মুক্তিযুদ্ধ

বঙ্গবন্ধু গ্রেটেস্ট আর শেখ হাসিনা হলেন লেটেস্ট

সময়টা ১৯৬৬। তখন আমি নাইনের ছাত্র। শেখ মুজিব ঘুরছেন সারাদেশ। ছয় দফার দাবীগুলো গণমানুষের কাছে তুলে ধরছেন। তিনি আসবেন চট্টগ্রামেও। বক্তৃতা করবেন লালদীঘির মাঠে। খবরটি পেয়েই মনের ভেতর অন্যরকম উন্মাদনা জন্ম নেয়। বাঙালি জাতির মুক্তির কথা বলছেন যে নেতা, তাকেই দেখব সামনাসামনি। দেখতে হিরো, বক্তৃতায় সম্মোহনী– মানুষের মনের কথাই সেদিন উচ্চারিত হয়েছিল নেতার মুখ থেকে। সে থেকেই ‘শেখ মুজিব’ নামটি মনে গেথে গেছে।

ক্লাস টেনে যুক্ত হই ছাত্রলীগের সংগে। চট্টগ্রাম গভর্মেন্ট মুসলিম হাই স্কুলে স্কুল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। অতঃপর চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক হই ১৯৬৯ সালের শেষ দিকে।

এরপর আন্দোলন চলে এগার দফার। স্টেশন রোড, আন্দরকিল্লা, কোর্ট রোড প্রভৃতি এলাকায় চলত মিছিল-মিটিং। কন্ঠ আকাশে তুলে স্লোগান তুলতাম–‘তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা, মেঘনা, যমুনা’, ‘পাঞ্জাব না বাংলা/বাংলা, বাংলা’, ‘পিণ্ডি না ঢাকা ঢাকা, ঢাকা’, ‘আইয়ুব না মুজিব–মুজিব, মুজিব’ প্রভৃতি।

চট্টগ্রামে তখন মুসলিম লীগের প্রভাব ছিল বেশি। কিন্তু তাদের ভোট ছিল কম। তারা মানুষকে নানাভাবে ভয় দেখাত। পাকিস্তানের সাবেক স্পিকার ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। আওয়ামী লীগের অনেকের সঙ্গে তখনও তার সুসম্পর্ক ছিল। হিন্দুদের তিনি ডেকে নিয়ে বলতেন–‘ওয়ারা আরে ভোট দিবা না। তারা বলত, ‘হ’। তিনি বলেন–‘তইলে ভোট সেন্তারত ন জাইয়ু।’
সত্তরের নির্বাচনে জয় লাভের পরও ক্ষমতা পায় না আওয়ামী লীগ। চলে পাকিস্তানি নানা ষড়যন্ত্র। সারাদেশে শুরু হয় অসহোযোগ আন্দোলন। ১ মার্চ ১৯৭১। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন। সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের রাস্তায় নেমে আসে হাজারও মানুষ। সবাই জমায়েত হয় লালদীঘি ময়দানে। প্রতিবাদে ওইদিন আমরা পাকিস্তানের পতাকা পোড়াই, এম আর সিদ্দিকীর উপস্থিতিতে। পতাকায় আগুন ধরিয়ে দিই আমি, অমল মিত্র, এনামুল হক চৌধুরী, মো. ইউনুস ও সফর আলী। পতাকা পোড়ানোর ওই ছবিটা দেখলে আজও রক্ত টলমল করে।

মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ে চট্টগ্রামের আন্দোলন ও প্রতিবাদের কথাগুলো এভাবেই তুলে ধরছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শফিউল বশর ভান্ডারী। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ২০১১ সাল থেকে।

১ মার্চ ১৯৭১, চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ করেন শফিউল বশররা

চার ভাই ও দুই বোনের সংসারে শফিউল সবার বড়। বাবার নাম ফকীর আবদুল হাকিম ভূইয়া ও মা ফরিদুন্নেসা খানম। বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ভাগলপুর গ্রামে। তাঁর লেখাপড়ায় হাতেখড়ি চাদগাঁও প্রাইমারি স্কুলে। অতঃপর জামালকান্দি ওসমানি হাই স্কুলে তিনি ভর্তি হন ষষ্ট শ্রেণীতে। একসময় চলে যান চট্টগ্রামে, ফুপুর বাড়িতে। মেট্রিক পাশ করেন চট্টগ্রাম গভর্মেন্ট মুসলিম হাই স্কুল থেকে। এরপর ইন্টারমেডিয়েট পাশ করেন চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে, ১৯৭০ সালে। ওই কলেজেই তিনি ভর্তি হন ডিগ্রীতে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শফিউল ছিলেন ডিগ্রী ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র।

কথা ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি নানা বৈষম্য নিয়ে। তিনি বলেন–‘কাগজ তৈরি হতো কর্ণফুলী পেপার মিলে। অথচ সে কাগজই কিনতে হতো বেশি দামে। পাকিস্তানের নেভাল হেডকোয়ার্টার করাচি, আর্মি হেড কোয়ার্টার ইসলামাবাদে আর এয়ারফোর্সের হেডকোয়ার্টারও ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। জনগোষ্ঠীর ছাপ্পান্ন পারসেন্ট ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। অথচ সেখানেই শিল্প কারখানা ছিল সবচেয়ে কম। চট্টগ্রামে ব্যবসা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল অবাঙালিদের হাতে। দাউদ, দাদা, আদমজী, ইস্পাহানি, ভাওয়ানী, সাইরল, মোহাম্মদ আলী রেঙ্গুনওয়ালাসহ বাইশ পরিবার এদেশে থানা-বাটি-কম্বল নিয়ে এসে ওই আমলেই সম্পদের পাহাড় গড়েছিল। সারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের হাতেই।’

৭ মার্চের আগেই চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতারা সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে থাকে। আন্দরকিল্লায় ছিল বেশ কিছু বন্দুকের দোকান। আর্মি আর ইপিআররা সেখানকার অস্ত্রগুলো সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু তার আগেই শফিউল, অমল, ইউনুস, এনাম, আশরাফসহ কয়েকজন দোকানগুলো থেকে বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ তুলে নেয়।

কীভাবে?

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শফিউল বশরসহ (বাঁ পাশে নিচ থেকে দ্বিতীয়) চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতারা

শফিউল বলেন–‘চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণে ছিল জাকিরুল হক চৌধুরীর বাসা। পাকিস্তান আমলে উনি সাংসদ ছিলেন। গোপনে তার একটা উইলি জিপ দিয়ে সহযোগিতা করেন উনার এক ড্রাইভার। গাড়িটির নম্বর ছিল ১১৪০। ওই গাড়িতে বাক্স ভর্তি অস্ত্র আর গোলাবারুদ তুলে নিয়ে আমরা চলে যাই হাজারিলেনের ভেতর দিয়ে সোজা স্টেশনরোডের রেস্টহাউজে। পরে বেসরকারি লোক ও ছাত্রদের নিয়ে মহিউদ্দিন ভাই ‘জয়বাংলা’ বাহিনী গঠন করেন। যার প্রচার সম্পাদক ছিলাম আমি। এ বাহিনীর শত শত যুবকদের প্যারড করানো হয় লালদীঘির ময়দানে।’

এরপরই কি আপনারা মাঠে নেমে পড়েন?

‘না। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকি। ৭ মার্চ ১৯৭১। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন ঢাকায়। বঙ্গবন্ধু বললেন–‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ আমার কাছে ওটাই ছিল স্বাধীনতার সুস্পষ্ট কমান্ড।’ নেতার নির্দেশ মতো পাড়ায় পাড়ায় সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। এই কাজটির নেতৃত্ব দেন জহুর আহমেদ চৌধুরী, এম এ মান্নান, সিরাজুল হক মিয়া, আবু তালেফ চৌধুরী, কাদের মাস্টার প্রমুখ। উনাদের মিটিংয়ে মঞ্চের চারপাশ ঘিরে রেখে আমরা স্লোগান তুলতাম– ‘তোমার নেতা আমার নেতা–শেখ মুজিব, শেখ মুজিব।’

২৫ মার্চ ১৯৭১। গোটা দেশের প্রধান শহরগুলো পাকিস্তানি আর্মিরা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা আর্মি ও ইপিআর ব্যারাকে হামলা চালায় বাঙালি সদস্যদের ওপর। ফলে অনেকেই ব্যারাক থেকে অস্ত্র হাতে বেরিয়ে আসে। তখন নেতাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরেই নানা কাজে যুক্ত ছিলেন শফিউলরা। অন্যদিকে সীমান্তের বিওপিগুলোতে পাঞ্জাবি সদস্যদের নিধন করে ইপিআরের বাঙালি সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের দিকে চলে আসে। তাদের খাবার দিতে এগিয়ে যান মহিউদ্দিন চৌধুরী, মুসলেম উদ্দিন, ইউনুস প্রমুখ। কিন্তু ষোল শহরে এইট বেঙ্গল ক্যাম্পের দিকে আসতেই স্টেডিয়ামের পাশের ব্যারাকে থাকা নেভালরা তাদের বন্দী করে।

মুক্তিযোদ্ধা শফিউল বশরের ডান হাতের কনুইয়ে আঘাতের চিহ্ন

শফিউলরা তখন কর্ণফুলী পাড় হয়ে আনোয়ারা, পটিয়া দিয়ে নারায়ণ হাট হয়ে রামগড়ে পৌঁছে। সেখানে জেনারেল জিয়া ও শওকত আলীর নেতৃত্বে ভারতের বিএসএফ ক্যাম্প বাগাফায় তাদের ৭ দিনের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এলএমজি পর্যন্ত চালানো শেখায় সেখানে। অতঃপর আর্মিদের সাথেই নিয়মিত যুদ্ধে অংশ নেন তারা। কড়েরহাটে একটা ব্রিজ ড্যামেজ অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনারা তিনদিক থেকে তাদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। ফলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় সবাই।

আপনারা তখন কী করলেন?

‘ফেনী নদী পাড় হয়ে চলে যাই সাবরুম সাব ডিবিশনাল হেড কোয়ার্টারে। পরে হরিনা নামক জায়গায় একটা ক্যাম্প করে থাকি। বিএলএফ তখন গঠিত হয়েছে। যা মুজিব বাহিনী নামে পরিচিতি পায়। কিন্তু আমরা এর কিছুই জানি না। আগরতলার কলেজ টিলায় ছাত্র নেতারা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের খুঁজে খুঁজে বিএলএফে যুক্ত করতে থাকেন। ছাত্রলীগ করতাম। তাই আমাকেও আনা হয় আগরতলায়।’

আগরতলা থেকে শফিউলদের নেওয়া হয় ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি দেরাদুন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে তানডুয়ায়। সেখানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলে পনে দুই মাস। হাসানুল হক ইনু, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, কাজী আরিফ আহমেদ, মার্সাল মনি, আ ফ ম মাহবুবুল হক, ড. আফতাব, মাহমুদুর রহমান বেলায়েত প্রমুখের সঙ্গে দেখা হয় সেখানেই। ট্রেনিং করায় ইন্ডিয়ান আর্মির প্যারা ট্রুপার্স কমান্ডো ডিভিশন। মেজর জেনারেল সুজন সিং উবান ছিলেন দায়িত্বে। ডোবরা নামে একজন বিগ্রেডিয়ারও ছিলেন। শফিউলরা ছিলেন বিএলএফ এর প্রথম ব্যাচের যোদ্ধা। ট্রেনিং শেষে তাঁদের করণীয় ব্রিফ করেন মুজিব বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের এম এ মান্নান, ট্রেনিং শিক্ষক ও পরিচালক পিএসসি পুরকায়স্থ এবং মেজর মালহুতরা।’

অস্ত্র দেওয়া হয় কোথায়?

মুক্তিযোদ্ধা শফিউল বশরের ডান হিপে গুলিবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন

তিনি বলেন–‘উদয়পুর ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে অস্ত্র পাই। অতঃপর ফেনীর ছাগলনাইয়া দিয়ে দেশের ভেতর ঢুকি। প্রথমে বুরবুরিঘাট দিয়ে মিরেরসরাই, সেখান থেকে শীতাকুণ্ড, এরপর চট্টগ্রাম শহরে আসি। দশ জনের দল ছিল। কমাণ্ড করতেন আব্দুল্লাহ আল হারুন। আরও ছিলেন ডা. আমিন আহমেদ, ডা. জাফরুল্লাহ, ডা. মাহবুব প্রমুখ। গেরিলা ছিলাম। নির্দেশ ছিল– ‘টু হিট অ্যান্ড রান’। ভীতি তৈরি করাই ছিল প্রধান কাজ।’

চট্টগ্রাম শহর কি তখন নিরাপদ ছিল?

মুচকি হেসে মুক্তিযোদ্ধা শফিউল বশরের উত্তর–‘মোটেই না। জীবনের ঝুঁকি ছিল প্রতিনিয়ত। তবে মৌলভী সৈয়দ আহমেদ স্থানীয়ভাবে সংগঠকদের একত্রিত করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বেশ কিছু নিরাপদ সেল্টার তৈরি করে রেখেছিলেন। আব্দুল হাই এর ছেলে আবু সাঈদ সরদার সেল্টারে অস্ত্রের ডাম তৈরি করেন। আর হারেজ ভাই, জালাল ভাই, মোন্নাব ভাই, ইসলাম ভাই, আব্দুন নুর ভাই, হাশেম ভাই, নমুদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ একটা ভাল বেইস ওয়ার্ক তৈরি করে রেখেছিলেন। চট্টগ্রাম শহরে আমাদের সেল্টার ছিল পানওয়ালা পাড়া সবুজবাগ নামে একটা বাড়ি, হাজি পাড়া আব্দুন নুরদের বাড়ি, হাশেম ও জালাল ভাইদের বাড়ি, বড়পোলের মিন্দাজের বাড়ি, ঈদগায় মোনাব ভাইদের বাড়ি, আবেদুর পাড়ায় সুলতান কন্ট্রাকটারের বাড়ি, সোনালী ব্যাংক কলোনী, বাকুলিয়া প্রভৃতি স্থান। এক সেল্টার থেকে বেরিয়ে অপারেশন সেরে আমরা আবার আরেক সেল্টারে আত্মগোপন করে থাকতাম।’

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর তৈরির জন্য শফিউলরা আগ্রাবাদে আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে আক্রমণ করে। এ অপারেশনে তাঁর সঙ্গে অংশ নেয় কাজী এনামুল হক দানু, আব্দুল্লাহ হারুন, ফকরুল হাসান মনি প্রমুখ। সার্পোটে ছিল বিএলএফ এর আরও কয়েকটি গ্রুপ। এ খবর পরে বিশদভাবে প্রচারিত হয় বয়েজ অব আমেরিকা ও বিবিসিতে। এছাড়া গেরিলা সেজে হালি শহরে পাওয়ার লাইন উড়িয়ে দেওয়া, পাঁচলাইশ থানার পাশে পাকিস্তানিদের তেল ও গ্যাস অফিস থেকে ওয়্যারলেস সেট ছিনিয়ে আনা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শান্তি কমিটির সেক্রেটারির ওপর গেরিলা হামলা, মনসুরাবাদের ঈদগায় হাজী মোহম্মদ আলীর বাড়িতে অবস্থান নেওয়া  আর্মি ও তাদের সিএসডি গোডাউনে আক্রমণ প্রভৃতি অপারেশনে যুক্ত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা শফিউল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এক অপারেশনে মারাত্মকভাবে আহত হন শফিউল বশর। পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে রক্তাক্ত হয় তাঁর ডান পাশের হিপ, ডান হাতের কনুইয়ের নিচ ও ডান পায়ের পাতা। তাঁকে ধরে নিয়ে টর্চারও করে পাকিস্তানি সেনারা। রক্তাক্ত সে ইতিহাস শুনি এই বীরের জবানিতেই।

তাঁর ভাষায়– ‘সাবেক সাংসদ সুলতানুল কবির চৌধুরী বাঁশখালিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন তখন। বাঁশখালি, বোয়ালখালী, রাউজান প্রভৃতি অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন নানা খরচে আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন। এ নিয়ে নানা পরিকল্পনা চলে। কীভাবে এই অর্থ সংগ্রহ করা যায়? খবর আসে চট্টগ্রাম স্টেট ব্যাংক থেকে কাস্টমসের মাসিক সেলারির টাকা যাবে একটা মাইক্রোতে। নির্দেশ দেওয়া হয় সেটি ছিনিয়ে নেওয়ার। আমরা চারজন, একটা ফিয়েট গাড়িতে। আমি, রফিক, অমল ও ফজলু। ড্রাইভার ছিল ভোলানাথ। আশপাশে আরও কয়েকটি গ্রুপ। আগ্রাবাদে একটি সেল্টার থেকে বের হই আমরা।

ইনফরমেশনটা ভুল ছিল। ফলে ব্যাটে বলে মিলে না। আমরাও গাড়িটি পাইনি। তাই অপারেশনটা হলো না। ফলে আবার সেল্টারেই ফিরে যেতে হবে। কিন্তু রফিক রাজি হয় না। কোনো একটা অপারেশন সে করবেই। তাই আমরা ঘুরছি শহরে। সঙ্গে ছিল দুইটা এসএমজি, চারটা রিভালবার আর চারটা গ্রেনেড।

ভিডিও:মুক্তিযুদ্ধে আহত হওয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন শফিউল বশর ভান্ডারী

১ নভেম্বর ১৯৭১। তখনও দুপুর হয়নি। চট্টগ্রাম নিউ মার্কেটের দক্ষিণে সিটি কলেজের সামনে আইস ফেক্টরী রোডে একটা পত্রিকার দোকান ছিল। নাম আইডিয়াল বুক স্টল। পাকিস্তান আর্মির এক মেজর সেখানে দাড়িয়ে ম্যাগাজিন দেখছে। তৎক্ষনাৎ পরিকল্পনা হয় তার ওপর আক্রমণের। গাড়িটা ঘুরিয়ে দরজা খুলেই তার মাথায় খুব কাছ থেকে গুলি করে রফিক।

মাটিতে পরেই ওই মেজর পিস্তল দিয়ে পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। গাড়ি থেকে নেমে আমিও একটা গুলি করি তার হাতে। কিন্তু তার আগেই আমার ডান পায়ের পাতা ভেদ করে বেরিয়ে যায় একটা গুলি। প্রথমে টের পাইনি। দেখলাম পায়ের পাতা ফেলতে পারছি না। দ্রুত গাড়িতে উঠি। ইন দ্যা মিন টাইম নেভির একটি টহল গাড়ি চলে আসে। তারা আমাদের ক্রস করেই থেমে যায়। অতঃপর আমাদের দিকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে।

গাড়ির আড়ালে থেকে আমরাও গুলি চালাই। কিন্তু ভাগ্যটা খুব খারাপ ছিল। হঠাৎ দেখি অন্যদিক থেকে ছুটে আসছে পাকিস্তান আর্মিরও একটি টহল গাড়ি। ওরাও পজিশন নেয়। দুইদিকের আক্রমণের মধ্যে পড়ে যাই আমরা। সে সময় গোলাগুলিতে আমার ডান হাতের কনুইয়ের নিচ গুলিবিদ্ধ হয়। হাতটা নাড়াতে পারি না। দেখলাম পাশেই পড়ে আছে রফিকের নিথর দেহ। ওর মাথায় গুলি লেগেছে কয়েকটা। অমল, ফজলু, ও ভোলানাথ জীবন নিয়ে কোনোরকমে পালিয়ে যেতে পেরেছে। কিন্তু আমি পালাতে পারিনা!

গুলি তখনও চলছে। ওই সময়েই আমার ডান হিপে গুলি লেগে হাড় ভেঙ্গে বেরিয়ে যায়। ধুপ করে মাটিতে পড়ে যাই। ক্রলিং করছি। কিন্তু এগোতে পারি না। হাত ও পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। মনের ভেতর মৃত্যু ভয়। কিছুক্ষণ পরেই চোখের সীমানায় এসে দাঁড়ায় পাকিস্তানি আর্মিরা। তখনও জ্ঞান ছিল। ওরা চুল ধরে টেনে গাড়িতে তোলে। অতঃপর গন্তব্য সোজা সার্কিট হাউজ।

সেখানে নিয়েই শুরু হয় টর্চার। একজন অফিসার এসে সমানে লাথি মারতে থাকে। মনে হয়েছে জানটা তখনই বেরিয়ে যাবে। প্রচণ্ড কষ্ট আর ব্যথায় আমি জ্ঞান হারাই। অতঃপর চোখ মেলে দেখি চট্টগ্রাম মেডিকেলের বেডে, চারপাশে পাহাড়ারত এক সেকশন অস্ত্রধারী পাকিস্তানি সেনা।’

পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম টর্চারের কথা বলতে গিয়ে অঝরে কাঁদেন এই বীর যোদ্ধা। তাঁর অশ্রুসিক্ত বয়ান আর কষ্টের ঘটনাপ্রবাহ আমাদের বুকের ভেতরটাকেও খামছে ধরে। আমরা তখন নিরব থাকি। নিজেকে সামলে নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল বশর আবারও বলতে থাকেন–

‘পা-টা তখন ট্রাকশন দেওয়া। আর্মিরা আমাকে কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে চলে সিভিয়ার টর্চার। মিলিটারি অফিসাররা এসেই পরিচয় জানতে চায়। ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শুনলেই বুকেপিঠে প্রচণ্ড চাপ দিয়ে ধরে। তখন মনে হতো আর বাঁচব না। মায়ের মুখটা মনে ভেসে উঠত। একের পর এক গ্রুপ আসে আর জিজ্ঞাসাবাদ চলে। থেমে থেমে চলে ইলেকট্রিকশক। মুক্তিযোদ্ধাদের সেল্টারগুলোর অবস্থান, লিডার কারা, আমার পরিচয় কি– টর্চার করে ইন্টিলিজেন্সের লোকেরা এগুলো জানতে চাইত।’

ছাড়া পেলেন কীভাবে?

দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন–‘ভাগ্য বলতে পারেন। চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নামকরা প্রবীণ প্রিন্সিপাল ছিলেন এ এ রেজাউল করিম চৌধুরী। উনি পাকিস্তানি মতাদর্শে বিশ্বাসী, নিজামে ইসলামির সমর্থক ছিলেন। ওই কলেজে পড়েছি শুনে আর্মির লোকেরা তার কাছে যায়। উনি জানতেন আমি ছাত্রলীগ করি। কিন্তু বেমালুম এই তথ্যগুলো চেপে গেলেন। আর্মিদের বললেন, ‘ও আমার কলেজের সবচেয়ে নিরীহ ছাত্র।’ তার ওই তথ্যের কারণেই ছাড়া পাই। দেশ যখন স্বাধীন হয় আমি তখন চট্টগ্রাম মেডিকেলে। পা নাড়াতে পারি না। কষ্ট ছিল খুব। কিন্তু মুক্তির আনন্দে সব ভুলে গিয়েছিলাম!’

পোল্যান্ডে চিকিৎসকের সঙ্গে শফিউল বশর (ছবিতে চিকিৎসকের ডানে) ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা

স্বাধীনতা লাভের পর বিএলএফ বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মনিসহ জেনারেল উবান, ডোগরা, পুরকায়স্থ ভারত থেকে হেলিকাপ্টারে প্রথম আসেন চট্টগ্রামে। শফিউলকে দেখতে তারা যান হাসপাতালে। অতঃপর ওই হেলিকপ্টারেই তাঁকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানেই তাঁর পায়ে অস্ট্রিয়টমি অপারেশন করেন ডা: সিরাজ উল্লাহ। অপারেশন সফল হলেও তাঁর ডান পা দেড় ইঞ্চির মতো ছোট হয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শফিউলকে পাঠিয়ে দেন পোল্যান্ডে। সেখানে স্যাকেন্ড সিটি পোজনান হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে তিনমাস। পা-টি রক্ষা পেলেও এই সূর্যসন্তান এখনও হাঁটেন খুড়িয়ে খুড়িয়ে।

তাঁর ভাষায়–‘কিছুক্ষণ হাটলেই ব্যথা হয়। ব্যথা আমাদের চিরদিনের বন্ধু। স্বাধীনতার উপহার। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটা সহ্য করতে হবে। শক্রর সঙ্গে যুদ্ধ শেষ। কিন্তু নিজের শরীরের সাথে যুদ্ধ চলছেই।’

ভিডিও: দেশ নিয়ে স্বপ্নের কথা বলছেন শফিউল বশর ভান্ডারী

স্বাধীনের পর জাসদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন–‘হাজার বছরের পরাধীনতাকে ছিন্নভিন্ন করে যে নতুন জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে, সেখানে বঙ্গবন্ধুকে, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ও স্বাধীন বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে জাসদের অতি বিপ্লবী কর্মকান্ড। সে কারণেই ঘাতকরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মতো কালো অধ্যায়ের সূচনা করতে পেরেছিল। ৭০এর নির্বাচেন যারা মুসলিম লীগকে ভোট দিয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা ছিল পাকিস্তানের পক্ষে, স্বাধীনতা লাভের পর তাদের অনেককেই দেখেছি আওয়ামী লীগকে উৎখাতের জন্য জাসদের মিছিলে অংশ নিতে।’

কিন্তু তারাও তো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তবুও কেন বিরোধিতা করলেন?

‘দুটি কারণ মনে করি। এক হচ্ছে আগেই ছাত্রলীগ ভেঙ্গে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হওয়া। আর একটি হচ্ছে জাসদের ভাইয়েরা একাডেমিক জিনিয়াস ছিলেন। তাই তারা একটু শ্রেষ্ঠত্বে ভুগতেন। উনাদের হয়তো ধারণা ছিল বঙ্গবন্ধু আর ফিরবেন না। সিরাজুল আলম ভাইকে উনারা বাংলার কাস্তে বানাবেন। ফলে বঙ্গবন্ধু এলেই তারা তার বিরোধিতায় নামেন। এটা আমার মূল্যায়ণ। তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিরও প্রভাব ছিল।’

বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতাকারী জাসদের কয়েকজন নেতা কেন এখন মন্ত্রিত্ব পেলেন?

মুচকি হেসে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন–‘সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবেই বলি। কোন ব্যক্তি তার পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব মুক্ত নয়। সে সময়ের প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট কিন্তু এক করলে চলবে না। ঐক্যের প্রয়োজনে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বা সেই চিন্তার মানুষ–তাদের অনেক কিছু ভুলে গিয়ে হয়তো নেত্রী তাদের নিয়েছেন।’

মুক্তিযোদ্ধা শফিউল বশরের কাছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার স্পষ্ট ঘোষণা। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে রেডিওতে জিয়ার ঘোষণা সম্পর্কে তাঁর ভাষ্য–‘স্কুল ছুটি দেয় হেড মাস্টার। আর ঘন্টা বাইরায় দপ্তরি। এখন কি কোনো পাগল বলবে দপ্তরি ছুটি দিছে!

রাষ্ট্র পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার শাসনামলের তুলনা করেন এই বীর যোদ্ধা। বলেন–‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারও তুলনা চলে না। তবে আমার কাছে রাষ্ট্র পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু গ্রেটেস্ট আর শেখ হাসিনা হলেন লেটেস্ট।’

স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাললাগার অনুভূতি জানতে চাই আমরা। উত্তরে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শফিউল বশর বলেন–‘দেশের অর্থনীতি আর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট দেখলে বেশি ভাল লাগে। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ছিল স্বাধীনতার স্বাদ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া– সেটা খুব সাকসেসফুল হচ্ছে। মানুষ অতীতের চেয়ে অনেক ভাল আছে। জাগরণ ঘটেছে। মানুষ স্বপ্ন দেখা শিখেছে। এগুলো দেখলে তৃপ্ত হই।’

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা শফিউল বশর ভান্ডারী

খারাপ লাগে কখন?

‘পাকিস্তান আমলে বাইশ পরিবারের প্রতি আমাদের অনীহা ছিল। অথচ আজ বাংলাদেশে নতুন করে লুটেরা বাইশ হাজার পরিবারের জন্ম হয়েছে। সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে অল্প কিছু মানুষের কাছে। এটা কষ্ট দেয়।’
কী করা উচিত?

তাঁর মত–‘রাষ্টীয় প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিখাতে কম দেওয়া। গরীব দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বিষফোড়া। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনার হাত দিয়েই তা ঘটবে। তবে বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতিও আমাদের আস্থা রাখতে হবে।’

পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরেই এক সময় এ দেশটা উন্নত বাংলাদেশ হবে। তবে প্রজন্মকে অবশ্যই গাইড করতে হবে। এমনটাই মত দেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শফিউল বশর ভান্ডারী। প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি শুধু বললেন–‘দেশ একটা সত্ত্বা। আর সে সত্ত্বায় তোমরাই মূল শক্তি। দেশের বীরত্বের ইতিহাসগুলো মনে রেখ। ধর্মের আফিম থেকে নিজেকে মুক্ত রেখ। ধর্মের কারণে কখনও মিসগাইড হইও না। মনে রেখ, মানুষের কল্যাণ আর মুক্তির জন্যই ধর্ম। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি আল্লাহও পছন্দ করেন না।’

সংক্ষিপ্ত তথ্য
নাম : যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শফিউল বশর ভান্ডারী।
ট্রেনিং নেন : ইন্ডিয়ান মিলেটারি একাডেমী দেরাদুন তানডুয়ায় বিএলএফ এর প্রথম ব্যাচে পনে দুই মাস ট্রেনিং নেন।
যুদ্ধ করেছেন : বিএলএফ এর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন এলাকায়।
যুদ্ধাহত : ১ নভেম্বর ১৯৭১। চট্টগ্রাম শহরে এক অপারেশনে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে রক্তাক্ত হয় তাঁর ডান হিপ, ডান হাতের কনুইয়ের নিচ ও ডান পায়ের পাতা। তাঁকে ধরে নিয়ে টর্চারও করে পাকিস্তানি সেনারা।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ২৩জুন ২০১৮

© 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button