মুক্তিযুদ্ধ

যুদ্ধ করেই তো দেশটা পেয়েছি

‘বড়গ্রাম ক্যাম্প থেকে একদিন ডেকে পাঠানো হয় আমাকে। যেতে হবে আঙ্গিনাবাদ ক্যাম্পে। সেখানে সবাই জড়ো হই। ক্যাপ্টেন রনজিৎ শিং উচ্চকন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,  ‘কে কে দেশের জন্য জীবন দিতে পারবে?’ সবার প্রথমে হাত ওঠে আমার। সেদিন দেশের জন্য আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত ১৫০ জন যোদ্ধাকে নিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ একটি দল। চলে কয়েকদিনের বিশেষ ট্রেনিং। সুবেদার মেজর শহীদুল্লাহ ট্রেনিং দেন সবাইকে।

আক্রমণ চালাতে হবে দিনাজপুরের মোহনপুর ভিওপি ক্যাম্প। ১৯৭১ এ এটি ছিল পাকিস্তান আর্মিদের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি। চারটি দলে ভাগ হই আমরা। একটি দলের দায়িত্ব দেয়া হয় আমাকে। বাকিগুলোতে সুবেদার মেজর শহীদুল্লাহ, আশরাফ আর বুলবুল।
মোহনপুর ক্যাম্প ঘেঁষে আত্রাই নদীটি চলে গেছে ভারতীয় সীমানায়। এক সন্ধ্যায় নদীর সে পথেই নৌকা নিয়ে আমরা চলে আসি গন্তব্যের কাছাকাছি। সন্ধ্যা গড়িয়ে আসে মধ্যরাত। সবাই পজিশন নিই একটি কবরস্থানের ভেতর।
অপেক্ষার পালা।  রাত দেড়টা। পরিকল্পনা ছিল ভারতীয় সীমান্ত থেকে প্রথমে  মোহনপুর ভিওপি ক্যাম্প লক্ষ্য করে সেল নিক্ষেপ করা হবে। তাই হলো। শত শত সেল এসে পড়ল ক্যাম্পে। কিন্তু  অবাক কা-! পাকিস্তানি সৈন্যদের কোনো প্রত্যুত্তর নেই। সবাই পালিয়ে গেল নাকি? এই ভেবে আমরা এগোই সামনে। চলে আসি ক্যাম্পের ১৫০ গজের মধ্যে। অমনি চারপাশ থেকে বৃষ্টির মতো গুলি চালায় ওঁৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যরা। কিছু বোঝার আগেই পাশে কয়েকজনকে দেখি গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত শরীরে গোঙ্গাচ্ছে। মারে, বাবারে, বাঁচারে… এরকম আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। কিন্তু তাদের জন্য কিছুই করতে পারি না আমরা। নিজেকে বাঁচাতে আমরা শুধুই গুলি চালাচ্ছি। আর দেখছি চারপাশের সবকিছু।
হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে আমার বাম পায়ে। আমি তবুও কিছু টের পাই না। আমার পাশে লুটিয়ে পড়ে সুবেদার মেজর শহীদুল্লাহ। বুকে গুলি খেয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করেন তিনি। মুঠো হাতে চেপে ধরেন দেশের মাটি। খামচে ধরেন ঘাসগুলোকে। আমরা শুধুই আল্লাহর নাম জপি।
গোলাগুলি চলে ভোর ৪টা পর্যন্ত। সে সময় সীমান্তের দিক থেকে কাউন্টার অ্যাটাক করে ভারতীয় সৈন্যরা। সে সুযোগে পিছু সরে আসি আমরা। আমার বাম পা তখন  রক্তে ভেজা। অবশ হয়ে গেছে পা দুটো। তব্ওু খেয়াল নেই সেদিকে। চোখের সামনে ভেসে উঠছিল সুবেদার মেজর শহীদুল্লাহর মুখটি। যার মৃতদেহটি পর্যন্ত  আমরা আনতে পারিনি। সেই অপারেশনে শহীদ হয় আনোয়ার নামে ১৩ বছরের এক যোদ্ধা। হতাহত হয় প্রায় ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা।
কান্না জড়ানো কণ্ঠে এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের সময়কার একটি অপারেশনের বর্ণনা দেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোকাদ্দেস হোসেন। যিনি যুদ্ধ করেছেন ৭নং সেক্টরে। সবার কাছে তিনি বাবলু নামে পরিচিত। বর্তমানে দিনাজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
বাবলু তখন ক্লাস এইটের ছাত্র। পড়তেন দিনাজপুর শহরের মহারাজা গিরিজানাথ স্কুলে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় আইয়ুব খান। পূর্ব পাকিস্তানের ওপর চলছে নানা বৈষম্য। বড়দের আলাপচারিতার ফাঁকে বাবলুও জেনে যেত সে সব কথা।
33একবার স্কুলে আসে স্থানীয় ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আব্দুস সামাদ আর জাফরসহ কয়েকজন। অনুরোধ করেন প্রতিবাদ মিছিলে যাওয়ার। বন্ধুদের সঙ্গে বাবল্ওু চলে যায় মিছিলে। কণ্ঠ আকাশে তুলে সেøাগান দেন, ‘আইয়ুব সাই, আইয়ুব সাই, ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক’।
ঠিক এভাবেই দেশের জন্য পথে নামা শুরু। আইয়ুব গেলে আসে ইয়াহিয়া। কিন্তু বাঙালিদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। সময় গড়িয়ে যায়।  ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। বাবলু তখন দিনাজপুর কেবিএম কলেজের ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র। টগবগে যুবক। রেডিওতে শোনেন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। রক্ত গরম করা নির্দেশ, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
কীভাবে ও কখন দিনাজপুরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো? বাবলু জানালেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এর দিনাজপুর সেক্টরের হেড কোয়ার্টার ছিল দিনাজপুর শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকণ্ঠ কুঠিবাড়িতে। ২৮ মার্চ সেখানে বাঙালি অফিসার ও জওয়ানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে পাঠান পাঞ্জাবিরা। কুঠিবাড়ির বাঙালি ইপিআর জওয়ানদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল দিনাজপুরের তৎকালীন প্রগতিশীল নেতাদের। ফলে ঘটনার দিন বাঙালি জওয়ানদের সমর্থনে চারপাশ থেকে কুটিবাড়িতে ঢুকে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। সে সময় কুটিবাড়ির অস্ত্রাগার লুট হয়ে অস্ত্র চলে আসে সাধারণ মানুষের হাতে।
দলবেঁধে বাবলুও নিয়ে আসে একটি রাইফেল। বর্তমান নিউ হোটেলের মালিক আহম্মদ আলী খান তখন ছিলেন রিটায়ার্ড আর্মি। বাবলুসহ ২৫-৩০ জন যুবক তার কাছ থেকে রাইফেল চালানো শিখে নেন। কিন্তু সে ট্রেনিং কোনো কাজেই আসে না। পাকিস্তান সেনাবহিনী চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে দিনাজপুর শহর।
১৩ এপ্রিল ১৯৭১। দিনাজপুর শহরের তিন দিক থেকে আক্রমণ চালায় পাকিস্তান পদাতিক বাহিনী। ঐদিন সেনাবাহিনীর একটি বড় দল সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভূষিরবন্দর রামডুবি হয়ে শহরের নিকটবর্তী চেহেলগাজীতে আক্রমণ করে। সেনাবাহিনীর অন্য দলটি রাজবাড়ী হয়ে এবং তৃতীয় দলটি পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, আমবাড়ী হয়ে দিনাজপুর শহর দখলে নেয়।
তখন কি করলেন? খানিক নীরব থাকেন মুক্তিযোদ্ধা বাবলু। অতঃপর স্মৃতি হাতড়ে তুলে আনেন নানা তথ্য।
শহরের বাড়ি থেকে সে সময় বাবা-মা আর ভাইবোনদের নিয়ে বাবলুরা গরুর গাড়িতে হাসিলাডাংগা হয়ে চলে যান ভারতের সাফানগরে। সেখান থেকে আশ্রয় নেন অশোকগ্রামে। অশোকগ্রামে পরিবার রেখে বাবলু চলে যান মুক্তিযুদ্ধে।
কোথায় ট্রেনিং নিলেন? বাবলু জানালেন গঙ্গারামপুরে। তার সঙ্গে দেখা হয় জর্জ ভাইয়ের সঙ্গে। জর্জ ভাই ছিলেন ইপিআর এর লেন্স নায়েক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শিববাড়ী ইয়ুথ ক্যাম্পের ৭নং হামজাপুর সাব সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে বাবলু জর্জ ভাইয়ের অধীনে কয়েকদিনের ট্রেনিং নেন। সেখান থেকে উন্নত ট্রেনিংয়ের জন্য তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় রায়গঞ্জে। রায়গঞ্জ থেকে কালিয়াগঞ্জ এবং শেষে ট্রেনিং নেন শিলিগুড়ির পানিঘাটায়। ক্যাপ্টেন জেসিএস ধামির নিয়ন্ত্রণে বাবলু ট্রেনিং নেয় চালিং উইং এ। তার আইডি নং ছিল ১৩৫২।
ট্রেনিং শেষে কিছুদিন বড়গ্রাম ক্যাম্পের অধীনে যুদ্ধ করেন বাবলু। অতঃপর তাকে  ফিরিয়ে আনা হয় শিলিগুড়িতে। সে সময়ে শিলিগুড়িতে সাহসী যোদ্ধাদের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় একটি শক্তিশালী ব্যাটালিয়ন। যার নাম ছিল ‘৭৫ তুফানি ব্যাটালিয়ন’। এ ব্যাটালিয়নের সব অফিসার ছিল ভারতীয়। জেসিও ট্রেনিং দিয়ে ক্যাপ্টেনের নিচে কোম্পানির দায়িত্ব দেয়া হয় বাঙালি ছেলেদের। বাবলু ছিল আলফা কোম্পানির টুআইসি।
মুক্তিযুদ্ধের পর কেটে গেছে ৪০টি বছর। বাবলুর স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে অনেক কিছু। নিজে গুলিবিদ্ধ হওয়ার তারিখটিও ভুলে গেছেন তিনি। কিন্তু এখনও স্মৃতি থেকে হারায়নি সুবেদার মেজর শহীদুল্লাহর মুখটি। তার কথা উঠলে এখনও আবেগের বাষ্পে বাবলুর কণ্ঠ জড়িয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা বাবলু বলেন, ‘যুদ্ধ কবে শেষ হবে কেউ জানতো না। যুদ্ধের পরে সুবিধা পাবে এই চিন্তা করে কেউ মুক্তিযুদ্ধ করিনি।’ তিনি জানালেন মুক্তিযুদ্ধের সময় সকল যোদ্ধারাই ছিল কোনো না কোনো ক্যাম্পের অধীনে। তাদের নাম-ঠিকানা ছিল ঐ ক্যাম্পে। ফলে তা সংগ্রহ করে খুব সহজেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করা যেত। সেটির উপযুক্ত সময় ছিল যুদ্ধের পর পরই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন সেটি করলে হয়তো কোনো অমুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ হতো না মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাগুজে সনদ গ্রহণের।
এই স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভালো লাগা অনুভূতি জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা  বাবলু বলেন, স্বাধীনতা আর বিজয় দিবসগুলোতে যখন নানা আয়োজন চলে তখন খুব ভালো লাগে। মনে পড়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি।
মুক্তিযুদ্ধের পরের কষ্টের অনুভূতি কি? জানতে চাইলে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘যারা দেশের স্বাধীনতা চায় নি। সেই নিজামী-মুজাহিদ স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনও বেঁচে আছে। এ দেশের মানুষ তাদের মন্ত্রীও বানিয়েছিল। লালসবুজ পতাকা উড়েছে তাদের গাড়িতে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি ৪০ বছরেও। এসব ভাবলে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শুধুই কষ্ট পাই।’
মুক্তিযুদ্ধের পরের বাংলাদেশ নিয়ে হতাশ নন বাবলু। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ করে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, এটিই পরম পাওয়া।’ এ দেশকে নিয়ে আকাশ সমান আশা এই মুক্তিযোদ্ধার। পরবর্তী প্রজন্ম সুশিক্ষিত হবে। তারা দেশকে ভালোবাসবে। জানবে নিজের দেশের স্বাধীনতার কথা। ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র থাকলেও বাবলুর মতে, ‘সত্য কখনও চাপা থাকে না’।
আলাপচারিতা শেষে ফিরছি। কিন্তু বারে বারে মনে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা বাবলুর আবেগ জড়ানো কথাগুলো, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সবার মতো আমিও প্রতীক্ষার প্রহর গুনছি। এদেশে একদিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। শাস্তি হবে রাজাকার, আলবদর আর আল শামসদের। কষ্টের মেঘ সরে যাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বুকের ভেতর থেকে। শান্তিতে মরতে পারবে দেশের সূর্য সন্তানরা।’

লিখাটি প্রকাশিত হয়েছে সাপ্তাহিকে ২৯ ডিসেম্বর ২০১১

© 2011 – 2021, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button