কীর্তিমান বাঙালি

বিশ্বনন্দিত পার্থ প্রতিম মজুমদার

সংস্কৃতির প্রতি তাঁর আগ্রহ  ছোটবেলা থেকেই। বাবা ছিলেন একজন সংস্কৃতিমনা প্রেস ফটোগ্রাফার। বাবার সঙ্গে গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠান- পার্বণে  লাঠিখেলা, যাত্রা, নাটক, জারিগান এসব দেখে এসে তিনি ভাই-বোনদের সামনে তা উপস্থাপন করতেন। যা দেখতেন তা হুবহু অনুকরণ করতে পারতেন । কার কথা বলছি? তিনি বিশ্বনন্দিত পার্থ প্রতিম মজুমদার।

পার্থ প্রতিম মজুমদারের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৮ জানুয়ারিতে, পাবনার কালাচাঁদ পাড়ায় ।পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বি্তীয়।বাবার নাম হিমাংশু কুমার বিশ্বাস ও মা সুশ্রিকা বিশ্বাস।জন্মের পর বাবা-মা আদর করে তাঁর নাম রাখেন প্রেমাংশু কুমার বিশ্বাস। প্রথম পড়াশুনা শুরু বাড়ী থেকে খানিক দুরে জুবিলী স্কুলে। তিনি স্কুলে যেতেন বড় ভাই স্নেহাংশু কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে।

পার্থ প্রতিম মজুমদার ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তাকেঁ পাঠিয়ে দেয়া হয় কাকা শুধাংশু কুমার বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে, কলকাতা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে চন্দননগরে। সেখানে ড. শীতল প্রসাদ ঘোষ আদর্শ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁর পরিচয় হয় মুকাভিনয় বা মাইমের আর্টিষ্ট যোগেশ দত্তের সঙ্গে । কথা না বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ দেখে তিনি তার কাছেই প্রথম মাইম শিখতে আগ্রহী হন।

কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদারের বাবা, সঙ্গীতগুরু বারিন মজুমদারের সঙ্গে পার্থ প্রতিমের বাবার ছিল মামা-ভাগ্নে সম্পর্ক।তাদের পাবনার বাড়ীতে প্রায়ই আসতেন তিনি।১৯৭২-এ প্রেমাংশু বাড়ী এলে বারীন মজুমদারের নজরে পড়েন। বারীন মজুমদার প্রেমাংশুকে হিমাংশু কুমার বিশ্বাসের কাছ থেকে চেয়ে দত্তক নেন।সেই থেকে তিনি বারিন মজুমদারের ছেলে পার্থ প্রতিম মজুমদার হিসেবে বড় হতে থাকেন।

১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত পার্থ প্রতিম কলকাতায় যোগেশ দত্ত মাইম একাডেমিতে মূকাভিনয়ের ওপর শিক্ষা গ্রহণ করেন। তার পর দেশে এসে তিনি এ শিল্পের চর্চার পাশাপাশি প্রচার-প্রসারে উদ্যোগী হন। শিল্প সংস্কৃতির অঙ্গনে তিনি ভানু নামেই ব্যাপক পরিচিত ছিলেন । পার্থ প্রতিম মজুমদারমূকাভিনয় চর্চার পাশাপাশি ১৯৭২-১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সঙ্গীতের ওপর স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পার্থ প্রতিম মজুমদার নাট্যচর্চা শুরু করেন ড্রামা সার্কেলের হয়ে। পার্থ প্রতিম সঙ্গীত নিয়ে বহুদূর এগুতে না পারলেও মূকাভিনয়ের চর্চা করে জয় করে নিয়েছেন বিশ্ববাসীর হৃদয়।

১৯৭৫ সালে বিটিভির দুটি অনুষ্ঠানে পার্থ প্রতিম মজুমদারের মূকাভিনয় প্রচার হলে তা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তখন থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার ডাক পড়তে থাকে। এক সময় স্কলারশিপ পেয়ে তিনি প্যারিস যান মূকাভিনয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে। প্যারিসেও প্রশংসিত হতে লাগল তার মূকাভিনয়। এভাবেই একদিন তিনি মূকাভিনয় সম্রাট মার্সেল মার্সোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। পার্থ প্রতিমের শিল্পকর্ম দেখে তিনি মুগ্ধ হন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবন এবং মূকাভিনয়কে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করতে তিনি পার্থ প্রতিমকে বেছে নেন। বড় মাপের এ শিল্পীর সান্নিধ্য পেয়ে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি পার্থ প্রতিমকে। আপন কর্মের মহিমায় তিনি এখন বিশ্বনন্দিত একজন।

এ বছর পার্থ প্রতিম মজুমদার ফ্রান্সের সর্বোচ্চ পুরস্কার নাইট উপাধিতে ভূষিত হন।দেশ বিদেশে বাংলাদেশের নামকে তুলে ধরলেও এই কীর্তিমান বাঙালীকে অদ্যাবধি দেয়া হয়নি জাতীয় কোন পুরস্কার।

তথ্য ও ছবি : সংগ্রহীত

© 2012 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button