আদিবাসী

আদিবাসী মিলনমেলা

আদিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে নানা ধরণের উৎসব ও আচার। যার অধিকাংশই তাদের সনাতন ধর্মবিশ্বাসকে ঘিরে। এ ছাড়া ঋতুভেদেও এরা পালন করে নানা ধরণের অনুষ্ঠান। এ সব উৎসব ও অনুষ্ঠানই তাদের মিলনমেলা। উৎসবগুলোতে দলগত নাচ, গান, বিশ্বাসের নানা আচার আর প্রাণখোলা আড্ডায় তারা ভুলে যায় হিংসা-বিদ্বেষের বিভেদটুকু। ফলে তাদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ আরো সুদৃঢ় হয়।

প্রথমেই সাঁওতালদের একটি মিলনমেলার কথা বলছি। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে এরা একত্রিত হয় ‘বাহাপরব’-এর অনুষ্ঠান ঘিরে। এটি তাদের আদি রীতি। সাঁওতালি ভাষায় ‘বাহা ’ মানে ‘ফুল ’ আর ‘পরব’ মানে ‘অনুষ্ঠান’ বা ‘উৎসব’। বসন্তে ফোটে শাল, শিমুল, পলাশ, মহুয়া, চম্পা ফুল। তখন বিচিত্র সাজে সজ্জিত হয় প্রকৃতি। এ অনুষ্ঠানটির মধ্য দিয়ে সাঁওতালরা শালফুলকে বরণ করে নেয়। বাহাপরবের আগে এদের ফুল ব্যবহারের নিয়ম নেই।
বাহাপরবে প্রথম দিনের প্রধান অনুষ্ঠানে সাঁওতালরা পূজার মাধ্যমে মুরগি বলি দেয়। উদ্দেশ্য  জাহেরএরা, গোসায়এরা, মরেকু, তুরইকু নামক দেবতা বা বোঙ্গার সন্তুষ্টি লাভ। পূজার পরে মেয়েরা শালফুল গ্রহণ করে ভক্তির সঙ্গে। অতঃপর খোঁপায় শালসহ রং-বেরঙের ফুল পরে এরা

কড়াদের কারমা উৎসব
কড়াদের কারমা উৎসব

দলবেঁধে নেচে-গেয়ে বরণ করে নেয় নতুন বসন্তকে। একই সঙ্গে মাদল ঢোল বাজিয়ে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করে শালফুল। সে সময় সাঁওতালি ভাষায় তারা গান ধরে-
‘তোকয় কোকে চিয়ে লেদা বীর দিসাম দঃ,
তোকয় কোকে টান্ডি লেদা বীর দিসাম দঃ..’
(ভাবার্থ : কে কে ওই জঙ্গলে গিয়েছিল, কে কে ওই জঙ্গলটা পরিষ্কার করেছিলো…)
শালফুলকে গ্রহণ না করলেও গারো আদিবাসীরা কৃষি ও জুম চাষকে কেন্দ্র করেই ‘ওয়ানগালা’ উৎসব পালন করে। এটি কার্তিক- অগ্রাহায়ণের অনুষ্ঠান। মূলত সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানানো হয় এ উৎসবের মাধ্যমে।
এ সময় গারোরা ঝোপঝাড় কেটে গোটা গ্রাম পরিষ্কার করে নেয়। গ্রামপ্রধান বা নকমার ঘোষণার পর পরই গোটা গ্রামে চালের গুঁড়ো দিয়ে বিশেষ ধরণের মদ তৈরির ধুম পড়ে যায়। উৎসবে যে যত বেশি মদ আনতে পাওে, তার তত সুনাম হয়। এ উৎসবে প্রতিটি পরিবার জুম থেকে প্রাপ্ত ফসলের কিছু অংশ বাড়ির সামনে কলাপাতায় সাজিয়ে রাখে। সঙ্গে রাখে দ্বিখন্ডিত চালকুমড়া। উৎসবের প্রথম দিনটি নাচগান আর মদপানের পর্ব। গারো মেয়েরা দকমান্দা পরে, মাথায় পাখির পালক গুঁজে দলবেঁধে নাচে। আর পুরুষরা তাল তুলে বাদ্য বাজায়। এদিন তারা গরু বা শূকর মেরে কিছু মাংস নিজেদের জন্য রেখে বাকিটা গ্রামের লোকদের বিলিয়ে দেয়। নাচ-গানের দলটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেচেগেয়ে গ্রামপ্রধানের বাড়িতে এসে থামে। ওই বাড়িতেই চলে খাওয়াদাওয়া। ওয়ানগালা উৎসবের মাধ্যমেই গারো যুবক-যুবতীর মনে ভালোবাসার রং লাগে।
দিনাজপুরের ভুনজারদের উৎসবগুলো বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। এরা চৈত্র মাসের শেষ দিন আর বৈশাখ মাসের প্রথম দিনকে পালন করে বিশেষ আচারের মাধ্যমে। ভুনজারদের ভাষায় এটি চৈতবিসিমা উৎসব। এ উৎসবে চৈত্র মাসের শেষ দিনে এরা বাসন্তী পূজা করে। ডায়রিয়া আর বসন্তের হাত থেকে মুক্তি পেতেই বহু আগে থেকে ভুনজাররা চৈত্রের শেষ সন্ধ্যায় ঠাকুরের কাছে পূজা দিয়ে আসছে। এ কারণেই এর নামকরণ হয়েছে বাসন্তী পূজা।
এ সময় ভুনজাররা একটি মাটির ঘটিতে আমপাতা, কলা, নারকেল, ধূপ আর চার ফোঁটা সিঁদুর দিয়ে ঠাকুরের উদ্দেশে পূজা দেয়। কেউ কেউ ওই দিনই বলি দেয় মানতের  হাঁস, মুরগি কিংবা পাঁঠা। পূজা শেষে সবাই কালাইসহ নানা ধরনের ছাতু-গুড় খেয়ে আনন্দ-ফূর্তিতে মেতে ওঠে। বৈশাখের প্রথম দিন এরা দলবেঁধে বেরিয়ে পড়ে শিকারে। সন্ধ্যায় ঠাকুরকে ভক্তি করে শিকারগুলো দিয়ে রান্না হয় খিচুড়ি। রাতভর চলে ভুনজারদের খ্যামটা নাচ আর হাড়িয়া খাওয়া।
বৈশাখের সকালে বাঙালির সঙ্গে মিলে যায় মুন্ডা পাহানদের পান্তা ভাত খাওয়ার আদি রেওয়াজটি। এ নিয়ে তাদের সমাজে প্রচলিত আছে একটি গান। পাহান আদিবাসীরা গায় –
‘হামে লাগে প্রথমে আদিবাসীই / পনতা ভাত ভালোবাসি…বৈশাখের মতো চৈত্রের শেষ দিনেও পাহানরা পালন করে নানা আচার। ওইদিন এরা  বাড়িঘর পরিষ্কার করে একে অন্যের গায়ে কাদা আর রং ছিটায়। পূর্বপুরুষদের রীতি অনুসারে যার গায়ে কাদা বা রং দেওয়া হয়, তাকেই খেতে দিতে হয় হাড়িয়া। পাহানরা বিশ্বাস করে, এতে তাদের বন্ধুত্ব আরো সুদৃঢ় হয়। চৈত্রের শেষ দিন এবং বৈশাখের প্রথম দিনের এ উৎসবকে বালা হয় সিরুয়া-বিসুয়া। এ ছাড়া পাহানরা রোগমুক্তির জন্য চৈত্র মাসেই আয়োজন করে চৈতালিপূজার। আগের রাতে উপোস থেকে পরের দিন দুপুরে পূজার প্রসাদ দিয়ে উপোস ভাঙে পাহানরা। মঈনকাঁটা বা বেলগাছের নিচে মাটির উঁচু ঢিবি তৈরি করে, লাল নিশান আর ধূপকাঠি টাঙিয়ে পান, সুপারি, দুধ, কলা, দূর্বা ঘাস, বাতাসা, কদমফুল, সিঁদুর, হাড়িয়া রেখে, ধূপ জ্বালিয়ে ঠাকুরকে পূজা দেওয়া হয় চৈতালিপূজায়। এ সময় ঠাকুরের কৃপা লাভের আশায় বলি দেওয়া হয় মানতের কবুতর, হাঁস কিংবা পাঁঠা। পূজা শেষে চলে আদিবাসীদের আনন্দনৃত্য।
এ দেশে প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া একটি জাতি কড়া। এ আদিবাসীদের একমাত্র গ্রামটি রয়েছে দিনাজপুরে। টিকে আছে মাত্র ১৯ টি পরিবার। কড়াদের সবচেয়ে বড় উৎসব কারমাপূজা। ওরাওঁ, মুন্ডা, মাহালী’দের কাছে এটি করম বা কারাম উৎসব। বিশেষ প্রজাতির ‘খিলকদম’ গাছের ডাল কেটে এনে পূজা করা হয় এ উৎসবে। অভাবমুক্তি ও সৌভাগ্য লাভই এর উদ্দেশ্য। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা চাঁদে আয়োজন চলে কারমা পূজার। এ সময় কড়াদের ধর্মের পরীা দিতে হয়। পাঁচ দিন আগে এরা উপোস থেকে বাঁশের টুকরির মধ্যে কালাই বীজ রেখে বালু দিয়ে ঢেকে দেয়। এদের বিশ্বাস, যাদের ধর্মে বিশ্বাস নেই ডালায় তাদের লাগানো কালাই বীজ থেকে চারা গজায় না। সৃষ্টিকর্তার কৃপা লাভের জন্য কড়ারা এ পূজায় একই সঙ্গে দুটি লাল মুরগিও বলি দেয়। অতঃপর এরা রাতভর ডালটির চারপাশে নেচে গেয়ে আনন্দ করে। কড়ারা তখন আদিবাসী ভাষায় গান ধরে- ‘সব গাতনি পিন্দ লাল লুগা/ নতুন নতুন সুপ দিয়া/নতুন পারবেতি/ আজো কারমাকের রাতি।’ ভোরের দিকে নিয়ম মেনে খিলকদম গাছের ডালটিকে বির্সজন দেওয়া হয় নিকটবর্তী নদী বা পুকুরে।
কড়াদের মতো কারমা পূজা পালন না করলেও আদিবাসী তুরিরা চৈত্র মাসের শেষ পাঁচ দিন পালন করে চৈতাবালি অনুষ্ঠানের। শুরুর দিনে এরা ছাতুগুড় খেয়ে নাচ-গান করে। শেষদিন এরা বাড়িতে রান্না করে সাত পদের তরকারি। সাত পদ দিয়ে ভোজ সেরে এরা চৈত্রকে বিদায় জানায়। বৈশাখ শুরু হলেই তুরিরা বন্ধ করে দেয় মাছ মাংস খাওয়া। পুরো একমাস এরা শুধুই নিরামিষ খায়। এ সময় প্রতিরাতে তুরি পাড়াতে চলে কীর্তন। বৈশাখের শেষের দিকে প্রতি বাড়ি থেকে চাউল তুলে একত্রে খিচুড়ি রান্না করে খায় তুরিরা। সৃষ্টিকর্তার কৃপা লাভের আশায় চলে এমন  আচার। অন্যদের তুলনায় লোহারদের উৎসব ও আচারগুলো বেশ স্বতন্ত্র। দুর্গাপূজার সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যখন দেবী দুর্গার আরাধনা করে, তখন লোহাররা পালন করে বিশ্বকর্মা পূজা। এটিই তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। এ পূজায় এরা সারা বছরের কর্মভাগ্য সুপ্রসন্নের জন্য প্রার্থনা করে দেবতা ব্রহ্মার কাছে। পূর্বপুরুষদের নিয়ম মেনে এরা পূজার আগের রাতে উপোস থাকে দুধ আর আতপ চালের ক্ষীর খেয়ে। সকালে লোহার কাজের ভাথিটাকে (কয়লার আগুনে বাতাস দেওয়ার যন্ত্রবিশেষ) ধুয়ে পরিষ্কার করে লোহাররা। অতঃপর ভাথির গায়ে সিঁদুর ফোঁটা দিয়ে ধূপ জ্বালিয়ে ভক্তি দিয়ে মুরগি বলি দেওয়া হয়। পূজা শেষে কলা, দুধ আর বাতাসা দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের প্রসাদ খেয়ে এরা উপোস ভাঙে। পরে বলি দেওয়া মুরগি দিয়ে রান্না হয় খিচুড়ি। রাতভর চলে ঝুমের নাচ আর হাড়িয়া খাওয়া।

ওরাওঁ আদিবাসীরা গবাদিপশুর মঙ্গলের জন্য একধরণের পূজার আয়োজন করে থাকে। এটিকে এরা ‘সাহরাই’ উৎসব বলে থাকে। প্রতিবছর আশ্বিনের চাঁদের অমাবস্যার পরদিন চলে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। সাহরাই উৎসবের প্রথমদিনে ওরাওঁরা ঘরে, উঠানে, জমিতে, গোবর ফেলার জায়গায়সহ বিভিন্ন স্থানে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখে। দ্বিতীয় দিন গরু, মহিষ, ছাগল প্রভৃতিকে স্নান করিয়ে তেল ও সিঁদুর মাখানো হয়। লাঙ্গল, জোয়ালসহ চাষাবাদের সকল যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করে মাখানো হয় সিঁদুরের রঙে। পূজার দিন নিয়ম অনুসারে গোয়ালঘরে চলে এই পূজা। পূজা শেষে প্রথমেই গরু-ছাগলকে খাওয়ানো হয় লবণ ও হলুদ ছাড়া কালাই। অতঃপর নিয়ম মেনে বাড়ীর সবাইকে গোয়ালঘরে বসেই সেরে নিতে হয় খাওয়াদাওয়া। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই প্রদীপ জ্বালানো হয় গোয়ালঘরসহ বাড়ির বিভিন্ন স্থানে। সাহরাই উৎসবের রাতে ওরাওঁ গ্রামগুলো থাকে আলোকোজ্জল।
সমতলের আদিবাসীদের মধ্যে মুশহরদের সবচেয়ে বড় সম্মিলন ঘটে ছটপূজায়। এ পূজায় তিন দিন আগ থেকেই এরা উপোস থাকে। উপোস অবস্থায় দুধ-কলা ছাড়াও খাওয়া যায় বিনা লবণে আতপ চালের ভাত। পূজার দিন সকালে সুর্য ওঠার আগে নদীর মধ্যে কোমর পানিতে নেমে সূর্যকে ভক্তি দিয়ে বিশেষ প্রার্থনা করে এরা। এদের বিশ্বাস এই পূজায় সূর্য ও গঙ্গার আশীর্বাদ একই সঙ্গে পাওয়া যায়।
এদেশে আদিবাসীরা অধিকাংশই হতদারিদ্র। তাছাড়া নানা বিষয়ে অবহেলা আর বঞ্চনার কশাঘাত তো রয়েছেই। তবুও নানা অবহেলায় থাকা আদিবাসীদের কষ্টগুলো ভেসে যায় উৎসবের বাঁধভাঙা আনন্দের  স্রোতে। নাচ, গান আর আদি বিশ্বাসের আদি রীতিগুলো এভাবেই টিকে থাকে প্রজম্ম থেকে প্রজম্মে।

লিখাটি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক কালেরকন্ঠে, ১৯ এপ্রিল ২০১৩

© 2013 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button