কীর্তিমান বাঙালি

ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী : একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাস গবেষক

জাতীয় জাদুঘরের নাম আমরা সবাই জানি। জাদুঘরে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের প্রাচীন মুদ্রা, মূর্তি, তাম্রলেখ, পাথর প্রাচীন পুঁথি ও বই পুস্তক। যার মধ্য দিয়ে এদেশের অতীত ইতিহাস বর্তমানের মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এই ইতিহাস যিনি তুলে ধরার ব্যবস্থা করেছেন তিনিই নলিনীকান্ত ভট্টশালী।

ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালীর জন্ম ১৮৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। জন্ম স্থান মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার নয়ানন্ধ গ্রামের নানাবাড়িতে। পৈতৃক নিবাস একই জেলার পাইকপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম রোহিনীকান্ত ভট্টশালী আর মাতা শরৎকামিনী। বাবা ছিলেন পোস্টমাস্টার। কাকা অক্ষয় চন্দ্রের যত্নে তিনি লালিত-পালিত। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা পাইকপাড়া পাঠশালয়ে। এনট্রান্স পাস করেছেন ১৯০৫ সালে সোনারগাঁও হাইস্কুল থেকে। পাঁচ টাকা বৃত্তিসহ রৌপ্য পদকও পেয়েছিলেন নলিনীকান্ত ভালো ফলাফলের জন্য। ঢাকা কলেজ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন।

ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালীর ১৯১২ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএ পাস করেন। ১৯২২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সিফিত পুরস্কার প্রদান করে। নলিনীকান্ত ভট্টশালী ১৯৩৪ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের বালুঘাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে। এর আগে অবশ্য তিনি ১৯১১ সালে ছাত্রাবস্থায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ভারেলস্না গ্রামে প্রাপ্ত নটরাজ মূর্তির ছাপ বা লেখার পাঠোদ্ধার দিয়ে ইতিহাস গবেষণা ও চর্চা শুরু করেন । এই মূর্তির পাঠোদ্ধার করে লিখলেন, বিস্মৃতিতে হারিয়ে যাওয়া পূর্ব বাংলার একটি রাজধানী। ঢাকা জাদুঘর বৌদ্ধ ও হিন্দুমূর্তি, পূর্ববাংলার স্বাধীন সুলতানী শাসক ও তাদের মুদ্রা –  এগুলো নলিনীকান্তের লিখিত বই। এগুলো সবই ইংরেজী বই। তিনি কিন্তু গল্পও লিখেছেন। নাম হাসি ও অশ্রু। প্রকাশ পায় ১৯১৪ সালে। হাসি ও অশ্রু কিন্তু গল্প গ্রন্থ।

বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য জাদুঘর নির্মাণ প্রয়োজন দেখা দেয়। ১৯১২ সালে ঢাকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার জন্য যে সম্মেলন হয় তার প্রধান ও প্রথম উদ্যোগতা ছিলেন ডক্টর নলিনীকান্ত ভট্টশালী। আর সে জন্যই ১৯১৩ সালে ঢাকার নিমতলীতে প্রথম জাদুঘর প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯১৪ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা জাদুঘরের কিউরেটর হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ডক্টর নলিনীকান্ত ভট্টশালী ঢাকা জাদুঘরের কিউরেটর থাকা অবস্থায় মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, কোটালীপাড়া, যশোর, কলিকাতা, নরসিংদী, দিনাজপুর, বগুড়া, কুমিল্লা, ভাওয়াল, পরিভ্রমণ করে মূর্তি, তাম্রশাসন, স্বর্ণমুদ্রা, পুঁথি সংগ্রহ করেছেন। নলিনীকান্তের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে। ভালো সম্পর্ক ছিল ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও কবি জসিম উদ্দিনের সাথেও।

পরিশ্রমী, মেধাবী ও সংগঠক ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী ১৯৪৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকা জাদুঘরের বাণী কুটিরে মারা যান। ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাস গবেষক ছিলেন। তিনি বাংলার মানুষের কাছে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

তথ্য ও ছবি : সংগৃহীত

© 2011 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button