মুক্তিযুদ্ধ

‘রাজাকার তো রাজাকারই থাকে’

ছোটবেলা থেকেই ফরিদ মিয়া ছিলেন দুরন্ত প্রকৃতির। স্কুল পালিয়ে ফুটবল খেলা আর পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়ানোতেই ছিল তার আনন্দ। বড় সন্তান হওয়ায় বাবা-মায়ের আদর ছিল আকাশচুম্বী। কবজি-ডুবানো দুধ-ভাত খেয়ে জীবন কাটত তার। কিন্তু সে জীবনের ছন্দপতন ঘটে যখন তার বয়স সতের।

ওই সময়ই মারা যান বাবা ওয়াজ উদ্দিন। পাঁচ ভাই ও এক বোনের বড় সংসার। সে সংসারের হাল ধরেন মা তাজ্জাতুন নেছা। অভাব ঘুচাতে তিনি জমিতে হাল দেওয়ার কাজও করতেন। সংসারে আয় ছিল কম। ফলে সারাদিনে একবেলা খেতে হত তাদের। ক্ষুধার ভয়ে সন্ধ্যার পর পরই ঘুমিয়ে পড়ত সবাই।

পরিবারে বইছে অভাবের তপ্ত হাওয়া। তবুও কোনো কাজ করেন না ফরিদ মিয়া। মা রাগ করেন। একদিন বললেন, ‘বারিত থাইক্কা বাইর অইয়া যা।’ মায়ের কথায় মন খারাপ হয় তার। অভিমান করে একদিন ঠিকই বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে। সম্বল ছোট বোনের মাটির ব্যাংকে থাকা ৯ আনা। তা দিয়েই তিনি চলে আসেন চট্টগ্রামে, দূরসম্পর্কের এক নানার বাড়িতে।
সময়টা ১৯৬৯। সেনাবাহিনীতে তখন সিপাহী পদে লোক নিচ্ছিল। নানা নুরুল ইসলাম গোসাই বললেন দাঁড়াতে। ফরিদ মিয়া তাই করলেন। লাইনে দাঁড়াতেই তাকে সিল মেরে নিয়ে নেওয়া হয়। তার নামের পাশে বসে ‘আর্মি নম্বর ৩৯৫৩৭৭২’। এভাবেই পাল্টে যেতে থাকে ফরিদ মিয়ার জীবনের গতিপথ।

শুনছিলাম যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. ফরিদ মিয়ার জীবনকথা। ১৯৭১ সালে তিনি যুদ্ধ করেছেন ২ নং সেক্টরে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় এক সম্মুখযুদ্ধে তিনি মারাত্মকভাবে গুলিবিদ্ধ হন। মাথাসহ তার শরীরে আঘাত হানে পাকিস্তানি সেনাদের ২৮টি গুলি। এতে তার বামপায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। তার সারা শরীর প্লাস্টারে আবৃত থাকে প্রায় আড়াই বছর। শরীরের বিভিন্ন অংশে লাগানো হয় কৃত্রিম পাত। বর্তমানে হুইলচেয়ারই তার একমাত্র সঙ্গী।
মুক্তিযোদ্ধা মো. ফরিদ মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার রামপুর গ্রামে। তিনি লেখাপড়া করেন ক্লাস এইট পর্যন্ত। শিক্ষাজীবনের শুরু রামপুর প্রাইমারি স্কুলে এবং শেষ হয় খড়মপুর হাইস্কুলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল একুশ বছর।

মুক্তিযোদ্ধা মো.ফরিদ মিয়ার ইনজুরি রিপোট
মুক্তিযোদ্ধা মো.ফরিদ মিয়ার ইনজুরি রিপোট

কথোপকথনের শুরুতেই সৌজন্যবশত আমরা প্রশ্ন করি- কেমন আছেন ?
উত্তরে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘৪২ বছর ধরে বসা। প্রসাব করি গেলনে। কোলে করে নিতে হয় বাথরুমে। সামাজিক কোনো জায়গায় যেতে পারি না। বসতে হয় অন্যের সাহায্য নিয়ে। এভাবেই তো চলছে জীবন।’

উত্তরটি আমাদের মনে নাড়া দেয়। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি এ বীরের মুখপানে। খানিক বিরতিতে আবার শুরু হয় আলাপচারিতা।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ফরিদ মিয়া ছিলেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে। ওইসময় সেনাবাহিনীর ব্যারাকের ভেতরের অবস্থা জানালেন তিনি। বললেন, ‘পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের আক্রোশের চোখে দেখত। উচ্চতায় আমরা ছিলাম তাদের চেয়ে খাটো। এ নিয়ে সবসময় তারা নানা কটূক্তি করত। কিন্তু আমরা প্রত্যুত্তর করতাম না। সবসময় নিজেরা জোটবদ্ধ থাকতাম।’
২৫ মার্চ ১৯৭১। রাতে আর্মি নামে ঢাকায়। আপনারা তখন কোথায় ? প্রশ্ন শুনে মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ মিয়া খানিকটা নিরব থাকেন। অতঃপর স্মৃতি হাতড়ে তুলে আনেন সে সময়কার নানা ঘটনা।
তার ভাষায়, ‘২৪ মার্চ ১৯৭১। সন্ধ্যা ৭ টা। আমরা ব্যারাকে। আমাদের রুল কল হল। বলা হল অস্ত্র জমা দিতে। তখনই মনে খটকা লাগল। কিন্তু তখনও জানি না কী অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। মধ্যরাতে শুনি ফিসফিস শব্দ। ব্যারাকের চারপাশে মানুষের কন্ঠ। হঠাৎ দুম করে একটা শব্দ হল। সঙ্গে সঙ্গে চলে গেল কারেন্ট। শুরু হলো গোলাগুলি। ঘুমন্ত অবস্থায় মারা পড়ল বহু বাঙালি সৈন্য। আমার পাশেই ছিলেন প্লাটুন কমান্ডার ফজলুল হক। তিনি চট্টগ্রামের ছেলে। আশপাশের পথঘাট তার চেনা। আমরা কয়েকজন তার সঙ্গী হই। জানালা ভেঙ্গে ব্যারাকের ড্রেন দিয়ে বেরিয়ে আসি বাইরে।’

তখন কি নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেলেন ? ফরিদ মিয়ার উত্তর, ‘না, বাড়ির চিন্তা তখন ছিল না। পথে পথে ছিল পাকিস্তানি সৈন্যদের পাহারা। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পায়ে হেঁটে ফেনীর ছাগলনাইয়া হয়ে আমরা চলে আসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ফোর বেঙ্গল তখন কুমিল্লাতে থাকলেও এর একটি ইউনিট ছিল সিলেটের হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জে। ওরা অ্যাডভান্স হলে আমরা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রতিরোধ গড়ি।’

মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ মিয়া কথা বলছিলেন বেশ উচ্চকণ্ঠে। মাথায় গুলি লাগার পর থেকেই তার এ সমস্যা। বেশি কথা বলা ডাক্তারের বারণ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলে তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না।
কোথায় কোথায় যুদ্ধ করেছেন? কমান্ডে কে ছিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যুদ্ধ করতে করতে আমরা চলে আসি আখাউড়ায়। এখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর প্রবল আক্রমণ করে। আমরা তখন সরে যাই ভারতের আগরতলার হজিরটিলায়। নাইন বেঙ্গল রেজিমেন্ট ছিল সেখানে। ২ নং সেক্টরের অধীনে আমরা যুদ্ধ করি কালতলা, আখাউড়া, গঙ্গাসাগর, বাঞ্ছারামপুর এলাকায়। এছাড়া ওইসময় ব্রাহ্মবাড়িয়া থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত সবগুলো ব্রিজ আমরা উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিছুদিন পরেই আমাদের প্লাটুনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কসবায়। আমাদের কমান্ডে ছিলেন ক্যাপ্টেন আইনুদ্দিন ও হাবিলদার আজিদ আকন্দ। কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন ফজলুল হক আর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশারফ।’
খালেদ মোশারফের কথা বলতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ মিয়া বলেন, ‘সবার সঙ্গে সরলভাবে মিশতেন তিনি। তার কথা শুনলে আমরা উদীপ্ত হতাম। কর্ণেল তাহের, খালেদ মোশারফ ও আইনুদ্দিন স্যারের মতো মানুষ এ জাতি আর কখনও ফিরে পাবে না।’
কথা ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পক্ষে জিয়াউর রহমানের ঘোষণাটি আমরা শুনি রেডিওতে। তা শুনে ডিফেন্সের লোক হিসেবে তখন আমাদের মনোবল যায় বেড়ে।’
কোন অপারেশনে গুলিবিদ্ধ হলেন? এমন প্রশ্নে মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ মিয়া আনমনা হয়ে যান। অনুমতি নিয়ে একটি সিগারেট ধরান। অতঃপর ধীরে ধীরে বলতে থাকেন।
তার ভাষায়, ‘আমরা ছিলাম বেনুপুর ক্যাম্পে। কমান্ডে ছিলেন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হুমায়ুন কবির। ১৭ অক্টোবর ১৯৭১। কসবার তারাপুর রেললাইনের পাশে আমরা ডিফেন্স গাড়ি। কয়েকটি গ্রামেও ছিল আমাদের ডিফেন্স। সব মিলিয়ে আমরা ২৫০ জন। ২০ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬.৩০। নির্দেশ আসে পুরান বাজার ও নতুন বাজার মিলে পুরো কসবা অ্যাটাকের। আমাদের সঙ্গে যোগ দিল ইন্ডিয়ান আর্মিরা। ২১ অক্টোবর রাত ২টা। রোজার মাস। সেহেরি খেয়ে আমরা সামনে এগোই। পেছনে আমাদের ব্যাঞ্চারগুলোতে অবস্থান নেয় ইন্ডিয়ান আর্মি। জ্বর হওয়াতে আমার কাছে ছিল ওয়ারলেসের দায়িত্ব। বড় বড় ঘাস পেরিয়ে আমরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের কাছাকাছি চলে আসি।

পরিকল্পনা ছিল ভোরের দিকে ইন্ডিয়ান আর্মি আর্টিলারি মারবে। কিন্তু তার পূর্বেই পাকিস্তানি সেনাদের বাঙ্কারগুলো আমরা দখলে নিলাম। প্রায় প্রতিটি বাঙ্কারেই মিলল বাঙালি তরুণী। পালিয়ে যাওয়ার ভয়ে তাদের বিবস্ত্র করে রাখা হয়েছিল। সবার শরীর ক্ষতবিক্ষত। আমাদের সঙ্গে ছিল মুরতাদের সাদা কাপড়। আমরা তা জড়িয়ে দিলাম তাদের শরীরে।
ওইসময় সশস্ত্র অবস্থায় পাকিস্তানি সেনার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। আমরাও এগিয়ে যাই ৫শ গজ সামনে। অল্পসময়ের মধ্যেই ইন্ডিয়ান আর্মির আর্টিলারি ছোঁড়া বন্ধ হয়ে যায়। সে সুযোগে পাকিস্তানি সেনারা আমাদের বাঙ্কার লক্ষ্য করে আর্টিলারি ছোঁড়ে। সেখানে অবস্থান করছিল ইন্ডিয়ান আর্মি। দূর থেকে আমরা দেখলাম- শত শত ইন্ডিয়ান সেনা মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
চারপাশ থেকে গোলাগুলি তখনও চলছে। ওদের আক্রমণে আমরা টিকতে পারছিলাম না। কোনাবনে ছিল আমাদের নিজস্ব আর্টিলারি। ওয়ারলেসে আমরা সেখানকার সাহায্য চাইলাম। কিন্তু তার আগেই চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেল ২৬ জন সহযোদ্ধা।

আমি কয়েকজনের রক্তাক্ত লাশ সরাচ্ছিলাম। হঠাৎ দূর থেকে এক পাকিস্তানি সেনা আমাকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে। অমনি আমি ছিটকে পড়ি। নড়তে পারছিলাম না। কিন্তু জ্ঞান তখনও আছে। সহযোদ্ধারা তুলা ভিজিয়ে সামান্য পানি আমার মুখে দিচ্ছিলেন। দরজার একটি পাল্লায় শুইয়ে তারা আমাকে নিয়ে যান কমলাসাগরের কাছে। সেখানে ছিলেন খালেদ মোশারফ। তিনি শুধু বললেন- ‘ফরিদকে আমার গাড়িতে উঠাও।’ অমনি একটি সেল এসে পরে আমাদের সামনে। বিকট শব্দে স্প্রিন্টার ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। একটি স্প্রিন্টার এসে লাগে স্যারের মাথায়। এরপর আমার আর কিছুই মনে নেই।’
দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন আপনি কোথায় ছিলেন? মুক্তিযোদ্ধা মো. ফরিদ মিয়ার উত্তর, ‘আমি তখন পুনা হাসপাতালে। আমার সারা শরীর প্লাস্টার করা। শরীরের ভেতর চুলকালে অসহ্য লাগত। তখন মা মা বলে কাঁদতাম। হাসপাতালের নার্সরা মায়ের মতোই আমাদের সেবা করত। কিন্তু তখন শুধু একটাই চিন্তা ছিল- কবে ফিরব স্বাধীন দেশে।

ভারতের সাহায্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বহু ভারতীয় সেনা মারা গিয়েছে। তারা আমাদের ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। শরণার্থী শিবিরে যদি তারা আমাদের লোকদের আশ্রয় না দিত তবে না খেয়েই বহু লোক মারা যেত।’
বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা প্রসঙ্গে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন দয়ার সাগর। তার তুলনা এদেশে কেউ দিতে পারবে না। তাকে নিয়ে অপপ্রচার তো কম হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধীরা একসময় আওয়াজ তুলেছিল- বঙ্গবন্ধু এ দেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিবে। কই, এখনও তো দেশ বিক্রি হয়নি।’ তিনি মনে করেন সাধারণ ক্ষমা নয় বরং দালাল আইন বাতিলের ফলেই এদেশে রাজাকাররা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ আসতেই মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ মিয়া আবেগ তাড়িত হয়ে যান। অতঃপর বলেন, ‘এদের বিচার আরও আগে হওয়া দরকার ছিল। তাহলে হয়তো এদের গাড়িতে আমার দেশের পতাকা উড়াত না।’ বর্তমান রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধীদের উত্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে মিথ্যা ঢুকে গেছে। চোর কখনও স্বীকার করে না সে চোর। ধর্মের আবরণে রাজাকাররা আজ সাধু সাজার চেষ্টা করছে মাত্র। এদের চরিত্র তো সবসময় একই। রাজাকার তো রাজাকারই থাকে।’
মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনের পর পরই তালিকা করার উপযুক্ত সময় ছিল। যে যেখানে যুদ্ধ করেছে তার তথ্য সেখানেই ছিল। এগারটি সেক্টরে ছিল সবার রেকর্ড।’ মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘ রাজনৈতিক কারণে সুবিধালাভের লোভে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের অবদানের কথা অকপটে তুলে ধরেন মুক্তিযোদ্ধা মো. ফরিদ মিয়া। তার ভাষায়, ‘সরকার সাহায্য না করলে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাদেরই ভিক্ষা করে খেতে হতো। আমরা কিছু পাওয়ার আশায় যুদ্ধ করিনি। স্বাধীনের পর পরিবারসহ আমি একবেলা খেতে পারতাম না। ঈদের দিন আধাকেজি সেমাইও জুটত না। কই তখন তো কেউ খোঁজ নেয় নি! এখন তো প্রধানমন্ত্রীও খোঁজ খবর রাখেন। মুক্তিযোদ্ধারা এ সরকারের সময়ই কদর পায় বেশি।’
স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খারাপ লাগা জানতে চাই আমরা। উত্তরও মিলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ মিয়া বলেন,‘ যুদ্ধের সময় তো পাকিস্তানিরা আমাদের বাড়িঘরে আগুন দিত। এখন কারও বিপক্ষে কথা বললেই বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ধর্মের নামে পুড়িয়ে দেওয়া হয় অন্য ধর্মের উপাসনালয়। এমন দেশ তো আমরা চাইনি। স্বাধীন দেশে সবাই সমানভাবে চলবে। সমান কথা বলবে। এটাই তো ছিল আমাদের স্বপ্ন।’
ভালোলাগার কথা উঠতেই তিনি মুচকি হেসে বলেন, ‘আমার নাতি যখন জয় বাংলা বলে স্লোগান তোলে তখন আমার বুকটা ভরে যায়।’
নতুন প্রজন্মের দেশপ্রেম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে যেসকল তরুণরা পথে নেমেছে তাদের তো কেউ কিছু বলে দেয়নি। অন্যায় হচ্ছে দেখে তারা প্রতিবাদ করেছে। অহিংস আন্দোলন গড়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে পূর্বসূরীরা যে ভুল করেছে, তারা তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। দেশপ্রেমের এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে?’
নতুন প্রজন্ম দেশটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এমনটাই বিশ্বাস যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. ফরিদ মিয়ার। বুকে আশা নিয়ে তিনি বললেন, ‘দেশের প্রতি ভালবাসার বোধটুকু থাকলেই এ জাতি এগিয়ে যাবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছি। পরবর্তী প্রজন্মের দায়িত্ব স্বাধীন এ দেশটাকে সারা বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করা। তবেই স্বাধীনতা স্বার্থক হবে।’

লিখাটি প্রকাশিত হয়েছে ১৫ জুন ২০১৩ তারিখে বিডিনিউজ২৪.কমে

© 2013 – 2021, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button