মুক্তিযুদ্ধ

পরের যুদ্ধটা ছিল আরও কঠিন

‘‘২৬ মার্চ, ১৯৭১। ভোরবেলা। লোকমুখে খবর আসে ঢাকায় আর্মি নেমেছে। গ্রামের সবার মনে আতঙ্ক। পাকিস্তানি সেনারা এই বুঝি এসে পড়ে! ভয়ে তটস্থ সবাই। এভাবেই কেটে যায় দিন দুয়েক। এক দুপুরে চলে আসে পাকিস্তানি সাঁজোয়া বাহিনী। তারা ক্যাম্প বসায় গরীবপুর, উজিরপুর ও চৌগাছায়।
আমাদের গ্রামের খুব কাছেই ছিল চৌগাছা। প্রায় দিনই পাকিস্তানি সেনারা নিকটবর্তী গ্রামগুলোতে অত্যাচার চালাত। লোক চিনিয়ে ও পথ দেখিয়ে তাদের সাহায্য করত শান্তি কমিটির লোকেরা।’’

খানিক দম নিয়ে ওহিদুল ইসলাম খান আবার বলতে শুরু করেন-
‘‘আমরা ছিলাম গ্রামের সাধারণ তরুণ। গোলাগুলি কী জিনিস জানতাম না। একদিন ওয়াদুদ, জায়েদ ও কাশেমসহ কয়েক বন্ধু একটি সংবাদ নিয়ে এল। ‘ইন্ডিয়া থাকি বোমা দিচ্ছে পাঞ্জাবিদের মারার জন্য।’ শুনেই আমাদের চোখেমুখে আলো ছড়ায়। গোপনে আমরা যুক্তি করলাম– বোমা আনতে যাব ভারতে।
মার্চের শেষদিকের কথা। বোমার খোঁজে এক রাতে ঘর ছাড়লাম। খলশি বাজার হয়ে কপোতাক্ষ নদ পার হই আমরা। ভোরের আলো ছড়াতেই পৌঁছে যাই ভারতের বয়রায়। ‘ভাই, বোমা মিলবে কোথায়?’ এমন প্রশ্নে স্থানীয়রা মুচকি হাসে। অবাক হয়ে চেয়ে থাকে মুখপানে। তারা বুঝে যায় আমরা ‘জয় বাংলা’র লোক। এক বৃদ্ধ বললেন, ‘বোমা পেতে ট্রেনিং নিতে হয়।’

আমরা তাতেই রাজি হই। জেনে নিই ট্রেনিং ক্যাম্পের ঠিকানা। বনগাঁ হয়ে আমরা আসি ৫ নং টালিখোলায়। সেখানে পনের দিন চলে লেফট-রাইট। কয়েকদিন কাটে অনাহারে, শুধু পানি খেয়ে। কী যে কষ্ট ছিল ওই সময়টায়! সেখান থেকে আমরা চলে যাই রানারঘাটে। আমাদের রিক্রুট করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রথমে কল্যাণে এবং পরে বিহারের চাকুলিয়ায়। ওখানেই আমরা অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিই আটাশ দিন। আমি ছিলাম ফোর উইংস-এ। আমার এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) নং ৪৮৮৪৬।’’

ডান উরুতে বিদ্ধ গুলির দাগ দেখাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুল
ডান উরুতে বিদ্ধ গুলির দাগ দেখাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুল

বোমা আনতে গিয়ে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে ফিরলেন, সে কাহিনিই শুনছিলাম যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. ওহিদুল ইসলাম খানের মুখে।
তার বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার জগদিশপুর গ্রামে। বাবা গোলাম রহমান ছিলেন একজন সরকারি চাকুরে। মা সাহার বানু সাধারণ গৃহিনী। চার ভাই ও দুবোনের সংসারে তিনি ছিলেন সেজো। একাত্তর সালে তিনি ছিলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী। লেখাপড়ায় তার হাতেখড়ি জগদিশপুর প্রাইমারি স্কুলে এবং শেষ করেন যশোর মুসলিম একাডেমিতে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের ছোঁড়া একটি গুলি তার ডান উরুতে বিদ্ধ হয়। অপর এক সম্মুখসমরে আর্টিলারি সেলের স্প্রিন্টারের আঘাতে জখম হয় ওই পায়েরই হাঁটুর নিচের অংশ।
মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুল কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। মাঝেমধ্যে স্কুল পালিয়ে নৌকা ভাসাতেন মরজাত বাঁওড়ে। বাঁওড়ের জলে সাঁতার কাটা আর মাছধরাতেই ছিল তার আনন্দ। বাল্যবন্ধু মণ্ডল, মমিনুল, আজিজুল, সাহেবের সঙ্গে হাডুডু ও দাঁড়িয়াবান্ধা খেলার কথা মনে হলে আজও তিনি উদাস হয়ে যান।
দেশের অবস্থা তখন কেমন ছিল? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন নানা বৈষম্যের কথা।
তার ভাষায়, ‘‘দেশের অবস্থা তখন খুবই খারাপ। আমাদের কাগজ পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে রিফাইন হয়ে আবার ফিরে আসত। সে কাগজই আমাদের কিনতে হত চড়া দরে। বাঙালিদের কোনো মূল্য ছিল না। কোনো অফিসে একজন বাঙালি কাজ পেলে ওরা পেত দশজন। সে সময় বাঙালিদের পক্ষে কথা বলতেন ভাসানী ও শেখ সাহেব। বড়দের মুখে তাদের গল্প শুনতাম আমরা। খেলার ফাঁকে মাঠে বসে এসব নিয়ে মাঝেমধ্যেই বন্ধুরা সবাই আলাপ জমাতাম।’’

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুল ইসলাম শোনেন ফুপুর বাড়িতে, রেডিওতে। রক্ত গরম করা সে ভাষণ শুনলে আজও তিনি উদীপ্ত হন। তার ভাষায়, ‘‘বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা কর।’ বঙ্গবন্ধুর মতো এমন হৃদয়ছোঁয়া ভাষণ আর কারও কণ্ঠে শুনিনি।’’
মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুল ইসলাম খানের বয়স এখন সত্তরের কাছাকাছি। মেশিন ছাড়া তিনি কানে শোনেন না। বয়সের ভারে প্রায় নুয়ে পড়েছেন। স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে বহু ঘটনা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আজও তার মনে জীবন্ত হয়ে আছে। স্মৃতি হাতড়ে তিনি জানালেন ওই সময়কার কয়েকটি অপারেশনের কথা।
তিনি বলেন, ‘‘ট্রেনিং তখন শেষ। আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিয়ালদা। ওখান থেকে খুলনার শেষ সীমান্তে, দক্ষিণ বাগুনডিয়ায়। আমরা ছিলাম গেরিলা। ব্রিজ, কালভার্ট, ট্রেন লাইন, টেলিফোন লাইন উড়িয়ে দেওয়াই ছিল কাজ। আক্রমণ করেই সরে পড়তাম। কিন্তু বাগুনডিয়ার পথঘাট আমাদের চেনা ছিল না। ফলে অপারেশন করতে গিয়ে পড়তে হত নানা বিপত্তিতে। কিন্তু তবুও বন্ধ ছিল না অপারেশন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ওহিদুলের ব্যবহৃত পেমেন্ট কার্ড
মুক্তিযুদ্ধকালীন ওহিদুলের ব্যবহৃত পেমেন্ট কার্ড

দক্ষিণ বাগুনডিয়া থেকে আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় বয়রায়। ৮নং সেক্টরের অধীন বয়রা সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর হুদা। তার অধীনে আমি, জাফর, হেলাল, গোলাম জারিয়া, ওয়াদুদ, জাহিদসহ ১০ জন ছিলাম স্পেশাল ফোর্সে। ওই এলাকার সব পথঘাট ছিল আমাদের চেনা। পাকিস্তানি সেনাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাদের ওপর আমরা হ্যারেজমেন্ট ফায়ার করতাম। এভাবেই আমরা অপারেশন করি চৌগাছা, উচিতপুর, অ্যারোলের বিল প্রভৃতি এলাকায়।’’

কোন অপারেশনে গুলিবিদ্ধ হলেন?
এমন প্রশ্নে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. ওহিদুল ইসলাম চুপ হয়ে যান। অতঃপর লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে বলতে থাকেন, ‘‘সময়টা মে মাসের মাঝামাঝি। একটি ব্রিজ ছিল শৈলোবাজারে। ওই পথেই পাকিস্তানি সেনারা চৌগাছি থেকে যশোরে চলাচল করত। আমাদের ওপর নির্দেশ আসে ব্রিজটি উড়িয়ে দেওয়ার।
মুক্তারপুর ছিল মুক্ত এলাকা। তাই আমরা প্রথমে সেখানে আশ্রয় নিলাম। তখন দুপুরবেলা। আমরা ব্রিজ উড়ানোর পরিকল্পনা করছি। হঠাৎ এক লোক এসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকল। তার বাড়ি পাশের গরীবপুরে। ওই গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। পালা করে তারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে বাঙালি তরুণীদের। লোকটি আমাদের সাহায্য চাইল। আমরাও তাকে বিশ্বাস করলাম।
সন্ধ্যা তখন হয় হয়। আমরা গরীবপুরে। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। তবুও পিছপা হলাম না। আমরা ছিলাম ২২ জন। উঠি ওই লোকের বাড়িতে। আমাদের পেয়ে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। খাসি জবাই করে রান্নার প্রস্তুতি নেন। আয়োজনের ফাঁকে তিনি গোপনে খবর দিয়ে আসেন পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে। আমরা তার কিছুই ঠাওর করতে পারিনি।
আমাদের বসানো হলো ঘাসকাটার একটি ঘরে। পাশেই বিস্তীর্ণ বিল অঞ্চল। নাম অ্যারোলের বিল। ওই ঘরের দরজায় আমি এলএমজি সেট করি। এসএলআর সেট করব জানালাতে। জানালার ওপাশে বাইরে তাকাতেই দেখি, দুপাশ থেকে পিঁপড়ের মতো পাঞ্জাবিরা আমাদের ঘিরে ফেলছে। আমরা যে যার মতো সরে পড়লাম। অ্যারোলের বিলেই হল আমাদের আশ্রয়।
আমার কাছে স্টেনগান। বিলের মধ্যে ধানগাছের নিচে আমি মাথাটা ডুবিয়ে রাখলাম। পাঁচশ গজ সামনে পাকিস্তানি সেনা। আমাকে লক্ষ্য করে তারা গুলি ছুঁড়ছে। আমি সামান্য সরে যাই। পানির নিচে ডুব দিয়ে মাথাটা বাঁচাই। পানির মধ্যে চু চু শব্দে গুলি আসছে। মাথা তুললেই মারা পড়ব। স্টেনগানটি পরিষ্কার করে আমি ধানখেতে পজিশন নিই। ট্রিগার টিপ দিতেই শুনলাম ‘ইয়া আলী’ বলে চিৎকারের শব্দ। আমার গুলিতে এভাবেই মারা পড়ল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা।
আমি পেছন ফিরে সাঁতার দিয়ে সামনে এগুব। অমনি একটি গুলি এসে লাগে আমার ডান উরুতে। গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছিল। পানি লেগে তাতে ভীষণ জ্বালা করছে। তবুও খেয়াল নেই আমার। মৃত্যুভয় মনে। এই বুঝি ধরা পড়ে যাই। শুধু আল্লাহর নাম জপছিলাম। অস্ত্রটা কাদায় লুকিয়ে ধীরে ধীরে বিলের পানিতেই গা ভাসালাম। বিল পেরিয়ে রাতের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম মুক্তারপুরে। দুতিনদিন থাকি রেস্টে। অতঃপর সুস্থ হয়েই আবার ফিরি অপারেশনে।’’
আরেক অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুল ইসলাম পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন। সেদিনকার কথাও বললেন, ‘‘বয়রা ক্যাম্প তখন ছাড়ব-ছাড়ব অবস্থা। আমাদের সঙ্গে যোগ দিল ভারতীয় শিবসেনারা। তখন সম্মিলিতভাবে আমরা যুদ্ধ করছি। সামনের দিকে থেকে আমরা তাদের রাস্তা চিনিয়ে দিই। হারকাণ্ডি নামক স্থানে আমরা পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়ি। আমরা যেখান থেকে আর্টিলারি মারি, ওরা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঠিক সে জায়গাতেই আর্টিলারি ছুঁড়ছিল। আমরা টিকতে পারছিলাম না।
হঠাৎ একটি সেল এসে পড়ে আমার সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি স্প্রিন্টার আমার ডানপায়ের হাঁটুর নিচের পাতায় আঘাত হানে। প্রথমে টের পাইনি। রক্তে ভিজে যাচ্ছিল পা। ঘাস চিবিয়ে জখমের জায়গায় চেপে ধরলাম। খানিক পরেই বন্ধ হয়ে যায় রক্তপড়া। পরে ক্যাম্পে চিকিৎসা নিয়ে সেরে উঠি।’’
স্বাধীনতার পরের জীবন নিয়ে আক্ষেপ আর অভিমানের মেঘ জমা ছিল যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুল ইসলামের মনে। ওই প্রসঙ্গ ওঠাতেই সে মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে তার দুচোখে। একজন মুক্তিযোদ্ধার কান্না আমাদের স্পর্শ করে।

ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘পরের যুদ্ধটা ছিল আরও কঠিন। ঢাকায় থাকতাম বোনের বাসায়। অনেক খুঁজেও কোনো কাজ পাইনি। অতঃপর টাইপ শিখে শুরু করি জীবনসংগ্রাম। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে টাইপের কাজ করতাম। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতাম না। কাজ করে যা পেতাম তা দিয়ে চলত না সংসার। ধারদেনা লেগেই থাকত। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে বহুকষ্টে।’’
সরকারি সাহায্যের কথা উঠতেই তিনি বলেন, ‘‘আমার মতোই গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা বিশ শতাংশ যুদ্ধাহত ভাতাসহ পাচ্ছেন নানা সুবিধা। কিন্তু আমি পাচ্ছি মাত্র ৫ শতাংশ ভাতা। হাইকোর্ট বারের চারতলায় বর্তমানে টেবিল সমান একটি জায়গা পেয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নয়, বরং ভালো টাইপের কাজ করার যোগ্যতা দিয়ে।’’
মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে এ বীর মুক্তিযোদ্ধা অকপটে ব্যক্ত করেন নিচের মতামতটি। তার ভাষায়, ‘‘কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের পরপরই তালিকা চুড়ান্ত করা উচিত ছিল। এখন যে তালিকা হচ্ছে, এগুলো না হওয়াই ভালো ছিল। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্ক। তালিকাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ কলঙ্কও বৃদ্ধি পাবে।’’
আক্ষেপ করে বললেন, ‘‘এখন তো কেউ কেউ গল্প শুনে মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে। গাছ থেকে পড়ে হাত-পা ভেঙ্গেছে– সেও হয়ে যাচ্ছে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। এর চেয়ে অপমানের আর কী আছে!’’
যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও আলশামসদের বিচার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুল বলেন, ‘‘সব সরকারই এদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে রাজনীতি করেছে। ফলে বিয়াল্লিশ বছরে এরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এদের বিচার নিয়ে এখনও চলছে নানামুখী রাজনীতি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলে এ জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে না।’’
বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যদিও বর্তমানে চিহ্নিত রাজাকাররা ওই তালিকায় ছিল না– তবুও ক্ষমা নয়, বরং ছোট-বড় উভয় অপরাধেরই বিচার হওয়া উচিত ছিল।’’
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খারাপ লাগার অনুভূতির কথা এভাবে বললেন ওহিদুল, ‘‘স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রী হয়েছে। তাদের গাড়িতে উড়েছে লাল সবুজ পতাকা। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এর চেয়ে বড় কষ্টের আর আপমানের বিষয় আর কিছুই নেই।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশে মানুষ নিরাপদে চলতে পারছে না। ব্যক্তিস্বার্থে হরতাল ডাকা হচ্ছে। দেশের স্বার্থে রাজনীতিবিদরা এক টেবিলে বসছেন না। তাদের কাছে দেশ বা মানুষ নয়, ক্ষমতাই বড়। দুর্নীতির বোঝা চেপে বসেছে দেশের ওপর। এমন দেশ তো আমরা চাইনি।’’
দেশের নানা সমস্যার মাঝেও নতুন প্রজম্মকে নিয়ে আশায় বুক বাঁধেন মুক্তিযোদ্ধা মো. ওহিদুল ইসলাম খান। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘তোমরা লেখাপড়া শিখে যোগ্য মানুষ হিসবে তৈরি হও। আমরা রক্ত দিয়ে দেশটা স্বাধীন করেছি। তোমরা ভালোবাসা দিয়ে দেশটাকে এগিয়ে নিও। মনে রেখ, দুর্নীতি থাকলে কোনো জাতি দাঁড়াতে পারে না। স্বার্থচিন্তা মানুষের বিবেক নষ্ট করে দেয়।”

লিখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ২৪.কমে, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৩

© 2013 – 2021, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button