কীর্তিমান বাঙালি

বন্দে আলী মিয়া: ছোটদের গল্পদাদু

বন্দে আলী মিয়া। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, শিশুসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিত্রকর। তিনি পরিচিত ছোটদের ‘গল্পদাদু’ হিসেবে।
‘ আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান, আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ। মাঠভরা ধান আর জলভরা দিঘি, চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি। আমগাছ জামগাছ বাঁশঝাড় যেন, মিলেমিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন।’– খুব পরিচিত এই কবিতাটি বন্দে আলী মিয়া লিখেছেন ।
১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনা জেলার রাধানগর উপজেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর বাবার নাম উমেদ আলী মিয়া ও মা নেকজান নেছা।বন্দে আলী মিয়া ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন রাধানগর মজুমদার একাডেমি থেকে। এরপর ভর্তি হন কলকাতা আর্ট একাডেমিতে। ১৯২৭ সালে সেখান থেকে তিনি চিত্রকলায় ১ম বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
কবি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পড়াশোনা শেষ করার আগেই। সাংবাদিক হিসেবে। ১৯২৫ সালে ইসলাম দর্শন পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে বন্দে আলী কাজ করা শুরু করেন। ১৯৩০ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগ দেন কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে। সেখানে দীর্ঘ ২০ বছর চাকরি করে ১৯৫০ সালে অবসর গ্রহণ করেন।ষাটের দশকে প্রথমে তিনি ঢাকা বেতারে ও পরে রাজশাহী বেতারে চাকরি করেন। পাশাপাশি কবি বিভিন্ন গ্রামোফোন কোম্পানির জন্য পালাগান ও নাটিকাও রচনা করেন। সেগুলো রেকর্ড আকারে বের হলে তিনি বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেন।
বন্দে আলী মিয়ার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে দারিদ্র্যে। কিন্তু তবুও সাহিত্যচর্চায় তিনি আপোষ করেননি। লিখে গেছেন অবিরাম। লিখেছেন বাংলার জীবন ও প্রকৃতির রূপ নিয়ে। আর লিখেছেন ছোটদের নিয়ে, ছোটদের জন্য, ছোটদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।

কবি যখন বেতারে কাজ করতেন, তখন ছোটদের জন্য একটা অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন তিনি। নাম ছিল ‘সবুজ মেলা’। বেতারে ছোটদের জন্য আরও একটা অনুষ্ঠান হত তখন– ‘ছেলে ঘুমাল’। সে অনুষ্ঠানের জন্য প্রায়ই নিত্যনতুন গল্প লিখে দিতেন তিনি। আর এসব করতে করতেই তিনি গল্পদাদু হয়ে গেলেন।
বন্দে আলী মিয়া সব মিলিয়ে প্রায় দেড়শ’র মতো বই লিখেছেন। যার মধ্যে ১০৫টি বই-ই ছোটদের জন্য। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে– ‘ময়নামতির চর’, ‘অরণ্য’, ‘গোধূলী’, ‘ঝড়ের সংকেত’, ‘নীড়ভ্রষ্ট’, ‘জীবনের দিনগুলো’, ‘অনুরাগ’। আর ছোটদের জন্য লেখা বইগুলোর মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল চোর জামাই, মেঘকুমারী,  মৃগপরী, বোকা জামাই, কামাল আতাতুর্ক, ডাইনি বউ, রূপকথা, কুঁচবরণ কন্যা, ছোটদের নজরুল, শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালা, বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা ইত্যাদি।

বন্দে আলী মিয়া শিশুসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ১৯৬২ সালে পান বাংলা একাডেমী পুরস্কার। ১৯৬৫ সালে পান প্রেসিডেন্ট পদক। মৃত্যুর পরও তিনি পেয়েছেন দুটো মরণোত্তর পদক– ১৯৮৮ সালে একুশে পদক, ১৯৯০ সালে স্বাধীনতা পদক।
১৯৭৯ সালের ২৭ জুন কবি বন্দে আলী মিয়া মৃত্যু বরণ করেন।
তথ্য ও ছবি : সংগৃহীত

© 2014 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button