মুক্তিযুদ্ধ

স্বাধীন দেশের উন্নতিটাই আমার মন ছুঁয়ে যায়

“আমগো বাড়িডা ছিল নদীর পাড়ে। এলাংজানি নদী। ধলেশ্বরীর শাখা। বর্ষায় কোশা দিয়া স্কুলে যাইতাম। নৌকা ডুইবা একবার তো মরার দশা! তবুও জীবনের লগে নদী থাকত। নদীর বুকে নৌকা ভাসাইয়া পিকনিক করতাম, স্কুল থাইকা ফিরাই নদীত ডুবাইতাম। শরীরডা পানিতে ঠাণ্ডা হইলে ভরসা ছিল পাড়ের গরম বালি। উপুর হইয়া শুইয়া ওম নিতাম বালিতে।

“মা আমারে ভালবাসত বেশি। ঢাকায় বেড়াইতে যাইতাম আত্মীয়র বাড়িতে। তহন ঘরে মুরগি রান্না হইলে মা আমার জন্য রাইখা দিত। নষ্ট হইয়া গেলেও কাউরে দিত না। অসুস্থ হইলে চোখের পানি ফেলত। তিন বোনের ছোড আমি। আদরও পাইতাম বেশি। বোনেরাও মায়ের মতন আদর করেছে। বুড়া হইছি। এহনও তারা ছোটবেলার মতন আদর করেন।

“আগে বছরে একবার নাটক হইত। রূপবানগুনাই বিবির পালা । পুরুষরাই সাইজা নায়িকা হইত। এহন তো নাটক হয় না। দেশ আপটুডেট হইয়া গেছে। যাত্রাও উইঠা গেছে। ধর্মের কথা কইয়া বাউলগো তো মানুষ মাইরা খেদাইছে। অথচ রাত যাইগা সানসা আর আব্দুর রহমানের কত পালা দেখছি!

“আমি তহন ক্লাস নাইনে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলছে। পাকিস্তান সরকার স্কুল-কলেজে মোজাহিদ ট্রেনিং দেয়। আমরা কইতাম ‘অস্ত্র ট্রেনিং’। টাঙ্গাইলের করটিয়া কলেজ ছিল সেন্টার। তহন ফাল্গুন-চৈত্র মাস। আমগো এক মাসের ট্রেনিং করায় পাকিস্তানি আর্মিরা। ১০ রাউন্ড গুলি চালাইছিলাম ট্রেনিংয়ে। পাকিস্তানি সেনাগো ওই ট্রেনিং একাত্তরে কাজে লাগে ওগোই বিরুদ্ধে।”

শৈশব ও কৈশোরের নানা ঘটনার কথা শুনছিলাম যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. ছানোয়ার হোসেন তালুকদারের মুখে। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কামুটিয়া গ্রামে। এক সকালে তাঁর বাড়িতে চলে নানা বিষয়ে আলাপচারিতা।

মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়পত্র

আব্দুল মজিদ তালুকদার ও ডালিমন খানমের ষষ্ঠ সন্তান ছানোয়ার। বাবা ছিলেন পাটের ব্যবসায়ী। পাট কিনে প্রক্রিয়া করে মাল্লার নৌকায় তা নিয়ে যেতেন নারায়ণগঞ্জে। ছানোয়ারের লেখাপড়ায় হাতেখড়ি নথখোলা প্রাইমারি স্কুলে। হাতেয়া রাজাবাড়ি হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাসের পর তিনি আইএসসিতে ভর্তি হন টাঙ্গাইল কাকমারি কলেজে (বর্তমানে মোহাম্মদ আলী কলেজ)। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন ওই কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র।

টাঙ্গাইলে তখন বড় নেতা ছিলেন শাহজাহান সিরাজ, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, খন্দকার আব্দুল বাতেন প্রমুখ। নেতারা স্কুল-কলেজের ছাত্রদের নানা বৈষম্যের কথা শোনাতেন। কাগজ তৈরি হত পূর্ব পাকিস্তানেই। অথচ সেটার দাম পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল কম, পূর্ব পাকিস্তানে ডাবল। অফিস-আদালতে বাঙালিরা বড় কোনো জায়গায় যেতে পারত না। যোগ্যতা থাকলেও কেন তারা বড় চাকরি পাবে না? এমন নানা প্রশ্ন তখন ঘুরপাক খেত ছানোয়ারের মনে।

 সত্তরের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করলেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দিতে টালবাহানা করে পাকিস্তানি শাসক দল। শুরু হয় অসহোযোগ আন্দোলন। অতঃপর আসে ৭ মার্চ ১৯৭১। গোটা জাতি তাকিয়ে থাকে বঙ্গবন্ধুর দিকে। বাকি ইতিহাস জানালেন ছানোয়ার। তাঁর ভাষায়:

“আগেই খবর পাই শেখ সাহেব ভাষণ দিব ঢাকায়, রেসকোর্স ময়দানে। চিন্তা করলাম ভাষণ শুইনাই লঞ্চে কইরা চইলা যামু মুন্সিগঞ্জ। পুলিশের ওখানকার সিআই ছিলেন আমার কাকা। ওইদিন টাঙ্গাইল থাইকা রওনা দিয়া শাহবাগের ঘোড়দৌড় মাঠে পৌঁছাই দুপুরে। দেহি সবার হাতে হাতে লাঠি। বঙ্গবন্ধু কইলেই সবাই ঝাঁপায়া পড়ব। স্টেইজের খুব কাছেই ছিলাম। দুপুরের পরে মঞ্চে উঠলেন শেখ সাহেব। কইলেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি… তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শক্রুর মোকাবেলা করতে হবে…।’ এইডা তো ভাষণ না, স্বাধীনতার ডায়রেক্ট ডিক্লেয়ার। এহনো শুনলে মনে এনার্জি আইসা যায়।”

২৫ মার্চ ১৯৭১। ঢাকায় গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি আর্মিরা। কলেজে এসে ছানোয়ার জানেন সে খবর। ২৭ মার্চ ১৯৭১। ঢাকা থেকে আর্মিদের একটি দল টাঙ্গাইল হয়ে ময়মনসিংহের দিকে যাবে। খবর পেয়ে বাঙালি ইপিআর ও অন্যরা প্রতিরোধ গড়ে পাকুল্লা বাসস্ট্যান্ডের পাশে সাটিয়াচোরা গ্রামে এবং নাটিয়াপাড়ায়। কিন্তু সশস্ত্র আর্মিদের ঠেকাতে পারে না। করোটিয়া বাজার পুড়িয়ে দিয়ে তারা ময়মনসিংহের দিকে চলে যায়।

[ ভিডিও : আহত হওয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ছানোয়ার হোসেন তালুকদার।]

ছানোয়ার জানান নিজের অভিজ্ঞতা:

“ওইদিন সাইদুর রহমান বাদলসহ করোটিয়া বাজারে আসি। বাজারেই এক মারোয়ারি ছিল। ঢোল আর ঝাড়ু দিত ও। তারে পুড়ায়া মারছিল আর্মিরা। নিজ চোখে দেখছি তার পেটটা পুড়ে মাটিতে পড়ে আছে। ওর পোড়া দেইখাই সিদ্ধান্ত নিছি যুদ্ধে যামু।”

এরপর কী করলেন?

“মে মাসের প্রথম দিকে যুক্ত হই কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে। আমি যখন ঢুকি তহন যোদ্ধা ছিল দশের মতো। আগেই ট্রেনিং ছিল, কিন্তু প্রথম দিকে অস্ত্র পাইতাম না। অপারেশনে শুধু সাহায্য করতাম। গ্রামে গ্রামে টেনিং হইত। আমরাও থাকতাম। কাদের সিদ্দিকী ভারতে চলে গেলে আমরাও আত্মগোপনে থাকি। তহন মুসা নামের এক কোম্পানি কমান্ডারের লগে পরিচয় হয়। তাঁর লগেই হায়ার ট্রেনিংয়ের জন্য নদী পথে চলে যাই ইন্ডিয়ায়।”

কোন সীমান্ত দিয়ে ভারতে গেলেন?

পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া গুলি পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়

“বাহাদুরাবাদ ঘাট, ফুলছড়ির ঘাট হয়ে ভারতের মাইনকার চরে গিয়া উঠি। ওখান থেকে ট্রাকে কইরা চইলা যাই তুরা পাহাড়ে। আমগো দেড়শ জনরে ২৮ দিনের ট্রেনিং দেওয়া হয় ওখানে। শফিউল ইসলাম, রেজাউল করিম, বাবলু, নাজির আহম্মেদ চৌধুরিসহ অনেকেই ছিল সঙ্গী।”

ট্রেনিং শেষে ছানোয়াররা একশ জনের দল নিয়ে ফিরে আসেন কাদেরীয়া বাহিনীতে। সন্মুখ ও সশস্ত্র গেরিলা অপারেশন করেন ১১ নং সেক্টরের নাগপুর, কামুটিয়া, কালিহাতিসহ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায়।

এক অপারেশনে পিঠে গুলিবিদ্ধ হন এই সূর্যসন্তান। কয়েক বছর আগেও ওই ক্ষত স্থান দিয়ে নিয়মিত পুঁজ পড়ত। মাঝেমধ্যেই ব্যাথায় কুকড়ে যান তিনি। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট আর একাত্তরের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন ৬৮ বছর বয়স্ক এই মুক্তিযোদ্ধা। স্মৃতি হাতড়ে তিনি জানালেন একাত্তরের রক্তাক্ত ওইদিনটির আদ্যপান্ত।

“নভেম্বরের শেষ দিক হইব। নাগরপুর থানায় ছিল পাকিস্তানি সেনাগো ঘাঁটি। আমরা ওইটা দখল করব। আমাগো সাথে ১২-১৩ জন। অন্যপাশে সবুর খানের সঙ্গেও আছে ১৩ জনের মতো। তিনদিক থেকে আমরা আক্রমণ করি। থানার পুব দিকে নিচুতে ধানখেতের আইলে পজিশনে ছিলাম আমরা। প্রচণ্ড গোলাগুলি চলল দুইদিন। কমান্ড করেন কাদের সিদ্দিকী নিজেই। পাকিস্তানি সেনারা চাপের মুখে থাকে। ওগো নাওয়া-খাওয়াও বন্ধ হয়। সার্পোটিংয়ের জন্য ওরা তহন ওয়ারলেস করে টাঙ্গাইলে।

“২ ডিসেম্বর ১৯৭১। টাঙ্গাইল থেকে দুই ট্রাক আর্মি আসে। খাদ্য ও অস্ত্র নিয়া ওরা নামে এলাসিন নদীর ঘাটপাড়ে। ওইদিকে ছিল আমগো দুইটা কোম্পানি। কিন্তু তারা ঠেকাতে পারে না। খবর পেয়ে দুপুর ২টার দিকে কাদের সিদ্দিকীসহ যাই ঘাটপাড়ে।

“আমরা রেঞ্জের বাইরে দিয়া আইসা একটা খালের কাছে পজিশন লই। গোলাগুলি চলল তুমুল। ওগো একটা দল ঘাট পাড় থেকে ফায়ার দিচ্ছে। আরেকটা দল নিচে নেমে পিছন দিক থেকে অ্যাটাকের জন্য এগিয়ে আসে। কাদের সিদ্দিকী কয়, ‘ছানোয়ার দেখ তো ওরা কতটুকু আইল?’ আমরা ছিলাম টান জায়গায়। মাথা তুলতেই দেহি নিচের দিকে খুব কাছাকাছি ওরা চইলা আসছে। চিৎকার দিয়া কইতেই কাদের সিদ্দিকী স্টেনগান দিয়া তিনটা ব্রাশ মারে। ওরা কয়েকজন পড়ে যায়। আমিও ব্রিটিশ এলএমজি দিয়া গুলি চালাচ্ছি। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামে। আমগো গুলিও শেষের পথে। কাদের সিদ্দিকী কয়,‘তোরা ব্যাক কর আমি ঠেকাই।’

“আমার গায়ে কালো শার্ট। একটু শীতশীত লাগছিল। ক্রলিং করে পেছনে এগোতে যাব। অমনি একটা গুলি এসে পিঠের একপাশে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। পিঠটা কামড়ে ধরে। কিছু বুঝিনি তহনও। প্রথমে উপুর হয়ে শুয়ে থাকি। উঠতে পারছিলাম না। একটু পরে পিঠে হাত দিতেই অনুভব করলাম রক্তে ভেসে গেছে। ভাবলাম মরেই যামু। নিশ্চয়ই গুলি লাগছে বুকে! একটু পরেই দমটা যাইব। মা আর বোনগো কথা খুব মনে হচ্ছিল। বাঁচার তখন তীব্র বাসনা। সাহস করে বুকে হাত দিলাম। না, ক্ষত পেলাম না। মনে সাহস আসল। হয়তো বাইচা যামু।”

চিকিৎসা হল কোথায়?

“ভাতিজা বজলুর রহমান ছিল পাশে। অন্যদের সাথে সে আমারে কাঁধে করে এক গ্রামে নিয়ে যায়। দুইটা পেনিসিলিন ইনজেকশন দেয় কাদের সিদ্দিকী নিজ হাতেই। কাপড় দিয়া ব্যান্ডেজ করে সকালে নৌকায় নেওয়া হয় এক চরে, চেয়ারম্যান বাড়িতে। ওখানেই ছিলাম। কয়েকদিন পরেই টাঙ্গাইল স্বাধীন হলে কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিন মাস চিকিৎসা চলে। বেঁচে গেছি, কিন্তু একাত্তরের যন্ত্রণাটা থাকব মৃত্যুর আগ পর্যন্তই। কয়েকবছর আগেও ক্ষত দিয়ে পুঁজ পরত। এহনও ক্ষত জায়গা আঙুল দিয়ে স্পর্শ করলেই প্রচণ্ড ব্যাথা মাথায় গিয়া লাগে। শ্বাসকষ্ট হয় খুব। এই কষ্টটা বুঝাতে পারমু না ভাই। তবুও দেশ স্বাধীন হইসে। এটাই শান্তি।”

১৯৭১ সালে কাদেরিয়া বাহিনীতে যুদ্ধ করলেও মুক্তিযোদ্ধা ছানোয়ার বর্তমানে খুঁজে পান না একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীকে। অকপটে তিনি বললেন:

“রাজাকারগো মন্ত্রী আর রাষ্ট্রপতি বানাইছে বিএনপি। তহন তো মনে হইছে কিয়েরে দেশ স্বাধীন করলাম? নিজামি আর মুজাহিদের গাড়িতে উড়েছে আমার দেশের পতাকা। মনে হইছে আত্মহত্যা করি! অথচ একাত্তরের কাদের সিদ্দিকী এহন সেই বিএনপির সাথে মিটিং করে। বাঘা কাদের সিদ্দিকী জামায়াতের টিভি চ্যানেলেও কথা বলতে সংকোচ করেন না। এটা দেখলে খারাপ লাগে ভাই। ওনাদের তো রাগ একটু বেশি। কারও পরোয়া করেন না। ওই রাগটাই খাইছে। আওয়ামী লীগে না থাকাটাই কাদের সিদ্দিকীর সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।”

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মো. ছানোয়ার হোসেন তালুকদার

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। বেশ কয়েকজনের রাজাকারের ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে জমে থাকা কষ্টগুলোও আজ উবে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই বীরযোদ্ধা বলেন:

“আমার ভাই মোস্তাফিজও যুদ্ধে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফিরে আসেননি। টাঙ্গাইলের এক অপারেশনে শহীদ হন। স্বাধীন দেশে দেখলাম রাজাকারগো উত্থান। আর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ কইরা দুঃখ নিয়া টিকে ছিল কোনোরকম। সেই মুক্তিযোদ্ধাগো দুঃখের দিন কাটিয়ে দিয়েছে শেখের মাইয়া। একাত্তরে রাজাকাররা যে পাপ করছে সে পাপের শাস্তি ফাঁসি দিলেও কম হবে। জেলা পর্যায়ে সব রাজাকারগোও বিচার হওয়া উচিত। স্বাধীন দেশে চাই সব হত্যারও বিচার হোক।”

কথা ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে। টাঙ্গাইলে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মুক্তিযোদ্ধা ছানোয়ার বলেন:

“১৯৭৩ সাল থেকে ভাতা পাই। তখন তালিকাটা চূড়ান্ত করতে পারলে ভালো হত। এরপর তো টাকা দিলেই মুক্তিযোদ্ধার সনদ মিলত। গ্রামে গ্রামে গিয়ে কোন কোম্পানিতে কতজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল যাচাই করে তখন সনদ দিলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে বির্তক থাকত না। এখনও মুক্তিযোদ্ধাগো যাচাই-বাছাই হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান টাঙ্গাইলে বসে কি যাচাই-বাছাই করছেন তা-ও মানুষ দেখছে! আমাদের জন্য এটা লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে সারা দেশে টাকাপয়সার লেনদেন কঠোরভাবে ঠেকাইতে হবে। তা না হলে এ নিয়ে বির্তক থেকেই যাবে।”

 যে দেশের জন্য রক্ত দিলেন, স্বপ্নের সে দেশ কি পেয়েছেন?

খানিক নিরব থেকে মুক্তিযোদ্ধা ছানোয়ারের উত্তর, “দেশ পাইয়াও পাই নাই। আমরা মনে করেছিলাম, গরিব মানুষের উপকার হবে। ভেদাভেদ থাকবে না। কিন্তু তা তো রয়েই গেছে। বড়লোক বড়লোকই আর গরিব গরিবই রইছে।’

কী করলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে?

“সঠিক ও সৎ নেতৃত্ব থাকতে হবে। শেখ হাসিনা যথেষ্ট করতেছেন। তাঁর তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। দেশে কত দুর্যোগ গেছে, কিন্তু তবুও তাঁর নেতৃত্বে দেশ সঠিক পথেই আছে। নেতাকর্মীদের দুর্নীতি আর অপকর্মের কঠিন শাস্তি দিতে পারলে দেশটা সত্যি পাল্টে যাবে।’

স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাললাগার অনুভূতি জানতে চাই আমরা। উত্তরে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন:

“দেশ আগে কী ছিল? এখন দেখেন কেমন? ডিজিটাল হয়ে সবকিছু সহজ হয়ে গেছে। পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়। স্বাধীন দেশের উন্নতিটাই আমার মন ছুঁয়ে যায়।”

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. ছানোয়ার হোসেন তালুকদার মনে করেন প্রজন্মকে সৎ ও সঠিকভাবে তৈরি করাটাই আমাদের দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের নানা উৎপাদনমুখী কাজে প্রজন্মকে নিয়োজিত করতে পারলেই দেশ এগোবে। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি শুধু বললেন:

“আমার মুক্তিযোদ্ধারা রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছি। সেই স্বাধীন দেশটাকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বটা তোমাদেরই নিতে হবে।’

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

© 2017 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button