কীর্তিমান বাঙালি

ওয়াহিদুল হকের কথা

ওয়াহিদুল হক বাংলাদেশের লেখক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি রবীন্দ্র সংগীতে বিশেষজ্ঞ বলে খ্যাতিমান ছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ‘স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থা’র প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ ঢাকা জেলার ভাওয়াল মনহরিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন৷ ওয়াহিদুল হক আরমানিটোলা গভর্ণমেন্ট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে উত্তীর্ণ হন। পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন৷ প্রথম জীবনে তিনি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও লেখিকা সনজিদা খাতুনকে বিবাহ করেন।

ওয়াহিদুল হকের পেশা ছিল সাংবাদিকতা। ছাত্রাবস্থা থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫৪ বছর সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন।  ষাটের দশকে দি অবজারভারের শিফট্‌-ইন চার্জ ছিলেন। পরে মর্নিং নিউজ ও দ্যা ডেইলি স্টারের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন৷ এক সময় ছিলেন দ্যা পিপলস পত্রিকারর সম্পাদক। জীবনের শেষ দিকে “অভয় বাজে হৃদয় মাঝে” ও “এখনও গেল না আঁধার” শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেছেন দৈনিক জনকন্ঠ ও দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে ১০ বছরেরও বেশী সময় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।

ওয়াহিদুল হক ছিলেন একজন সংগঠক যিনি পেশা হিসেবে সাংবাদিক হলেও তাঁর আসল কর্মক্ষেত্র ছিল সংস্কৃতি অঙ্গন। তিনি ছিলেন মেধাবী সাংবাদিক, রবীন্দ্র সংগীতের তত্ত্বজ্ঞ, শিক্ষক, সংগঠক ও বাঙালি সংস্কৃতির একনিষ্ঠ প্রচারক। রবীন্দ্র সংগীত ছিল তাঁর বিচরণ ক্ষেত্র। ওয়াহিদুল হক ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ‘ছায়ানট’ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৯৯ থেকে আমৃত্যু সহ-সভাপতি ছিলেন।

ওয়াহিদুল হকের গঠিত সংগঠনগুলো হলোঃ

  • জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ-এর কার্যকরী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, সহ-সভাপতি এবং ১৯৯৯ থেকে আমৃত্যু সভাপতি
    ওয়াহিদুল হক
  • আবৃত্তি সংগঠন “কন্ঠশীলন” এবং শিশু আবৃত্তি সংগঠন “শিশুতীর্থ”- এর প্রতিষ্ঠাতা
  • আনন্দধবনি-এর প্রতিষ্ঠাতা
  • মুকুল ফৌজ কিশোর সংগঠনের কর্মী
  • বাংলাদেশ ব্রতচারী সমিতি-এর সহ-সভাপতি (২০০৩ সাল থেকে আমৃত্যু)
  • বাংলাদেশ আবৃত্তি ফেডারেশন (বর্তমান আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
  • পূর্ব পাকিস্তান ফিল্ম সোসাইটি পরে বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটির- প্রতিষ্ঠাতা সদস্য
  • বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য
  • বসন্ত উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য
  • আবৃত্তি পরিষদ-এর সভাপতি
  • স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থা-এর প্রতিষ্ঠাতা
  • ২০০১ সাল থেকে আমৃত্যু “নালন্দা”র-কার্যকরী পরিষদের সদস্য

প্রকাশিত গ্রন্থ গুলো হলো:

  • চেতনা ধারায় এসো
  • গানের ভিতর দিয়ে
  • সংস্কৃতিই জাগরণের প্রথম সূর্য
  • প্রবন্ধ সংগ্রহ
  • ব্যবহারিক বাংলা উচচারণ অভিধান
  • সংস্কৃতির ভুবন

আবৃত্তি গানের সিডি

  • সকল কাঁটা ধন্য করে
  • আজ যেমন করে গাইছে আকাশ
  • আছ অন্তরে
  • রবীন্দ্রনাথের কবিতা

এই কীর্তিমান বাঙালি ২০০৭ সালের ২৭ শে জানুয়ারি বিকাল ৫টায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ওয়াহিদুল হককে সংগীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৮ সালে মরণোত্তর একুশে পদক ২০০৮ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। তিনি কাজী মাহবুবউল্লাহ ট্রাস্ট স্বর্ণ পদক লাভ করেন। এছাড়াও  ২০০০ সালে বাংলা একাডেমী সম্মানসূচক ফেলোশীপ পান। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় ওয়াহিদুল হককে ‘ স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১০’ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

তথ্য ও ছবি : সংগৃহীত

© 2012 – 2021, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button