে ভারতীয় বাজারি সংস্কৃতি ঢুকে যাচ্ছে আদিবাসী উৎসব আর সংস্কৃতির মাঝে, এরই পাশে বাংলাভাষার জাঁতাকলে আদিবাসীরা হারিয়ে ফেলছে নিজের মায়ের ভাষাটিকে। হাজার হাজার বছর ধরে যেসব বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি প্রচলিত ছিল আদিবাসী সমাজে, দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলোও। হারিয়ে যাচ্ছে তাঁদের চিরচেনা বিশ্বাস বা লোককথা বা সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান। আদিবাসী পাড়া ঘুরে যা দেখেছি, যা জেনেছি তাই লেখার মাধ্যমে ও আলোকচিত্রে তুলে আনার চেষ্টা করেছি।

বইটি আদিবাসী বিষয়ে বাজারে থাকা অন্য বইগুলোর মতো নয়, লিখন পদ্ধতির দিক থেকে। পন্ডিতির জারিজুরি জড়ানো বিরক্তিকর প্রবন্ধ নয়। বইটিতে সরল গদ্যে কখনো গল্পের ছলে, কখনো বা প্রতিবেদন হিসেবে আর কখনো বা নিরেট বর্ণনায় তুলে ধরা হয়েছে আদিবাসীদের নানা বিষয়। যা আপনি অনায়াসে উপভোগ করবেন।

সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে আদিবাসী সালেক খোকন
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১২
প্রচ্ছদ: নিয়াজ চৌধুরি তুলি
বোর্ড বাঁধাই। অফসেট কাগজ
১৫৯ পৃষ্ঠা। ২০০ টাকা

আইএসবিএন: 984-70289-0233-3

লিখাটি বার্তানেট২৪.কমের সংবাদ থেকে সংগ্রহীত

© 2012 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button