কীর্তিমান বাঙালি

বরেণ্য স্থপতি মাজহারুল ইসলাম

মাজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথিতযশা স্থপতিদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বাংলাদেশের স্থাপত্য পেশা চর্চার পথিকৃৎ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই স্থপতি বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রথম সভাপতি ছিলেন।মহান স্বাধীনতা প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণসহ নানা সময়ে বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছেন তিনি। মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে নানার বাড়িতে ১৯২৩ খ্রীস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সেই সময় তাঁর বাবা ওমদাতুল ইসলাম ছিলেন কৃষ্ণনগর কলেজের অংকের শিক্ষক। কৃষ্ণনগর কলেজ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর পিতার বদলির সুবাদে রাজশাহীতে যান। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজ থেকে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ঐ কলেজ থেকেই পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে বিজ্ঞানে, ১৯৪৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরকৌশল বিদ্যায় এবং ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক হন। পরে স্থাপত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেন লন্ডনের স্কুল অব আর্কিটেকচার থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েছেন ১৯৬১ সালে। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের কনস্ট্রাকশন, বিল্ডিং অ্যান্ড ইরিগেশনে। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে প্রকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে ‘বাস্তুকলাবিদ’ নামে একটি স্থাপত্য উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য অনুষদ চালু করার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন এবং এখানে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন। এ ছাড়া স্থপতি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেমিনারে অভিসন্দর্ভ উপস্থাপন করেছেন। পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘স্বাধীনতা পদক’ ভারতের জে, কে সিমেন্ট আয়োজিত স্থাপত্যশিল্পে শ্রেষ্ঠ অবদানের জন্য ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অ্যাওয়ার্ড’।১৯৫৪ সালে চারুকলা অনুষদের পুরো ভবন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মধ্য দিয়ে তিনি এ দেশে আধুনিক স্থাপত্যের গোড়াপত্তন করেছিলেন। চারুকলার স্থাপত্যটি এখন ধ্রুপদি স্থাপত্যের মর্যাদা লাভ করেছে।স্থাপত্যকর্মকে তিনি মুক্তি দিয়েছিলেন। চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরের ধারণাকে ভেঙে খোলামেলা উন্মুক্ত পরিবেশ, গাছপালার সমাবেশ নিয়ে যে আধুনিক স্থাপত্যরীতি, সেটি তাঁর হাত থেকেই এসেছে। এই স্থাপত্যের নিদর্শন চারুকলা অনুষদ, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তাঁর অন্য বিখ্যাত স্থাপত্যের মধ্যে আছে বিসিএসআইআর (সায়েন্স ল্যাবরেটরি) ভবন, কৃষি ভবন, জাতীয় আর্কাইভস ভবন, এসব। মাজহারুল ইসলামের মায়ের নাম বেগম জাকিয়া খাতুন। স্ত্রী সালমা ইসলাম। দুই পুত্র স্থপতি রফিক মাজহার ইসলাম ও তানভীর মাজহার ইসলাম। কন্যা রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ডালিয়া নওশীন। ১৫ জুলাই ২০১২ইং তারিখ পরলোক গমন করেন এই কীর্তিমান বাঙালি।

তথ্য ও ছবি : সংগৃহীত

© 2012 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button