মুক্তিযুদ্ধ

এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের

“আমগো বাল্যকালটা ছিল অনেক আনন্দের। শীতের সময়টায় মজা হত বেশি। অন্যের গাছের রস পেরে খাওয়ার আনন্দ ছিল নিত্যদিনকার। সময়টা ১৯৬৫ সাল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলছে। সকালের দিকে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি বিমান মাথার ওপর দিয়ে উড়ে চলে যায়। ভয়ে আমরা ছিটকে পড়ি। খুব কাছ থেকে সেটাই ছিল প্রথম বিমান দেখা। দলবেঁধে ফুটবল আর দারিয়াবান্দা খেলতাম। বন্ধু আবুল, মালেক, লুৎফর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, আফসার আলী, খায়রুল হোসেন ও সামাদের কথা এখনও মনে পড়ে।

“শেখের কণ্ঠ প্রথম শুনি রেডিওতে। সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে ছিল রেডিও। গ্রামের সবাই সেখানেই ভিড় জমাত। গ্রামে আসত ইত্তেফাক পত্রিকাও। রেডিওর খবর, পত্রিকা আর দোকানে আসা নানাজনের মুখের কথা থেকেই জেনে যেতাম দেশের খবরগুলো।

“সরাসরি কোনো রাজনীতি করতাম না তখন। তবে দেশের প্রতি টানটা অনুভব করতাম। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৈয়বুর রহমান সরদারে পক্ষে পোস্টার লাগানো আর গণসংযোগের কাজ করি আমরা। নির্বাচনে জয়লাভের পরেও পাকিস্তানি সামরিক শাসক ক্ষমতা দিতে টালবাহানা করতে থাকে। শুরু হয় অসহোযোগ আন্দোলন। যা চলে একাত্তরের মার্চ পর্যন্ত।

“মার্চের শুরুতে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসি, তৈয়বুর রহমান সরদারের সঙ্গে দেখা করতে। সেখান থেকেই জানি রেসকোর্স ময়দানে শেখ সাহেবের ভাষণের খবরটি। দুদিন পরই ভাষণ। তাই থেকে গেলাম। মনের ভেতর তখন নানা প্রশ্ন। কী নির্দেশ দিবেন বঙ্গবন্ধু?

“৭ মার্চ ১৯৭১। দুপুরের দিকে পৌঁছি রেসকোর্স ময়দানে। মানুষের হাতে হাতে বাঁশের লাঠি। চোখেমুখে প্রতিবাদের ছাপ। মঞ্চের খুব নিকটে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠতেই সবাই স্লোগান তোলে। রক্ত তখন টলমল করছিল। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব… এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

“এখনও কানে বাজে ভাষণটি। মনে হলেই গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়।”

মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকতের হাঁটুতে গুলি এক পাশ দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়

যুদ্ধদিনের গদ্যগুলো শুনছিলাম যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. লিয়াকত আলীর জবানিতে। তাঁর ঠিকানাটি পাই আরেক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের কাছ থেকে। প্রাথমিক কিছু তথ্যও তিনি জানিয়ে দেন।

লিয়াকত আলীর পিতা আইয়ুব আলী বিশ্বাস এবং মায়ের নাম লাল বানু। বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার বাকপাড়া গ্রামে। ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে লিয়াকত আলী সবার বড়। বাবা ছিলেন সাধারণ কৃষক। তাঁর লেখাপড়ায় হাতেখড়ি চৌগাছা প্রাইমারি স্কুলে। অতঃপর তিনি ভর্তি হন শুখপুকুরিয়া হাইস্কুলে। আট বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ছিলেন রামকৃষ্ণপুরে, মামার বাড়িতে। সময়টা ১৯৬৫ সাল। লিয়াকত তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। পারিবারিক কারণে পড়াশোনা ছেড়ে শুরু করেন ব্যবসা। চৌগাছা বাজারের তাঁর একটি মুদি দোকান ছিল।

মতিউরের দেওয়া তথ্য নিয়েই এক সকালে আমার পা রাখি মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকতের গ্রামের বাড়িতে। দরজায় কড়া নাড়তেই বাড়ির দরজা খোলেন লিয়াকত আলী। বয়স সত্তরের ওপর। পরনে পাঞ্জাবি। মাথায় টুপি। সুঠাম দেহি। কথা বলায় বেশ বিনয়ী।

ভেতরে ঢুকে কোনো আসবাব চোখে পড়ল না। ঘরের এককোণে পুরনো পত্রিকার স্তূপ। জানালেন, পত্রিকা পড়া ও সংরক্ষণ করাতেই তাঁর আনন্দ। ছবি তোলার পর্বটি শেষ করে রেকর্ডার অন করতেই নিজের অক্ষমতার কথা জানান। দুবার স্ট্রোক ও একবার হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন এ যোদ্ধা। শুনেই আমরা সর্তক হই। ধীর গতিতে চলে আমাদের আলাপচারিতা।

লোকমুখে ঢাকা আক্রমণের খবর লিয়াকতরা পান ২৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে। তখনও চৌগাছায় পাকিস্তানি আর্মি পৌঁছায়নি। কিন্তু সবার মধ্যেই চাপা আতঙ্ক। এপ্রিলের শেষ দিককার কথা। চৌগাছার রাস্তায় পাকিস্তানি আর্মিদের ট্রাক নামে। প্রায় ১০টি ট্রাকে করে যশোর ক্যান্টমেন্ট থেকে এসে তারা চৌগাছা বাজার আক্রমণ করে। কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করাসহ ওইদিন পাটের বড় বড় আড়তগুলো পুড়িয়ে দেয়। পাকিস্তানিদের ভয়ে চৌগাছার যুবকরা ভর্তি হতে থাকে শান্তিবাহিনীতে। কিন্তু লিয়াকতের বুকের ভেতর তখনও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের নির্দেশ। বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণই তাঁকে উদ্দীপ্ত করে। দিন দুয়েক পরেই তিনি ঘর ছাড়েন দেশের টানে। তাঁর ভাষায়:

“গ্রাম থেকে প্রথম আমিই মুক্তিযুদ্ধে যাই। এক দুপুরে বের হয়ে বাংলাদেশের মাসিলা সীমান্ত দিয়ে ভারতের বয়রায় চলে যাই। সঙ্গে ছিল দুজন। ছোট ভাই ইয়াকুব আলী আর প্রতিবেশী নানা সম্পর্কের মোশারফ হোসেন। বয়রায় ছিল শরণার্থী ক্যাম্প। সেখানে দাঁড়ানোর মতো জায়গাও নাই। বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের চাপে প্রতিদিনই মারা যায় দু-একজন বৃদ্ধ বা শিশু। এসব দেখে খারাপ লাগে। একদিন বয়রা ক্যাম্পে অন্যদের রেখে বাসে চেপে আমি চলে আসি বনগাঁ। সেখানে দেখা হয় তৈয়বুর রহমান সরদারের সঙ্গে। তাঁর মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীতে নাম লেখাই।”

ট্রেনিং নিলেন কোথায়?

“বনগাঁ থেকে আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিহারের চাকুলিয়ায়। ওখানে ২৭ দিনের ট্রেনিং নিই আমরা। বাংলাদেশি ওস্তাদ গোলাম মোস্তফার কথা এখনও মনে পড়ে। ট্রেনিং শেষে শপথের দিন এসেছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। বক্তব্যে সেদিন বলেছিলেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও তোমরা দেশকে মুক্ত কর।’

মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকতের হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন

যুদ্ধের সময়ের নানা প্রসঙ্গ বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে এ বীরের কথা বলা। ফলে লিয়াকত আলীর ‘প্রেসার’ যায় বেড়ে। কিন্তু নিষেধ সত্ত্বেও তিনি থামতে রাজি নন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তাঁর রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। মন খুলে তা বলতে চান তিনি। তাঁর এই আকুতি আমাদের অবাক করে। খানিক বিরতি, অতঃপর আবারও শুরু হয় কথা বলা।

“ট্রেনিং শেষে আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় বনগাঁ পেট্রাপোলে। ওখান থেকে ছোট ছোট গ্রুপ করে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকতাম। আক্রমণ করেই আবার ফিরে আসতাম। আমরা ছিলাম গেরিলা। নির্দেশ ছিল ‘হিট অ্যান্ড রান।’ এভাবেই যুদ্ধ করি ৮ নং সেক্টরের গরীবপুর, বেরগোবিন্দপুর, চৌগাছা, ছুটিপুর, কাগমারী, কাশিপুর প্রভৃতি এলাকায়।”

এক অপারেশনে হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ হন এই যোদ্ধা। সেদিনকার যুদ্ধস্মৃতি আজও তাঁকে আন্দোলিত করে। কী ঘটেছিল রক্তাক্ত ওই দিনটিতে? প্রশ্ন শুনে আনমনা হন এই সূর্যসন্তান। অতঃপর বলেন:

“বয়রায় ছিল ৮ নং সেক্টরের সাব সেক্টর। খন্দকার ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা সাব সেক্টর কমান্ডার। ২৮ নভেম্বর ১৯৭১। গরীবপুর মাঠে পাকিস্তানি আর্মিদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ চলছে। সে যুদ্ধে সার্পোট দিতে হবে।

“আমরা ১৫০ জন যোদ্ধা। বয়রা থেকে রাতে রওনা দিয়ে সেখানে পৌঁছি খুব ভোরে। প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছে। খানিক বিশ্রাম নিয়ে দুপুরের দিকে আমরা পজিশনে চলে যাই। অপরদিক থেকে বৃষ্টির মতো গুলি আসছে। আমার পজিশন ধান খেতের আইল বরাবর। গুলি আর ক্রলিং করে সামনে এগোনোর চেষ্টা করি। একটি খেতের পথ ধরে আমরা এগোচ্ছি। সামনে পরে আইলের উঁচু একটি জায়গা। কী করব ভাবছি। মাথা নিচু করে ক্রলিং করে এগোতে যাব অমনি চুঁ করে কয়েকটা গুলি এসে লাগে আমার পায়ে। ছিলাম দক্ষিণ দিকে মুখ করা। দুটি গুলি দুই হাঁটু ভেদ করে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথম কিছুই বুঝিনি। মিনিট দশেক যেতেই রক্তে ভিজে যায় পা দুটি। আমি আর চলতে পারি না। ধীরে ধীরে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে। এরপর আর কিছুই মনে নেই। জ্ঞান ফিরতেই দেখি বনগাঁ হাসপাতালে। পরবর্তীতে চিকিৎসা হয় যশোর সদর হাসপাতালে।”

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানিদের অত্যাচারের কথা উঠতেই মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত জানালেন একটি ঘটনার কথা:

“বয়রায় ঢোকার পথে একবার শরণার্থীদের পথ আগলে দাঁড়ায় কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি। একজন মহিলা ছিলেন অন্তঃসত্তা। চলার পথেই তার প্রসব বেদনা ওঠে। ফলে আরও কয়েকজন মহিলা তাকে ঘিরে আড়াল করে। দূর থেকে ঝটলা দেখে সেখানে হানা দেয় পাঞ্জাবিরা। রাইফেল তাক করে এক পাঞ্জাবি সবাইকে সরতে বলে। কেউ না সরায় ওরা ক্ষিপ্ত হয়। মহিলাদের পেটে ঢুকিয়ে দেয় বেয়নেট। এতেই ওরা ক্ষান্ত হয় না। খুচিয়ে হত্যা করে সন্তান প্রসবকারী ওই মহিলাটিকেও। ফলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বেই মারা যায় শিশুটি।

মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকতের অনুকূলে যশোর সদর হাসপাতালের ছাড়পত্র

“এ দৃশ্য দেখে ভয়ে সবাই পালাতে থাকে। রাইফেল উঁচিয়ে পাঞ্জাবিরা বলতে থাকে, ‘ওই শালা বাঙালিকা বাচ্চা ভাগ যা… ভাগ যা…।’ খবর পেয়ে আমরা ওখানে ছুটে যাই। কিন্তু তার আগেই সব শেষ।”

যে দেশের জন্য যুদ্ধ করলেন, রক্ত দিলেন, স্বপ্নের সে দেশ কি পেয়েছেন?

“সে দেশ পাইনি। চেয়েছিলাম মোটা ভাত, মোটা কাপড় নিয়েই শান্তিতে থাকব। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাটা ভোগ করব। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হবে। কিন্তু সোনার বাংলা গড়তে চাই সোনার মানুষ। সে মানুষই তো গড়া হল না। যুদ্ধ করল যারা স্বাধীনের পর তাদেরই বলা হল যার যার কাজে ফিরে যেতে। মুক্তিযোদ্ধারা আর দেশের কাজে থাকল না। সে জায়গাগুলো সুকৌশলে দখল করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরাই। এর পরের ইতিহাস তো জানেনই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে দেশ আবার অন্ধকারের দিকে যেতে থাকল।’

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে এ মুক্তিযোদ্ধা অকপটে তুলে ধরেন নিজের মতামত। তিনি বলেন:

“স্বাধীনতা লাভের পরই এ তালিকা হওয়া উচিত ছিল। যখন তালিকা হল তখন মুক্তিযোদ্ধাদের ১০০ জনের মধ্যে ১০ জনই মারা গিয়েছে। তাহলে ওই দশজনকে তো জাতি সম্মানিত করতে পারল না। তারা বা তাদের পরিবারও একরকম বঞ্চিত হল।”

তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধার নাম আসা প্রসঙ্গে লিয়াকত বলেন:

“আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্ত আমাকে একজন গুলি এগিয়ে দিয়েছে, একজন অস্ত্র বহন করেছে, কেউ পথ চিনিয়ে নিয়েছে, কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খবর এনে দিয়েছে– এগুলোও মুক্তিযোদ্ধার আওতার মধ্যে পড়ে। যদি তাদেরও মুক্তিযোদ্ধা বানানো হত তবে তা-ও মানা যেত। কিন্তু যারা যুদ্ধের কাছেই যায়নি। তারা কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা হল?”

৪৬ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ের কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এ যোদ্ধা কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন:

“কষ্টের কথা কি বলব ভাই। ভারতে ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধ করেছি। গুলি খেয়ে স্বাধীনতা এনেছি। অথচ ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে রেশ ধরে এলাকার এক মুক্তিযোদ্ধা যিনি নিজেই বির্তকিত তিনি আমার বিরুদ্ধে দরখাস্ত দিয়েছেন মন্ত্রীর কাছে। তদন্ত না করেই তিনি আমার ভাতা বন্ধ রেখেছেন। শারীরিক অসুস্থতায় কথাও ঠিক বলতে পারি না। চলতেও পারি না। টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছি না। যুদ্ধাহত ছিলাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটা আর কতবার প্রমাণ করতে হবে? দুঃখ লাগে, এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের।’

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী

যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার না হলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যেত বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত। এ জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে। তিনি বলেন:

“শেখের মেয়ের দেশপ্রেম নিয়ে কোনো কথা নেই। তাঁর হাত ধরেই সোনার বাংলা হবে। কিন্তু কিছু হলেই আমরা তাঁর সমালোচনা করি। তিনি একাই কি সব কাজ করবেন? প্রত্যেকেই যদি নিজের কাজের ক্ষেত্রে সৎ না থাকে তবে তো দেশটা এগোবে না।”

স্বাধীন দেশে ভালোলাগার অনুভূতি জানতে চাই আমরা। উত্তরে এই বীর বলেন:

“দেশের সফলতা আর বিজয় দেখলে ভালো লাগে। শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে যখন লাখো তরুণ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তুলেছে তখন বুকটা ভরে গেছে। ওরাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে। তরুণরা তখন না জাগলে আইন পরিবর্তন হত না। ফলে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লারও ফাঁসি হত না। তাই শাহবাগের আন্দোলন ইতিহাস হয়ে গেছে। তরুণদের ওই জেগে ওঠাটাই ছিল আরেক মুক্তিযুদ্ধ।”

খারাপ লাগে কখন?

“যখন দেখি ধর্মের নামে রাজনীতি হচ্ছে, স্বার্থের কারণে ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা লুট হচ্ছে, তখন সত্যি কষ্ট লাগে। এমন দেশের জন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি।”

নানা সমস্যা থাকলেও দেশ নিয়ে হতাশ নন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. লিয়াকত আলী। তিনি মনে করেন স্বাধীনতা লাভের সময়ের তুলনায় আমরা অনেক এগিয়েছি। এ দেশটা আরও এগিয়ে যাবে পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরেই। তাই তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন:

“তোমরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হও। দেশ ও মানুষকে ভালবেস। দেশের ইতিহাসকে সমুন্নত রেখ। তোমরাই এখন দেশ গড়ার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।’

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ১৪ জুন ২০১৭

© 2017 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button