কীর্তিমান বাঙালি

দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী সমাজে তিনি ছিলেন অগ্রগন্য

জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা একজন বুদ্ধিজীবি ও শিক্ষাবিদ।  তিনি ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীদের একজন। জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার জন্ম তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের (বর্তমানের বাংলাদেশ) ময়মনসিংহ জেলায়। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বানারীপাড়ায়। তাঁর বাবার নাম কুমুদচন্দ্র গুহঠাকুরতা,  তিনি ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক।

১৯৩৬ সালে ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আই.এসসি. কোর্সে ভর্তি হন। এক বছর সেখানে পড়াশোনা করার পর  টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন এবং ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে আই.এ.-তে ভর্তি হন। তিনি ১৯৩৯ সালে আই.এ. পাশ করেন এবং ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৪২ সালে তিনি বি.এ. (সম্মান) বা স্নাতক, এবং ১৯৪৩ সালে এম.এ. (মাস্টার্স) বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা এম.এ. পাশ করার পরপরই ১৯৪৩ সালে গুরুদয়াল কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের লেকচারার পদে তিনি যোগ দেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষক হিসেবে ফেলোশিপ নিয়ে তিনি লন্ডন গমন করেন এবং ১৯৬৭ সালে লন্ডন কিংস কলেজ থেকে পি.এইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার পদে উন্নীত হন।

জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা মানবেন্দ্রনাথ রায়ের রেডিকেল হিউম্যানিজম মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য, রাজনীতি ও সমাজচিন্তামূলক অনেক প্রবন্ধ লেখেন। দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী সমাজে তিনি ছিলেন অগ্রগন্য। সুইনবার্ণ, স্টার্জ মূর অ্যান্ড এলিয়ট নামের যে অভিসন্দর্ভ তিনি পি.এইচ.ডি-র জন্য লেখেন, তা ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক অবস্থায় কর্মরত থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার সময় তিনি জগন্নাথ হলে আবাসিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন। সেদিন তিনি পাকিস্তানী বাহিনীর দ্বারা গুলিবিদ্ধ ও আহত হন, এবং চারদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩০ মার্চ, ১৯৭১-এ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্য ও ছবি : সংগৃহীত

© 2012 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button