আদিবাসীকলাম

শুভ নুওবজর

পুরনো বছরকে ফেলে আসে নতুন বছর। আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পাহাড়ের আদিবাসী পল্লীর আদিবাসীরাও মেতে ওঠে উৎসবে। আদিবাসীদের ঘরে নববর্ষের উৎসব বৈসাবি আসে নতুন সাজে। চাকমা সম্প্রদায় এ উৎসবকে বিঝু, মারমারা সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরারা বৈসু বা বৈসুক বলে। ত্রিপুরারা বৈসুমা দিনে তাদের বাড়িতে অতিথিদের নানা ধরনের পিঠা, পাচন ও পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করে। ওই দিন ত্রিপুরা ছেলেমেয়েরা নদী থেকে জল এনে তাদের নানা-নানী, দাদা-দাদী স্থানীয় গুরুজনদের স্নান করিয়ে তাদের কাছে আশীর্বাদ গ্রহণ করে। বৈসুর সময় ত্রিপুরা গরাইয়া নাচের শিল্পীরা পাহাড়ি পল্লীর ঘরে ঘরে তাদের ঐতিহ্যবাহী গরাইয়া নৃত্য পরিবেশন করে। চাকমা আদিবাসীরা বাংলা বর্ষের শেষ দিনটিকে মূলবিঝু, তার আগের দিনটিকে ফুলবিঝু এবং নববর্ষের প্রথম দিনটিকে নতুন বছর বা গজ্যাপজ্যা দিন বলে। চাকমারা এ তিন দিন ধরে এ বিঝু উৎসব পালন করে। ফুলবিঝুর দিন তরুণ-তরুণী এবং শিশুরা নদীতে গিয়ে কলাপাতায় করে ফুল ভাসিয়ে দেয়। অনেক ফুল দিয়ে ঘরদোর সাজায়। মূলবিঝু দিনটিই চাকমাদের প্রকৃত বিঝু দিন। এদিন সবার ঘরের দরজা অতিথিদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশাখী উৎসব রাখাইনদের জলকেলি খেলা। নববর্ষ উপলক্ষে আদিবাসী রাখাইনদের প্রধান সামাজিক উৎসব জলকেলি বা সাংগ্রাংয়ের আনন্দ থেকে অনেকে বঞ্চিত হয়, যথাসময়ে উৎসব দেখা হয় না বলে কিংবা উৎসবের তারিখটা জানা থাকে না বলে। 518266615332e-8এ সময় কঙ্বাজারের নয়নাভিরাম দৃশ্য রাখাইনপল্লী টেকপাড়া, বৌদ্ধ মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে সশরীরে গিয়ে যে কেউ এ উৎসব উপভোগ করতে পারেন। অথবা চলে যেতে পারেন টেকনাফ, মহেশখালী, খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডি, হারবাং, চকরিয়াসহ বিভিন্ন রাখাইন পল্লীতে। এসব স্থানেও মহা ধুমধামে পালিত হয় রাখাইন তরুণ-তরুণীদের একে অপরের প্রতি জল ছুড়ে মারার জলকেলি উৎসব। ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ শুরু (পহেলা বৈশাখ)। তার ঠিক তিন দিন পর অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল রাখাইন অব্দ শুরু। ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল, তিন দিন চলে জলকেলি উৎসব। তবে সাবধান! উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে আপনি কাউকে জল ছুড়তে যাবেন না। সেটি বিপদ ডেকে আনতে পারে। বরং আপনি অপেক্ষা করতে পারেন, রাখাইনদের কেউ এসে আপনার শরীরটাকে পবিত্র জলে ভিজিয়ে শান্ত করে দিচ্ছে কি-না দেখার জন্য। রাখাইনরা নতুন বছরকে বরণ এবং পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে এ উৎসবের আয়োজন করে। উৎসবের প্রথম দিন সকালে রাখাইনরা প্রধান সড়কে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। দুপুরে মন্দির-প্যাগোডায় গিয়ে প্রার্থনা এবং বিকালে ঘরে ঘরে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করে। প্রতিদিন দুপুর একটা থেকে চলে মণ্ডপে মণ্ডপে তরুণ-তরুণীদের জল ছুড়ে মারার উৎসব। বিশেষ করে পুরনো বছরের পাপ-পঙ্কিলতা ভুলে গিয়ে নতুন বছরের সুখ-শান্তি ও উন্নতি কামনা করাই এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে রাখাইন তরুণ-তরুণীরা একে অপরের প্রতি জল ছুড়ে মারে।

এ উৎসবের মাধ্যমে আদিবাসীরা তাদের সংস্কৃতিকে লালন করে।  শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও আদিবাসীরা এ উৎসব পালন করে। তাই এ উৎসব আদিবাসীদের প্রাণের উৎসব।

তথ্য : দৈনিক সকালের খবর

ছবি :  নীরব চৌধুরী

© 2012 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button