কীর্তিমান বাঙালি

কবি বেলাল মোহাম্মদ : স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কবি বেলাল মোহাম্মদ। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শব্দসৈনিক তিনি।

বেলাল মোহাম্মদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামে।  প্রয়াত মাহমুদা খানম ও মোহাম্মদ ইয়াকুবের দশ সন্তানের মধ্যে তিনি পঞ্চম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আই-এ ২য় বর্ষ পর্যন্ত। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৩ লাগাতার ৯ বছর মিরেরশরাই-এর আমানটোলা খানকা শরিফে সূফি আবদুল লতিফের সান্নিধ্যে অবস্থান।

তিনি ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম চট্টগ্রাম কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬৪ সালে তিনি দৈনিক আজাদীতে উপসম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরই রেডিও পাকিস্তানের চট্টগ্রাম কেন্দ্রে স্ক্রিপ্টরাইটার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।

১৯৭১ সালে বেলাল মোহাম্মদ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। ২৬ মার্চ বেলাল মোহাম্মদ ও তার সঙ্গীরা মিলে কালুরঘাটের বেতার স্টেশনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন, যেখান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়।

১ জুন ১৯৭১-এ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বেতারের সহকারি পরিচালক পদে নিযুক্তিপ্রাপ্ত (মুজিবনগর কর্মচারি)। সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষে বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান পরিচালনা বিভাগ থেকে ১৯৯৪ সালে অবসর গ্রহণ। পড়াশোনা, লেখালেখি ও দেশ-বিদেশ ভ্রমণই ছিল তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত শখ।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের জন্য ২০১১ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কারও পান তিনি। এই পর্যন্ত তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬০টির অধিক। প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- কবিতা নয় (১৯৫৪), পর্যায়ক্রম নেই (১৯৬৯), অকাল অপাত্র (১৯৭৭), নির্বাচিত কবিতা (২০০১), স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র (১৯৮৩), ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার (২০০১), আমার প্রতিবাদের ভাষা (২০০৪), আর এক মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৬), জয় বাংলা রেডিও (১৯৯৬), বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ (২০০১), আমাদের বিশেষ দিনগুলো (২০০১), বীরশ্রেষ্ঠদের কথা (২০০১), অন্যকূলে পলিমাটি (২০০৯), উপনয়ন (২০০৯), চিত্ররূপা (২০০৯)।

৩০ জুলাই ২০১৩ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বেলাল মোহাম্মদের অমূল্য ভাষ্য

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বেলাল মোহাম্মদ ও তার সঙ্গীরা মিলে কালুরঘাটের বেতার স্টেশনে প্রতিষ্ঠা করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, যেখান থেকে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। এরপর নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ২০১০ সালের ২১ মার্চ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে এক আড্ডায় সেই

    কবি বেলাল মোহাম্মদ
কবি বেলাল মোহাম্মদ

সব স্মৃতি ফিরিয়ে আনেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কবি বেলাল মোহাম্মদ। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সিনিয়র রিপোর্টার প্রদীপ চৌধুরী।

প্রদীপ চৌধুরী: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কীভাবে স্থাপন করলেন এবং বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা কীভাবে জাতির কাছে পৌঁছে দিলেন সেটা একটু আমাদের বলবেন।

বেলাল মোহাম্মদ: মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্নে ২৬ শে মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন দখলদার বাহিনী আগের রাতে অর্থাৎ ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে হঠাৎ করে নিরস্ত্র জনতাকে আক্রমণ করে। ঢাকায় বিশেষ বিশেষ কি-পয়েন্ট স্টেশনগুলো দখল করে নেয়। তার মধ্যে রেডিও স্টেশনও ছিল। রেডিওতে গিয়ে তারা বিভিন্ন প্রচার শুরু করে।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের সময় আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু যে অসহযোগ আন্দোলন ডেকে ছিলেন তার প্রভাবে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ দলমত নির্বিশেষে সবাই উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। কতিপয় কুলাঙ্গার, রাজাকার, আলবদর যারা ছিল তারা ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুখে একটি স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’ এবং ‘জয় বঙ্গবন্ধু’। একক স্লোগান, একক নেতৃত্ব।
সেই সময় রেডিওতে রেডিওর লোক যারা ছিল তারাও উদ্বুদ্ধ ছিল এবং ৭ই মার্চের বক্তৃতায় সুস্পষ্টভাবে রেডিওর কর্মচারীদের উপরও নির্দেশ ছিল, যদি রেডিওতে বাঙালিদের স্বার্থে কথা বলতে না দেওয়া হয় তাহলে কোনও বাঙালি যেন রেডিও অফিসে না যায়।
২৬শে মার্চ সকাল বেলা স্বাভাবিক ভাবে আমরা লক্ষ করলাম, ঢাকা কেন্দ্র থেকে সামরিক বাহিনীর কথা বলা হচ্ছে। ওদের বক্তব্যই শুধু বলা হচ্ছে। কাজেই আমরা আর যাইনি রেডিওতে। আমি আর আমার সমমনা যারা আছি তারা চিন্তা ভাবনা করছি, যে কী করা যায়। এখন ঢাকা কেন্দ্র হলো ১০০ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার আর চট্টগ্রাম মাত্র ১০ কিলোওয়াট। আমাদের ৫০ মাইল ব্যসার্ধ রেডি আছে, ঐ ১০ কিলোওয়াট দিয়েই একটা কাউন্টার প্রোগ্রাম করার উদ্যোগ নেওয়া যায়।
প্রস্তুতি যখন নেওয়া হচ্ছিল প্রথমে আমি ছিলাম এনায়েতগঞ্জে, দাদা ডা. শফির বাড়িতে, সেখান থেকে আওয়ামী লীগের একটা অফিস ছিল জহুর হকার্স মার্কেটে, সেখানে গেলাম আমি। তিন দিনই তার সঙ্গে দেখা করার জন্য গেলাম, কিন্তু তার দেখা পেলাম না। ওখানে তরুণ যারা আমাকে একটা জীপ গাড়ি দিলেন, গাড়িটা নিয়ে প্রস্তুতি পর্বে সর্ব প্রথম কেন্দ্রকে পাহারা দেওয়ার জন্য গেলাম ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের কাছে। তাকে পাওয়া গেল। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ আমি পাহারার ব্যবস্থা করছি। আপনি কাজ আরম্ভ করেন।’
তো এক পর্যায়ে ব্রটকাস্টিং হাউজের সামনে পেলাম গোসাইলডাঙ্গা আওয়ামীলীগ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডা. আনোয়ার আলীকে। তিনি বললেন, ‘রেডিও যে চালু করবেন তাতে কী প্রচার করবেন?’ আমি বললাম, ‘কী আর প্রচার করবো বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনতা।
তিনি আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন। কাগজটা হলো ২৬শে মার্চ সকাল বেলা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মাইকিং করেছে চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান সড়কে যে ঢাকায় আক্রমণ হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের মহান নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এই বক্তব্যটুকু তার বার্তা আকারে গিয়েছিল ডা. আনোয়ার আলী বললেন।
তিনি সেটাকে বাংলায় অনুবাদ করে… তখনকার দিনে হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রেকর্ড করা হতো এবং সেটা দিয়েই আমরা শুরু করেছি। আমরা সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে চালু করতে পেরেছি এবং বিভিন্ন কণ্ঠে নাম ছাড়া ওই বক্তব্যটুকু প্রচার করেছি। 1002320_599548736763947_1876858329_nকিছুক্ষণ পর ওখানে এলেন এম এ হান্নান। তাকে আমি চিনতাম না। ডা. জাফর ছিলেন তখন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। তিনি আমাকে পরিচয় করে দিলেন যে ইনি আমদের হান্নান ভাই। হান্নান ভাই বললেন, ‘আমার নাম অ্যানাউন্স করো না, আমি একটা ভাষণ দেবো।’
আমি বললাম, ‘আপনার নাম অ্যানাউন্স করবো না। আপনি এমনি ভাষণ দেবেন কারণ আমরা ঘোষণা করেছি আগামী কাল, পরশু ও তরশু এমনি ভাবে প্রচার করবো। ধারাবাহিক ভাবে আমাদের পরিচিত নাম প্রচার হলে শত্রুপক্ষ বুঝে ফেলবে যে এটা কোথা থেকে হচ্ছে। আপনার কণ্ঠস্বরটাই যথেষ্ট।
উনি বললেন, ‘যে দুপুর বেলা আমি কিন্তু আপনার এই কেন্দ্র থেকে ছোট্ট আকারে একটি ঘোষণা প্রচার করেছিলাম।’ সেটা আমি জানি না। অর্থাৎ সেই একই দিন ২৬ শে মার্চ দুপুর বেলা উনি (এম এ হান্নান) রেডিওর কয়েক জন পরিচিতকে নিয়ে… যারা অনিচ্ছুক ছিল এই রকম কয়েকজনকে নিয়ে রেডিও অন করিয়ে। ওটাকে বলা হবে চট্টগ্রাম বেতারের বিক্ষিপ্ত একটা অধিবেশন। সেখানে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা করেছেন এই মর্মে একটা বক্তব্য রয়েছে।
একই বক্তব্য তখন একটু বড় করে লিখে এনেছেন উনি। সেটা আবার দ্বিতীয় বার প্রচার করলেন। এবারও নাম ছাড়া। এম এ হান্নান সাহেব ২৬ তারিখে দুই বার আসার পরে আর আসতে পারেন নি। এর পর উনি অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
অন্যদিকে রফিকুল ইসলাম সাহেবকে আমি যে বলে ছিলাম সৈন্য পাঠিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করার জন্য কিন্তু তিনি পাঠান নাই। যার ফলে অত্যন্ত অসহায় বোধ করেছিলাম। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান শেষ করার পর দেখা গেল ওখানে কেউ নেই। যে দুইজন ইঞ্জিনিয়ারকে জোর করে কাজ করিয়ে ছিলাম তারা চলে গেছে। লিসেনারদের বলেছি, আপনারা আগামী দিন সকাল ৯টায় আমাদের অনুষ্ঠান শুনবেন। যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক সহকর্মী না আসে তাহলে তো প্রচার করা যাবে না।
এখন দুঃশ্চিন্তা হলো প্রথমত কালুর ঘাট থেকে এনায়েত বাজার পর্যন্ত আমরা হেঁটে পার হয়ে গেছি, আগামী কাল প্রোগ্রাম কীভাবে করবো। এদিক সেদিক টেলিফোন করেছি টেলিফোন দেওয়ার পর চন্দনপুরের তাহের সোবাহান নামে আমার এক বন্ধু ছিল, তিনি বললেন, ‘রফিকুল ইসলাম ক্যাপ্টেন কেন যে কথা দিয়ে কথা রাখলেন না জানি না। তার চেয়ে বড় একজন উচ্চ পদের মেজরের সন্ধান আমি জানি, তবে নাম জানি না। তিনি পটিয়াতে আছেন। তিনি হেড কোয়ার্টারের বাইরে এসেছিলেন বাবর এবং সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাশের জন্য। তিনি আজ রাতে, মানে ২৬ শে মার্চ দিবাগত রাতে সিচুয়েশন অবজার্ভ করার জন্য পটিয়াতে আছেন।’
আমাকে উনি অ্যাডভাইজ করলেন, ২৭ তারিখ যদি পটিয়াতে যেতে পারেন নিশ্চয়ই ওনাকে ওখানে পাবেন। যেহেতু বাইরে আছেন নিশ্চয়ই উনি বঙ্গবন্ধুর সাপোর্টার হবেন। আমার আর এক বন্ধুর সাহায্যে আমরা একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে পরের দিন সকাল বেলা রওনা হয়েছি পটিয়ায়। আর আমার সহকর্মীদের বলে দিয়েছি কালুর ঘাটের দিকে আস্তে আস্তে যাবে। আমি পটিয়া থেকে আসার পর প্রোগ্রাম শুরু হবে।
পটিয়ায় পৌঁছেই দেখা গেল আর্মি গিজ গিজ করছে। ওখানকার দারোগা আমার পরিচিত মানিক মিয়া। ওনাকে জানলাম।
এখানে যে আর্মি অফিসার আছে তার নাম মেজর জিয়াউর রহমান। তার সঙ্গে দেখা হলো। তাকে বললাম, ‘আপনি তো এখানে ব্রটকাস্ট শুনেছেন।’
তিনি বললেন, আমরা যে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেছি তা শুনেছেন এবং খুশি হয়েছেন।
আমি বললাম, ‘আপনি যদি দয়া করে আপনার এই ছাউনিটা এখান থেকে সরিয়ে কালুর ঘাটে নিয়ে যেতেন তা হলে বাড়িটা প্রটেক্ট হবে। আমরাও ওখানে স্থায়ীভাবে থাকতে পারবো। স্থায়ীভাবে না থাকতে পারলে কোনো কমিটমেন্ট করা যাবে না। ঠিক টাইমে রেডিওতে প্রোগ্রাম দেওয়া অ্যাডভেঞ্চার নয়। বেশ কিছু লোক লাগে। সব রকমের পয়েন্টে লোক বসে থাকা লাগে।’
তার পর উনি আর দেরি করেন নাই। সৈন্যদেরকে রওনা করিয়ে দিলেন। নিজেও একটা জীপে করে রওনা হলেন। আমাদের গাড়িটা ওনার গাড়ির পেছনে পেছনে চললো। পথে যেখানেই উনি বেশি মানুষের জটলা দেখেছেন, যারা কর্মস্থল ছেড়ে পোটলা-পাটলি নিয়ে চলে যাচ্ছে সেখানে তিনি দাঁড়িয়ে একটা বক্তৃতা দিলেন। ‘আপনারা যার যার কাজের জায়গায় চলে যান। ইনশাল্লাহ দু’এক দিনের মধ্যে আমরা পাঞ্জাবিদের খতম করে দেবো। আর উর্দু ভাষায় যারা কথা বলে তারা সব আমাদের দুশমন। তাদেরকে শেষ করে দেন।’
এটাই ছিল ওনার বক্তব্য। এই দশ জায়গায় থেমে থেমে যাওয়ার জন্য আমাদের কালুর ঘাটে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। গিয়ে দেখলাম কালুর ঘাটে পাহাড়ার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। হুইসেল পড়লো, একজন সেন্ট্রি হাত বাড়িয়ে দিল। আমাদের দুটো গাড়ি ঢুকলো।
আমার সহকর্মী যারা উপস্থিত ছিল, তারা প্রোগ্রাম শুরু করলো। একসময় জিয়াউর রহমান ও আমি একটা রুমে বসেছি। আমার এক সহকর্মী আমাকে কিছু কাগজপত্র দেখাচ্ছে। আমি কী মনে করে বললাম, “আচ্ছা মেজর সাহেব, এখানেতো আমরা সবাই মাইনর আপনিই একমাত্র মেজর। আপনি কি নিজের কণ্ঠে কিছু বলবেন?”
উনি বললেন, “হ্যাঁ সত্যিই তো, কী বলা যায়?”1010391_599550473430440_1824495219_nএকটা কাগজ এগিয়ে দেওয়া হলো। তার প্রতিটি শব্দ তিনিও উচ্চারণ করেছেন এবং আমিও উচ্চারণ করেছি। এইভাবে লেখা শুরু হলো।
“আই মেজর জিয়া অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ডু হেয়ার বাই ডিক্লেয়ার ইন্ডিপেনডেন্স অব বাংলাদেশ।”
তারপরে লেখা হলো পাঞ্জাবিরা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে। তাদের দমন করতে আমাদের দুই দিন কি তিন দিনের বেশি সময় লাগবে না। তার পরে শেষ করা হলো ‘খোদা হাফেজ জয় বাংলা’ বলে।
এই ঘোষণাটির খসড়াও তৈরি হলো আমার সঙ্গে আলাপ করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদও লিখলাম। আর আমার সহকর্মীদের বলে দিলাম একটা ঘোষণা দিতে থাকো, “মেজর জিয়াউর রহমান একটি জরুরি ভাষণ দেবেন। জিয়াউর রহমান বলবেন না, মেজর জিয়া বলবেন।”
কিছুক্ষণের মধ্যে মেজর জিয়া একটা জরুরি ভাষণ দেবেন – এভাবে দুই তিনবার অ্যাডভান্স অ্যানাউন্সমেন্ট করা হলো। তারপর তিনি নিজের কণ্ঠে ইংরেজিটা পড়েছেন। বাংলাটা আমার সহকর্মী আব্দুল্লাহ আল ফারুকের কণ্ঠস্বর ভাল, তাকে দিয়ে শুনিয়েছি। এইভাবেই হলো। কোন রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না, পরিকল্পনা ছিল না এবং এটা স্বাধীনতা ঘোষণা না। এটা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে একই কথার পুনরুক্তি করা।
রাষ্ট্রপতি জিয়া কোনোদিন নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেননি। ২৬ তারিখও বলেননি, উনি সবসময় ২৭ তারিখই বলেছেন। এবং ৭ই মার্চের বক্তব্যকে তিনি একটা প্রবন্ধে একটা পত্রিকায়, সম্ভবত বিচিত্রায়, জাতির জনকের গ্রিন সিগন্যাল বলেছেন। পরবর্তী সময় যে ঘোষক-টোষক বলা হয়েছে এগুলো তৈরি করা। রাষ্ট্রপতি জিয়া এগুলো ক্লেইম করেননি।
আমি এখন যে কথাটুকু বললাম যে ওনাকে ঠাট্টার মতো প্রস্তাব দিয়েছি, ওনার জীবদ্দশায় আমি এ নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছি। সে সব প্রবন্ধ উনি পড়েছেন। উনি কোনো আপত্তি করেননি। যেমন আমি ওনাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছি, কিন্তু এক জায়গায় উনি বলছেন, “উই ক্যাপচার্ড রেডিও অন টোয়েন্টি সেভেন,” এই ‘ক্যাপচার্ড’, এটা সামরিক ভাষা। আর্মিকে আমি ডেকে নিয়ে গেলেও তারা পজেশন নিলেই তারা তাদের ভাষায় বলবে আমরা ক্যাপচার করেছি। এতে মাইন্ড করি না।

প্রদীপ চৌধুরী: জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন – এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য?

বেলাল মোহাম্মদ: এটা সম্পূর্ণ মতলবি এবং রাজনৈতিক। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা এটা ছেলে খেলা নয়, এটা যে কেউ দিতে পারে না। বাংলাদেশে স্মরণকালের ইতিহাসে নবাব সিরাজ-উদদৌলার পর থেকে যদি ধরি, অনেক বড় নেতার উদ্ভব হয়েছে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন রায়, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক এরা কেউই স্বাধীনতার ঘোষণার পরিবেশ পাননি। একমাত্র ১৯৭১ সালে বঙ্গদেশের একটা খণ্ডিত অংশ পূর্ববঙ্গের বাঙালীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের একচ্ছত্র নেতৃত্বে বাঙালী জাতীয়তাবাদের পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পেরেছিল।
আমাদের স্মরণকালের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুই একমাত্র সব রকমের ক্রাইটেরিয়া পূরণ করে স্বাধীনতা ঘোষণার পরিবেশ পেয়েছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণা তো ছেলেখেলা নয়। সেই স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে যার জনপ্রতিনিধিত্ব থাকে ব্যাপক। সেই স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে যার আন্তর্জাতিক পরিচিতি থাকে, সামরিক বাহিনীর সাপোর্ট থাকে এবং সেই মুহূর্তে শ্যাডো গভর্নমেন্ট ফর্ম করার প্রস্তুতি থাকে।এই সবগুলো ক্রাইটেরিয়ার একমাত্র ষোলকলা পূর্ণ হয়েছিল ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। কাজেই স্বাধীনতার ঘোষণা আমি তো বললাম নেতাজীও করতে পারেননি, দেশবন্ধুও করতে পারেননি। আমাদের স্মরণকালের ইতিহাসে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সর্ব প্রথম বাঙালীর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের খণ্ডিত অংশে ।
আমি দাবি করে থাকি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্ব প্রথম সাংগঠনিক তৎপরতা। আমরা ক্ষুদ্র একটি দল যখন সংগঠিত হয়েছিলাম তখনও আমাদের প্রধান দল যে সামরিক বাহিনী তাও সংগঠিত হয়নি। আমরা বরং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বলেছি মুক্তিবাহিনী গঠন করার জন্য, দলে দলে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য এবং এটা শত্রুপক্ষ ঠিকই ধরে নিয়েছিল। তাই শত্রুপক্ষের প্রথম বোম্বিংয়ের লক্ষ্য ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। ৩০শে মার্চ কালুরঘাটের ওপরই বোমা বর্ষণ হয়েছিল এবং সেটাই ছিল হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর সর্ব প্রথম বিমান হামলা। অর্থাৎ তারা আমাদের ধরে নিয়েছিল তাদের সেই মূহূর্তের প্রধানতম শত্রু।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আমি আগেই বলেছি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সুস্পষ্ট নির্দেশনার দ্বারা অভিভূত বা উদ্বুদ্ধ বেতার কর্মীরাই গঠন করেছে। রাজনৈতিক নেতারা রেডিও চালু করতে কেন আসবে? তারা এসে পার্টিসিপেট করতে পারে। সামরিক বাহিনী রেডিও চালু করবে কেন? তারা পাহারার ব্যবস্থা করতে পারে।

প্রদীপ চৌধুরী: কালুরঘাটে যে আপনারা রেডিও স্টেশনটা স্থাপন করেছিলেন ওটা তো চট্টগ্রাম রেডিওতে আপনারা যারা ছিলেন তারাই এটা করেছিলেন?

বেলাল মোহাম্মদ: আমরা মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছিলাম। এই নামটা আমার দেওয়া। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আমার সঙ্গে পেয়েছি আবুল কাশেম সন্দীপকে। ইনি বেতারের বহিরাগত। আমার সঙ্গে থাকতেন ফ্যামিলি মেম্বারের মতো। তিনি একটা কলেজে অধ্যাপনা করতেন। আর আব্দুল্লাহ আল ফারুক রেডিওর জুনিয়ার অফিসার ছিলেন। এই দুইজনকে আমি প্রথম দিন পেয়েছি। আর যারা এসেছিল তারা কাজে সহায়তা করে ইচ্ছা করে চলে গেছে রাখতে পরিনি।
তার পরের দিন (২৭ মার্চ) এসেছেন কাজী হাবীবউদ্দিন, আর একজন কর্মী এবং রেডিওর ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের কর্মী আমিনুর রহমান। ২৮ তারিখে এসেছেন সারফুজ্জামান ও রাসিদুল হোসেন, ২৯ তারিখে এসেছেন সৈয়দ আব্দুর সাগির, মোস্তফা আনোয়ার ও রেজাউল করিম চৌধুরী। এই কজন হলাম আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থপতি। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একমাত্র এম এ হান্নান একদিন এসেছেন, পরে আর কোনোদিন আসেননি। তিনি ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাও আসেননি।

প্রদীপ চৌধুরী: তাহলে কি কেন্দ্রটি আপনারাই চালিয়েছিলেন?

বেলাল মোহাম্মদ: হ্যাঁ, আমরাই চালিয়েছি। রেডিও আমাদের কাজ, ওরা আসবে কেন? ওদের অন্য কাজ, রাজনৈতিক নেতাদের তো অন্য রোল। তারা আর সামরিক বাহিনী তো বেতার প্রতিষ্ঠা করে নাই। সামরিক বাহিনীকে অনুরোধ করে নিয়ে আসা হয়েছে। নিয়ে আসার পর পাহারার ব্যবস্থা উনি করেছেন এবং ওদের সঙ্গে যিনি মেজর ছিলেন তিনি আমার তাৎক্ষণিক একটি প্রস্তাবে ঘোষণাটি পাঠ করেছেন। এর জন্য উনার কোনোরকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। উনি রেডিওতে কিছু বলবেন – এমন কোনো আভাসও উনি দেন নাই। আমি ওনাকে ঠাট্টার মধ্যে মেজর ও মাইনর বলেছিলাম বলেই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বক্তব্য দিলেন। আর উনি আরো কিছু বক্তব্য দিলেন। দ্বিতীয় তৃতীয় বক্তব্য আছে, প্রথম বক্তব্যটার কথা আমরা বলি যেটা বঙ্গবন্ধুর নামে। এখন নানান রকমের উদ্ভট কথাবার্তা বলা হয় প্রত্যক্ষদর্শীদের কথাটা উপেক্ষা করে।
অনেকেই, আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবীদের বলতে দেখি প্রথমে নাকি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নাম বলেন নাই। তখন প্রেশার দিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলে তারা নিজেদের উদ্যোগে নিয়ে এসেছে। আপনারা যদি নিজেরাই নিয়ে আসেন, তা হলে বঙ্গবন্ধুর নাম বলেন না কেন? উনি তো বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসাবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমরা লক্ষ করেছি তো তার কথাবার্তা। বাঙালী একজন মেজর, বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হবে না কেন?

হ্যাঁ, ওনার আদর্শগত অন্যকিছু যেটা, সেটা উনি যখন পাওয়ারে এসেছেন, তখন হয়তো আমরা সেটা লক্ষ করেছি। উনি যখন সংবিধানের ওপর হাত দিয়েছেন তখন আমরা বুঝতে পেরেছি উনি বাঙালী জাতীয়তার প্রতি বিশ্বাস করেন না। এর আগে তো বুঝতে পারিনি। ওই সময় তো আমরা ওনাকে অনুগত দেখেছি। ওই সময় তো উনি-আমরা অভিন্ন ছিলাম। উনি যুদ্ধ করেছেন এবং ওনার ভাষণের একটা গুরুত্ব ছিল সেটা অস্বীকার করা যাবে না। অন্য যত কণ্ঠস্বর একটা যুদ্ধক্ষেত্রে এক্স, ওয়াই, জেডের কণ্ঠস্বর ওগুলো। কারণ সামরিক বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে একটা দেশ। সামরিক বাহিনীর লোকও এই দলে আছে, বঙ্গবন্ধুর দলে একজন মেজর থাকা মানে একটা গ্রুপ আছে। এটা মানুষের মনোবল অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠস্বর ওই সময়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৭ শে মার্চ, জনগণকে নৈতিক সাহস দিয়েছে এইভাবে যে, আমরা আক্রান্ত হলেও ভয়ের কিছু নাই। আমাদের দলেও আর্মি আছে। এটা বিরাট কাজ হয়েছে। এটা কাকতালীয়ভাবে হয়েছে, কিন্তু এটা করার জন্যই যে জিয়াউর রহমানকে আনা হয়েছে বা তিনি করেছেন তা নয়, এটা আকস্মিকভাবে হয়েছে।
আর রেডিও যদি চালু নাও হতো তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধ হতো না? ৭ই মার্চের বক্তব্যেই পরিষ্কারভাবে মুক্তিযুদ্ধের সব ধরনের নির্দেশনা আছে। তারপর যার হাতে যা আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার কথা আছে। সব কিছুই বলা আছে, একেবারে ভবিষ্যৎ বাণীর মতো মনে হয়। আর কাব্যিক ভঙ্গিতে বলা হয়েছে, কারণ একেবারে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলে ওনাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে ঘোষণা করা হবে আন্তর্জাতিক বিচারে। কাজেই তখন কায়দা করে বলা হয়েছে। সেটা বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। যেহেতু উনি রাজনৈতিক নেতা। তার পক্ষেই এটা সম্ভব হয়েছে, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম” কাব্যিক ভঙ্গিতে বলা। আমি এই মুহূর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম। আমরা চাইলাম, এটা আমরা চাইছি – এমন বললে সে দিন এই লক্ষ লক্ষ লোককেও মেরে ফেলতো ওরা। বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলত ওরা। আন্তর্জাতিক বিচারে বলত একটা রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে – এসব বলতো। কাজেই সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন না কেন এগুলো সব আজে-বাজে কথা। আর বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কাউকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা – এত নীচতা কোনোভাবেই বিজ্ঞানে ফেলা যায় না। বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান সেটা পাঠ করেছিলেন। অবিকল সেটা পাঠ করেনি। বঙ্গবন্ধুই হলেন একমাত্র ঘোষক স্মরণকালের ইতিহাসে। স্বাধীনতা ঘোষণা করার অধিকার উনিই একমাত্র পেয়েছিলেন। আর রেডিওতে যারা জয়েন করেছে তারা সব বেতার ঘোষক। বেতার ঘোষকদের তখনকার সময় ফি ছিল ১৫ টাকা, এখন কত আমি জানি না। আমরা সবাই বেতার ঘোষক। তো সেই বেতার ঘোষক ২৬ মার্চ থেকে হিসাব করলে আমি, আমার সহকর্মীদের নামগুলো সব যদি বলতে থাকি তাহলে ২৭ তারিখে জিয়াউর রহমানের অবস্থান হল ৯ নম্বর বেতার ঘোষক।

প্রদীপ চৌধুরী: আপনি তো এবার স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন, আপনার অনুভূতিটা জানতে চাচ্ছি।

বেলাল মোহাম্মদ: স্বাধীনতা পদক আমাকে দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের জন্য। আমি এতক্ষণ যে কথাগুলো বলেছি তা আমি একা করিনি। আমি যে কাজটা করেছি ইট ওয়াজ এ জয়েন্ট ভেঞ্চার। রেডিও একা কেউ চালাতে পারে না। আমি দশজন সহকর্মীর নাম বলেছি ইতিমধ্যে। আমাদের এই দশজনকেই জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৫ শে মার্চ ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক’ ঘোষণা করেছিলেন একটা সার্কুলারে। তার কয়েক মাস পরেই অভিশপ্ত দিন ১৫ আগস্ট। মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মমতম হত্যাকাণ্ডের দিনটি এসে যাওয়ায় ওই পুরস্কার আর কার্যকর হয়নি। আমার মনে হয় আমরা সেই পুরস্কারই পেয়ে গিয়েছিলাম। ওই পুরস্কারটাকেই আমি অনেক বড় করে দেখি।

প্রদীপ চৌধুরী: আপনাদের কত জনের নামে ওই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল?

বেলাল মোহাম্মদ: সেই পুরস্কার মোট ২২ জনের নামে ঘোষণা হয়েছিল। তো ওটা আমরা পেয়েছি মনে করি। একটা স্বর্ণপদক হাতে ঝুলানোর চেয়ে বঙ্গবন্ধুর সময় ওনার স্বাক্ষরে ঘোষণা করা হয়েছে – এটা আমাদের বড় পাওয়া। এর চেয়ে আর বড় পাওয়া কিছু নেই। এর পরে যত পুরস্কারই আসুক, আমরা অনেক বড় করে দেখি বঙ্গবন্ধুর স্বর্ণপদককে।

প্রদীপ চৌধুরী: বেলাল মোহাম্মদ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, পাঠক ও শ্রোতাদের পক্ষ থেকে আপনাকে কৃতজ্ঞতা এবং অভিনন্দন জানাই।

বেলাল মোহাম্মদ: আমি আমার বক্তব্যে সর্বশেষে সবসময় যা উচ্চারণ করি তাই করছি, ‘জয় বাংলা’।

(সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ২৮ মার্চ ২০১০)                                                                                                            

তথ্য ও ছবি : সংগৃহীত

© 2013 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button