আদিবাসী

ওরাঁওদের বিপন্নতার গদ্য

দিনটি ছিল বৃহস্পতি। মধ্য বিকেল। দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী টিনপাড়া গ্রামটি প্রায় পুরুষশুন্য। হাঁকডাক দিয়েও ওই ওরাঁও গ্রামটিতে কোনো পুরুষের দেখা মিলল না। হাট বসেছে পাশের বহবলদিঘী বাজারে। তাই সেখানে নানা জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন এ গ্রামের পুরুষেরা। কৃষি পেশা তাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। নানা কারণে জমি হারিয়ে জীবিকার তাগিদে তারা অনেকেই এখন যুক্ত হয়েছেন নানা ব্যবসায়।

এ গ্রামের ওরাঁওদের আজ সাহরাই উৎসব। গ্রামটিতে পা রেখে কোথাও উৎসবের ছিটেফোঁটা চোখে পড়ল না। তবে বাড়িঘর বেশ পরিচ্ছন্ন। পরিপাটি করে গোছানো। গোবর লেপা উঠোন। একটি বাড়ির এক কোণে মাটি লেপা তুলসীতলা। সেখানে জল ছিটিয়ে গৃহঠাকুরকে ভক্তি করছেন এক বৃদ্ধা। নামটি তিনি নিজেই জানালেন।

মুংলী তির্কী। বয়স আশির মতো। চোখেমুখের চামড়া ভাঁজখাওয়া। ভাঁজের পরতে পরতে যেন ইতিহাস লুকানো। আমাদের চোখ আটকে যাচ্ছিল সেদিকে। তিনি বললেন, সকালে-সন্ধ্যায় তুলসীতলার এমন আচার চলে টিনপাড়ার ওরাঁও বাড়িগুলোতে। তবে সব পরিবারে নয়। কেন? উত্তরে প্রথমে দীর্ঘনিশ্বাস, অতঃপর মুংলী হড়হড় করে বলতে থাকলেন।

এক সময় শতাধিক পরিবারের বসবাস থাকলেও এ গ্রামে এখন রয়েছে মাত্র বিশটি ওরাঁও পরিবার। স্থানীয় বাঙালিদের থেকে নিজের জমিজমা টেকাতে না পেরে বাকিরা চলে গেছেন কাঁটাতারের ওপারে, ভারতে। এই বিশ ওরাঁও পরিবারের মধ্যে পাঁচ পরিবার খ্রিস্ট আর তিন পরিবার বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নিয়েছেন। সীমাহীন দারিদ্র্য আজ বাসা বেঁধেছে ওরাঁও সমাজে। ফলে তারা অভাবের তাড়নায় টিকিয়ে রাখতে পারছেন না পূর্বপুরুষদের আদি সনাতন ধর্মবিশ্বাসটিকে। ধর্মান্তরিত ওরাঁও পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা। স্বাস্থ্য সেবা ছাড়াও শিশুরা পাচ্ছে মিশনারী স্কুলে পড়ার সুযোগ। আর বাকি পরিবারগুলো এখনও বিপন্ন। গোটা গ্রামে চলছে ধর্মান্তরের টানা পোড়ন। যারা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছেন তারা চান বাকিরাও এ ধর্মে দীক্ষিত হোক। খ্রিস্টান ওরাঁওরা চান সবাই খ্রিস্ট ধর্ম লাভ করুক। এভাবে টিনপাড়ার চেনা মানুষগুলো মুংলীর কাছে আজ যেন অচেনা হয়ে উঠেছে।

ওরাঁও দুই প্রজন্ম
ওরাঁও দুই প্রজন্ম

ধর্মান্তরের টানা হেচরায় ওরাঁওদের আদি সনাতন ধর্ম আজ প্রায় বিপন্ন। টিনপাড়ার ওরাঁওরা সাহরাই ছাড়াও ফাগুয়া, সারহুল উৎসব পালন করে থাকে। ধর্মান্তরিত ওরাঁওরা উৎসবে শুধু নাচগান পর্বে অংশ নিলেও বাকি আচারগুলো তাদের কাছে এখন শুধুই কুসংস্কার। ফলে বুকের ভেতর এক ধরনের জমানো কষ্ট নিয়ে জীবন পার করছে টিনপাড়ারসহ সারাদেশের ওরাঁওরা।

আমরা সাহরাই উৎসবের অপেক্ষায় থাকি। মনের ভেতর তখন ঘোরপাক খায় ইতিহাসে ওরাঁওদের আগমনের নানা তথ্য।

ওরাঁওরা এ উপমহাদেশের ভূমিজসন্তান। তারা বসতি স্থাপনের লক্ষ্যে কংকা নদীর উপকূল থেকে যাত্রা শুরু করে কনাটকা হয়ে অমরকন্টক ফরেস্ট রেঞ্জে এসে পৌঁছায়। অনেকেই মনে করেন, খ্রিস্ট জন্মের ১৭৫০ বছর আগে হরপ্পা থেকে ওরাঁওরা শাহাবাদের রোহটাস অঞ্চলে চলে আসে। যা বর্তমানে হরিয়ানা এবং যমুনার সমতলভূমি হিসেবে পরিচিত। শারীরিক গঠন ও ভাষাগত বিচারে ওরাঁওরা দ্রাবিড়িয়ান গোষ্ঠীভূক্ত। তাদের বসবাস ছিল ভারতের উড়িষ্যা, ছোট নাগপুর ও রাজমহল অঞ্চলের পার্বত্য এলাকায়। দেশ ভাগের আগেও দিনাজপুরে বহু সংখ্যক ওরাঁওদের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন দলিলে।

১৭৮০-১৭৮২ খ্রিস্টাব্দের কথা। ওই সময় দিনাজপুরের রাজজমিদারির দেওয়ান ছিলেন দেবী সিংহ। তিনি তার খেয়াল খুশিমতো ধার্যকৃত খাজনা আদায় করতে কৃষকদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালান। ফলে ওই সময় গোটা উত্তরবঙ্গই কৃষকশুন্য হয়ে পড়ে। এতে অনাবাদি অবস্থায় পরে থাকে ফসলি জমিগুলো। দেবী সিংহের পতনের পর দেওয়ান নিযুক্ত হন রাজমাতুল জানকিরাম। তিনি অনাবাদি জমি চাষাবাদের জন্য সাঁওতাল পরগনা, ছোট নাগপুর, দুমকা, রাজমহল প্রভৃতি অঞ্চল থেকে আদিবাসী কৃষক ও শ্রমিক নিয়ে আসেন এবং তাদেরকে খাজনামুক্ত জমির বন্দোবস্ত দেন। এভাবেই দিনাজপুরে আগমন ঘটে ওরাঁওদের। এছাড়া রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগা, নাটোর প্রভৃতি অঞ্চলেও তাদের বসবাস রয়েছে।

সন্ধ্যা হয় হয়। ওরাঁও গ্রামের পুরুষেরাও ফিরতে শুরু করেন। গোত্রের মহত নিপেন টি¹া হাসিমুখে সঙ্গ দেন আমাদের। তিনি জানালেন লুপ্ত হওয়া তাদের গ্রাম পরিষদের কথা। এক সময় ওরাঁও গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ছিল তাদের নিজস্ব গ্রাম পরিষদের হাতে। ওরাঁও ভাষায় এটি-পাঞ্চেস। বয়োবৃদ্ধ সাত-আটজনকে নিয়ে গঠিত হতো এ গ্রাম পরিষদ। প্রতিটি পরিষদে থাকত একজন মহত বা মাহাতো এবং একজন পুরোহিতসহ অন্যান্য পদ। আবার পাঞ্চেস এর উপরের সংগঠনের নাম ছিল পাঁড়হা। পাঁড়হা সাধারণত  সাত থেকে বারটি ওরাঁও গ্রাম নিয়ে গঠিত হতো। এ সকল গ্রামের মাহাতো বা মহতদের মধ্য থেকে একজন পাঁড়হা প্রধান নিযুক্ত হতেন। ওরাওঁ ভাষায় তাকে বলে-পাঁড়হা রাজা। কিন্তু সময়ের হাওয়ায় ওরাঁওদের আদি গ্রামপরিষদটি এখন আর টিকে নেই। টিনপাড়ার ওরাঁও গ্রামের পরিষদটি চলছে শুধুমাত্র মহত পদটি নিয়ে। কেননা যেকোন ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানা আনুষ্ঠানিকতায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয় গোত্রের মহতকে। মূলত মহত পদটি নিয়েই টিকে আছে ওরাঁওদের আদি গ্রাম পরিষদটি।

হঠাৎ ঢোল-মাদলের বাদ্যি। উঠোনের এককোণে একদল ওরাঁও আদিবাসী গাইছে। যে গানের ভাবার্থ হয়: বাড়িওয়ালা তুমি বাতি জ্বালিয়ে কী করো, কীসের জন্য বাতি জ্বালাও, বাতি জ্বালিয়ে গোয়ালে গরুগুলোকে জাগিয়ে তুলছি এবং পরে কৃষককে জাগিয়ে তুলবো পূজার জন্য।

সময়টা ছিল আশ্বিনের চাঁদের অমাবস্যার পরের দিন। এ দিনেই ওরাঁওরা গবাদিপশুর কল্যাণে সাহরাই উৎসব পালন করে থাকে। উৎসবটি তিন দিনের। গানের সুরে সুরে এরা একে একে ঘরে, উঠানে, গোবর ফেলার জায়গাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রদীপ জ্বালায়। এটিই উৎসবের প্রথম দিনের আনুষ্ঠানিকতা।

মহত জানালেন, দ্বিতীয় দিন গরু, মহিষ, ছাগল প্রভৃতিকে স্নান করিয়ে তেল ও সিঁদুর মাখানো হয়। লাঙল, জোয়ালসহ চাষাবাদের সকল যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করে মাখানো হয় সিঁদুরের রঙ। তৃতীয় দিন মূল পূজার আগেই তারা গোয়াল মাটি দিয়ে লেপে পরিষ্কার করে। শালবন থেকে উলুর ঢিবির মাটি এনে তিন ভাগে উঁচু করে দেয় মেঝেতে। একই সঙ্গে সেখানে সিঁদুর, বেলপাতা, কলাপাতা, দুর্বাঘাস, আতপ চাল, জবা ফুল দিয়ে এবং ধূপ জ্বালিয়ে মুরগী বলি দিয়ে পূজা করে ওরাঁওরা। পূজা শেষে প্রথমেই গরু-ছাগলকে খাওয়ানো হয়। এরপর বাড়ির সবাইকে গোয়াল ঘরে বসেই সেরে নিতে হয় খাওয়া-দাওয়া। সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালানো হয় গোয়ালসহ বাড়ির বিভিন্ন স্থানে। এক সময় এ উৎসব চলত কয়েকদিন। ধুমধাম ছিল বেশি। তখন সাহরাই উৎসবের রাতে ওরাঁও গ্রামগুলো থাকত আলোকোজ্জ্বল। কিন্তু দারিদ্র্য ও ধর্মান্তরের টানাপোড়নে ওরাঁওদের উৎসবগুলো চলছে ঢিমেতালে।

আমাদের আসরে যোগ দেন গোত্রের মায়া টিগ্গা। বয়স নব্বই ছুঁইছুঁই। বয়সের টানে তিনি হারিয়েছেন দুইপাটির দাঁতগুলো। ফোকলা দাঁতে হাসি তুলে তিনি বসে পড়েন এককোণে। খবর পেয়ে আরেকবাড়ি থেকে আসেন তারই বোন পারলো টিগ্গাও।

এ গ্রামের ওরাঁওরা দুটি ভাষায় কথা বলে। একটি -কুঁড়ুখ অপরটি-সাদরী ভাষা। মুংলী আমাদের বুঝিয়ে দেন তাদের ভাষাটিকে। কারও নাম জানতে ওরাঁওরা কুঁড়ুখ ভাষায় বলে-নিহাই নাম এন্দা, আর সাদরী ভাষায় বলে -তোর নাম কা। কেমন আছেন- বাক্যটিকে কুঁড়ুখ ভাষায় বলে- একাশে রাদি, আমি খাই বাক্যটিকে বলে- এঙ অনদান। ওরাওঁদের ভাষার নিজস্ব কোন লিখিত বর্ণ নেই। মায়ের ঘুম পাড়ানি গান আর বাবার আদর আর বকুনি থেকেই ওরাঁওরা শিশুরা শিখে নেয় তাদের মাতৃভাষাটিকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ওরাঁও ভাষা রক্ষার কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি অদ্যাবধি।

ওরাওঁ বৃদ্ধা পারলো
ওরাওঁ বৃদ্ধা পারলো

টিনপাড়ার ওরাঁও গ্রামে আদিবাসী শিশুর সংখ্যা ত্রিশ। কিন্তু এদের কেউই অষ্টম শ্রেণী অতিক্রম করতে পারে নি। আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের ব্যবস্থা না থাকা, স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়েও  কোনো আদিবাসী শিক্ষক না থাকাই এর প্রধান কারণ। ফলে পঞ্চম শ্রেণীর আগেই ঝড়ে পড়ছে অধিকাংশ আদিবাসী শিশু। আবার আশেপাশে বাংলা ভাষভাষীর প্রভাবে ওরাঁওদের মাতৃভাষাটিও আজ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। গ্রামের প্রবীণ আদিবাসীরা নিজ ভাষায় কথা বললেও নতুন প্রজন্মের ওরাঁওরা তাদের ভাষাটির ব্যবহার জানে খুবই সামান্য। ফলে ক্রমেই বিপন্ন হয়ে পড়ছে ওরাঁওদের ভাষাটি।

কথায় কথায় আমাদের চোখ পড়ে মুংলী, মায়া ও পারলোর কপাল ও গলায়। সবার কপাল ও ঘাড়ের চামড়ায় হালকা কালো রঙের দাগ। কিসের দাগ এটি? প্রশ্ন করতেই  মুংলী বললেন এটি -উল্কি। ওরাঁওরা গায়ে উল্কি আঁকেন। এটি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস। পাশে বসা পারলো টিগ্গা বলেন উল্কি নিয়ে ওরাওঁদের নানা বিশ্বাস ও আচারের কথা।

বার-চৌদ্দ বছর বয়স হলেই ওরাওঁদের বিশেষ নিয়ম মেনে নারী-পুরুষ উভয়ের শরীরে উল্কি আঁকতে হয়। প্রথমে এক প্রকার লতা বেটে তার সঙ্গে মাটির পাতিলের নিচের পোড়া কালি আর দুধ মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করা হয়। অতঃপর এক জোড়া সুচ আগুনে পুড়িয়ে দেহের যেখানে যেখানে উল্কি আঁকতে হবে সেখানে দ্রুত স্পর্শ করে আঁকা হয় নানা চিত্র। এরপর সে জায়গায় লতাবাটা, কালি আর দুধ মিশ্রণ লাগিয়ে দেয়া হয়। ঘা শুকালে কালো রঙের চিরস্থায়ী উল্কির আকার ভেসে ওঠে চামড়ার মধ্যে। এ রঙ সারা জীবনে এতটুকুও পাল্টায় না।

কবে এবং কেন ওরাঁও সমাজে উল্কি আঁকার প্রচলন হলো, এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে একটি অভিন্ন আদিবাসী কাহিনি। কাহিনিটি-

পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতে মানুষ ছিল এক জাতের। কারো কোনো পেশা ছিল না। পেশা না থাকায় ছিলনা কোনো জাতও। পেশা গ্রহণের জন্য ধরমেশ (সৃষ্টিকর্তা) সবাইকে ডেকে পাঠালেন। সবাই উপস্থিত হলো।

ধরমেশ একজনকে দিলেন লাঙল। তখন সে হলো চাষি। আরেকজনকে দিলেন কুঠার। সে হয়ে গেল কাঠুরে। একজনকে দিলেন মাছ ধরার জাল। সে হলো জেলে। একজনকে দিলেন কাপড় বুনার সুতা। সে হয়ে গেল তাঁতী।

সবাই সব কিছু পেলো। অবশিষ্ট থাকলো একটি দোতরা। শেষে এক ব্যক্তি পেল সেটি। সে ব্যক্তি দোতরা নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে গান গায়। ফলে সমাজে তার সম্মান বেড়ে যায়।

একদিন সে বাড়ি ফিরে রান্না ভালো না হওয়ায় স্ত্রীকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে স্ত্রী চলে যায় বনে। বনের মধ্যে ছিল এক দেবতা। তিনি তার কান্না থামিয়ে বললেন, আমি তোমাকে এমন কাজ দেবো যে কাজের জন্য সবাই তোমাকে কদর করবে।

দেবতা তাকে উল্কি আঁকার সব পন্থা শিখিয়ে দিল। সে থেকেই পৃথিবীতে উল্কির প্রচলন শুরু হয়। তাই শুধু উল্কি চিহ্ন নয়, উল্কি শিল্পীও ওরাঁওদের কাছে পবিত্রতার প্রতীক।

আদিকালে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে শনাক্তকরণের একমাত্র চিহ্ন ছিল এই উল্কি। ওরাঁওরা উল্কি আঁকার পূর্বে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে বলি দিয়ে পূজা করে। সাধারণত উল্কি আঁকার স্থান হাতের তালু, হাতের এপিঠ ওপিঠ, বুক, কপাল এমনকি গন্ডদেশ। উল্কি হিসেবে আঁকা হয় লতাপাতা, গোলচক্র, পশুপাখি, সূর্য, চন্দ্র, তারা প্রভৃতি।

ওরাঁওরা বিশ্বাস করে কোনো নারী বা পুরুষ যদি উল্কিবিহীন মারা যায় তবে যমরাজা তাকে মানবরূপে গ্রহণ করে না। ফলে অনন্তকাল তাকে নরকে পড়ে থাকতে হয়। আর এ কারণেই ওরাঁও সমাজে মৃত্যুর পরে দাহ করার আগে মৃতের শরীরে উল্কি একে দেয়া নিয়ম। কিন্তু ওরাঁওদের এই আদি রীতিটিও লুপ্ত হওয়ার পথে।

ওরাঁও আদিবাসী সমাজে গোত্র রয়েছে বিশটির মতো। একই গোত্রের সবাই সমতুল্য বলেই বিশ্বাস এরা বিশ্বাস করে। তাই এদের একই গোত্রে বিয়ে সম্পন্ন নিষিদ্ধ ও পাপ হিসেবে গণ্য। সংখ্যায় কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলে এখন শুধু একই গোত্রেই নয়, ওরাঁওদের বিয়ে হচ্ছে কড়া, মুন্ডা, তুরি প্রভৃতি আদিবাসীর সঙ্গে। ফলে ওরাওঁ বিয়ের আদি রীতিগুলোও পাল্টে যাচ্ছে অন্য জাতির সংমিশ্রণে।

রাত বাড়তে থাকে। আমাদের মুখে মুখে তখন ওরাঁও বিশ্বাসের নানা কাহিনি। থেমে থেমেই বাজছে ঢোলমাদল।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে সমকাল ঈদসংখ্যা ২০১৬-তে

© 2016 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button